ভার্চুয়াল এ্যাডিকশন

NewsDetails_01

51রাস্তায়, অফিসে, বাড়িতে, কলেজে, সিনেমা হলে, বাজারে সবখানে সচল হাতের আঙ্গুল। চোখ মোবাইল ফোনের পর্দায়। ফেসবুকে নিজের ছবি পোস্ট করার পরে এক ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু একটাও ‘লাইক’ পড়েনি। ‘কমেন্ট’ তো দূরের কথা। স্মার্টফোনে ক্রমাগত বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাট করে করে কারও ডান হাতের স্নায়ু বিকল হওয়ার উপক্রম। চিকিৎসকদের পরিভাষায় এই রোগের নাম ‘ভার্চুয়াল এ্যাডিকশন’।
ভারতের জামশেদপুরের ১৮ বছর বয়সী এক তরুণীর কথাই ধরা যাক। রাতে মোবাইল ফোনে ফেসবুক, হোয়াটসএ্যাপ করার সময় নেট-প্যাক শেষ হলে তার প্যানিক এ্যাটাক হয়। বুক ধড়ফড় করে। সারারাত ঘুম নেই। সকালে উঠে ইন্টারনেট রিচার্জ করে পরে ঘুম আসে। দেশটির অন্যতম প্রসিদ্ধ মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্র রাঁচির রিনপাসের (রাঁচি ইনস্টিটিউট অব নিউরো সাইকিয়াট্রি এ্যান্ড এ্যালায়েড সায়েন্স) বহির্বিভাগে এসেছিল ৩০ বছর বয়সী এক যুবক। চোখ-মুখে উত্তেজনা। ‘আপনার সমস্যা কি’ চিকিৎসকের এই প্রশ্নের জবাবে যুবকটি বলে ‘টাচস্ক্রিন ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছি না। কিপ্যাডে স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলাম। ফেসবুক, হোয়াটসএ্যাপ চলছিল ঠিকঠাক। নতুন ফোন কেনার পর কিছুই হচ্ছে না। ভীষণ অসহায় লাগছে।’ প্রতিদিনই এমন রোগীর লম্বা লাইন পড়ছে হাসপাতালে। এ জন্য পৃথক চেম্বার খোলার কথাও ভাবা হচ্ছে। কদিন আগে রাঁচি মহিলা কলেজে ১শ’ জন ছাত্রীকে নিয়ে একটা সমীক্ষা করা হয়েছিল। দেখা যায় এদের মধ্যে ৩৫ জন স্মার্টফোন ব্যবহারে আসক্ত। এরা কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে মুখোমুখি বেশি কথা বলে না। অথচ হোয়াটসএ্যাপে রাত জেগে গল্পগুজব করে।
এ ব্যাপারে পিছিয়ে নেই কলকাতাও। মনোবিদরা জানাচ্ছেন এ শহরে তিন-চার বছরের বাচ্চারাও সমস্যাটি নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসছে। স্মার্টফোনে আসক্তি কেড়ে নিচ্ছে যাদের স্বাভাবিক শৈশব। স্মার্টফোন সবচেয়ে বেশি গ্রাস করছে শিশু-কিশোরদের। মনোবিদ এবং সমাজতত্ত্ববিদদের মতে, বাচ্চাদের চুপ করাতে একেবারে শৈশবেই তাদের হাতে মোবাইল বা ট্যাব ধরিয়ে দেন বাবা-মায়েরা। এতে তারা নিজেদের সময়টা নিজেদের মতো করে কাটাতে পারেন ঠিকই, কিন্তু না বুঝে কত বড় সর্বনাশের বীজ বপন করছেন বুঝতেও পারছেন না। – আনন্দবাজার পত্রিকা

আরও পড়ুন