বান্দরবানের হোটেল মোটেলে ছাড় ঘোষনা করেও সংকট কাটছেনা

NewsDetails_01

পর্যটক শূন্য বান্দরবানের মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সের ঝুলন্ত সেতু
গত জুলাই মাসে পাহাড় ধসের ঘটনা, বিরুপ আবহাওয়া ও চলতি মাসে রোহিঙ্গা সংকটের কারনে পর্যটন শহর বান্দরবানে পর্যটক না আসায় সংকটময় সময় পার করে ব্যবসায়িরা। ফলে গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে বান্দরবানের হোটেল মোটেলগুলোতে পর্যটক টানতে বিশেষ ছাড় ঘোষনা করা হলেও পর্যটক না আসায় হতাশ হয়ে পড়ছে পর্যটনের সাথে সংশ্লিষ্টরা।
জেলার হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সূত্র জানায়,গত কয়েক মাস ধরে বান্দরবান জেলায় পর্যটক আগমনের সংখ্যা বেশ কমে যাবার কারনে অলস সময় কাটছে তাদের, ব্যাপক ক্ষতির সন্মুখিন হবার কারনে পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা পর্যটকদের জন্য হোটেল মোটেলের সিট ভাড়ায় ৪০ শতাংশ বিশেষ ছাড় ঘোষনা করে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে হোটেল মোটেল মালিক সমিতির আওতা ভুক্ত জেলা শহরের ৪৫টি হোটেল মোটেলে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর ১০ দিন এই ছাড় বহাল থাকবে। কিন্তু এই ঘোষনার ১ সপ্তাহ পার হলেও পর্যটক নেই বান্দরবানে।
সূত্র জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আশানুরুপ পর্যটক না আসার কারনে মন্দা ভাব বিরাজ করছে জেলার বিকাশমান পর্যটন শিল্পে। অর্থসংকটের কারনে হোটেল-মোটেলগুলোর মালিকরা তাদের কর্মচারীদের মাসিক বেতন মেটাতে পারছেনা, মূলত এ কারনেই শহরের বিভিন্ন হোটেল-মোটেলে ছাড় দেবার মধ্যে দিয়ে পর্যটক টানতে চেষ্টা করে পর্যটন ব্যবসায়িরা।
জেলা শহরের হোটেল গ্রিনহীলের ম্যানেজার আশিষ ধর বলেন, বিশেষ ছাড় ঘোষনার পরও পর্যটক তেমন আসেনি, রোহিঙ্গা সংকটের কারনেই হয়তো পর্যটকরা বান্দরবান মুখী হচ্ছেনা।
বান্দরবানের পর্যটন শিল্পের বিকাশকে কেন্দ্র করে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান এবং দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরালেও ফের বেকারের খাতায় নাম লেখাতে হচ্ছে স্থানীয় যুবকদের। জেলার হোটেল থেকে কর্মচারী ছাটায় করে অর্থ সংকট কাটানোর চেষ্টা করলেও অনেক যুবক বেকার হয়ে যাবার কারনে তাদের পরিবারে হতাশা বিরাজ করছে।অন্যদিকে হোটেল-মোটেলগুলোর মতো দূর যাত্রার ভ্রমনের জন্য জীপ,হাইস, মাইক্রো গাড়ী উচ্চ ভাড়া দিয়ে পাওয়া দূস্কর হলেও এখন ডিসকাউন্ট দিয়ে যাত্রী পাচ্ছেনা বলে জানা গেছে। শহরের মেঘলা, নীলাচল, ন্যাচারেল পার্ক, বৌদ্ধ জাদী, চিম্বুক, শৈলপ্রপাত,নীলদিগন্ত, মিলনছড়ি এখন অনেকটা পর্যটক শুন্য থাকার কারনে স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা পড়েছে বেকায়দায়। সকাল থেকে স্পটগুলোতে তারা তাদের বিভিন্ন ধরণের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসলেও কোন ক্রেতা পাচ্ছেনা।
এই ব্যাপারে পর্যটকবাহী জীপ চালক জসিম উদ্দিন বলেন, হোটেল ও মোটেলে বিশেষ ছাড়া দেওয়া হয়েছে, আমরা গাড়ী ভাড়াও কম নিচ্ছি তবুও পর্যটক নেই বললেই চলে, এখন কম ভাড়া দিয়ে গাড়ি কেউ নিচ্ছেনা।
আরো জানা গেছে, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে জেলার প্রাকৃতিক পরিবেশ, পাহাড় চূড়ায় ভেসে বেড়ানো মেঘের ভেলা দেখার জন্য দিনে হাজার হাজার পর্যটক আসলেও বর্তমানে শতাধিক পর্যটক আসছে বান্দরবানে। ফলে পর্যটন ব্যবসায়িরা তাদের ব্যবসায় ক্ষতির সন্মুখিন হচ্ছে, অন্যদিকে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকারও।
আরো জানা গেছে, বান্দরবান জেলায় দিনে অনন্ত ১২ হাজার পর্যটকের আগমন ঘটলেও এখন দিনে হাজার খানেক পর্যটক বান্দরবান জেলার পর্যটনস্পট দর্শনে আসছে। একসময় হোটেলে সিট না পেয়ে অনেক পর্যটক মসজিদ মন্দির ও স্কুলে রাত যাপন করতেন। হোটেল মোটেলগুলো ৫হাজার পর্যটক ধারণক্ষমতা সম্পর্ন হলেও এখন পর্যটকের দেখা মেলা ভার হোটেলগুলোতে।
এই ব্যাপারে বান্দরবান হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের ছাড়ের ঘোষনার পরও জেলায় পর্যটক আগমন খুব কম, পর্যটনের প্রসারে সরকারের আরো উদ্দ্যেগ গ্রহন করা প্রয়োজন। এদিকে শারদীয় দূর্গাউৎসবকে কেন্দ্র করে বান্দরবানে পর্যটকদের আগমন কিছুটা বাড়তে পারে আর এই বিষয়টি মাথায় রেখে জেলার পর্যটনস্পটগুলো নিরাপত্তা জোরদার করেছে প্রশাসন।
এই ব্যাপারে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেন, পর্যটক সংকট কাটাতে, পর্যটকরা যাতে বেড়াতে আসে সেই ব্যাপারে আমরা ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণার উপর জোর দিচ্ছি,দ্রুত এই সংকট কেটে যাবে।

আরও পড়ুন