বান্দরবানের জাফর ইকবালের গোলে ভারতকে হারালো বাংলাদেশ

NewsDetails_01

ভারতকে হারিয়ে জয়ের পর ১০নং জার্সি পরিহিত বান্দরবানের জাফর ইকবালের উল্লাস
অবিশ্বাস্য জয়! বাংলাদেশ-ভারতের যুব দলের ফুটবল লড়াইয়ে কোনো বিশেষণই যেন যোগ করার মতো নয়। ফুটবলে পিছিয়ে থেকে ম্যাচে ফেরা কিংবা জেতা নতুন কিছু নয়; কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ৩ গোলে পিছিয়ে থাকা দলের জয় নিয়ে ফেরার ঘটনা তো বিরলই। সেই অবিশ্বাস্য কাজই সোমবার থিম্পুতে করলো বাংলাদেশ।
সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধনী ম্যাচে প্রথমার্ধে ৩-০ গোলে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধে ভারতের জালে চার গোল দিয়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। যে কোনো পর্যায়ের ফুটবলে ভারতের বিরুদ্ধে এটি বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় জয়। বান্দরবান শহরের বাসিন্দা স্ট্রাইকার জাফর ইকবালের জোড়া গোল এবং রহমত মিয়া ও মোহাম্মদ সুফিলের গোলে তিন পয়েন্ট তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।
এক বছর আগে এই থিম্পুতেই এক প্রকার কবর রচিত হয়েছিল বাংলাদেশের ফুটবলের। ইতিহাসে প্রথম ভুটানের কাছে হারের লজ্জা নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের প্লে-অফ ম্যাচে। যে হারটা কাঁপিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের ফুটবলের ভিত। ফুটবল নিয়ে ছি ছি পড়েছিল চারিদিকে। সেই থিম্পুতেই এবার ফুটবলে রূপকথার জন্ম দিলো বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ফুটবলে অনেক জয় আছে বাংলাদেশের; কিন্তু এমন অবিশ্বাস্য জয় আর নেই। দুই বছর আগে এই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশ হেরেছিল টাইব্রেকারে। সে হারের প্রতিশোধ নিতে ভারতের ফুটবলের গায়ে এভাবে বিষাক্ত তীরবিদ্ধ করবে বাংলাদেশ তা ছিল কল্পনারও বাইরে।
প্রথমার্ধে বাংলাদেশের জালে ৩ বার বল পাঠিয়ে মাঠে উল্লসিত ভারতীয় যুবাদের শারীরিক ভাষা যেন বলছিল দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশকে পিষে ফেলবে তারা; কিন্তু হয়েছে তার উল্টোটা- ভারতীয়দেরই দৌড়াতে হয়েছে বাংলাদেশ যুবাদের পেছনে পেছনে।
ভারতের প্রথম গোলটি হয়েছে বাংলাদেশের দুই ডিফেন্ডার টুটুল হোসেন বাদশা ও মাহমুদুল হাসান কিরণের ভুলে। নিজেদের বক্সের মাথা থেকে ভারতের পানওয়ার শিলের লম্বা শট পড়ে বাংলাদেশের বক্সের মাথায়; কিন্তু ওই দুই ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে বাংলাদেশের জালে বল ঠেলে দেন লালাওয়ামপুইয়া।
১৮ মিনিটে এগিয়ে যাওয়া ভারত ব্যবধান দ্বিগুণ করে ৩২ মিনিটে রেফারির উপহার দেয়া এডমুন্ড লালরিন্ডিকার পেনাল্টি গোলে। প্রথমার্ধের বাড়িয়ে দেয়া সময়ের তৃতীয় মিনিটে ভারতের তৃতীয় গোল করেন রেবেলে আরনল্ড।
বাংলাদেশ ও ভারতীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে বল দখলের লড়ায়
সবাই ভেবেছিলেন ম্যাচটি ওখানেই শেষ। দ্বিতীয়ার্ধে বরং গোলের বোঝা বাড়ার শঙ্কাতেই ছিলেন সবাই। গ্যালারিতে ছিল অনেক ভারতীয় সমর্থক। স্থানীয়রাও তারস্বরে চিৎকার করছিল ভারত-ভারত বলে। এমন এক প্রতিকুলতার মাঝে বাংলাদেশ যেন নতুন এক দল হয়ে শুরু করে দ্বিতীয়ার্ধ।
এই অর্ধে জাফর ইকবাল-রহমত মিয়ারা হয়ে গেলেন মেসি-রোনালদো। শুরু থেকেই চেপে ধরলো ভারতীয়দের। ফল আসলো ১০ মিনিটেই-বিপলু আহমেদের কর্নার থেকে জাফর ইকবালে দুর্দান্ত হেডে স্কোর ৩-১। কী করবে বাংলাদেশ? বড়জোর ব্যবধান কমানো। ড্র’টাও তো তখন কল্পানার বাইরে; কিন্তু জাফর ইকবালরা ঝুলিতে যে যাদুর কাঠি লুকিয়ে রেখেছিলেন তা কেন জানতো? যা দিয়ে কল্পনাকেও ছাড়িয়ে গেলো। ৫৫ মিনিটে ব্যবধান ৩-১, ৬০ মিনিটে ৩-২, ৭৪ মিনিটে ৩-৩ এবং ৯১ মিনিটে অবিশ্বাস্য ৪-৩!
লাল-সবুজদের আক্রমণ ঠেকাতে গোলরক্ষককে ব্যাকপাস দিয়েছিলেন ভারতীয় এক ডিফেন্ডার। গোলরক্ষক ভুল করে ব্যাকপাস ধরে ফেলেন। তবে এড়িয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করলেও বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের আবেদনে বক্সের মধ্যে ইনডাইরেক্ট ফ্রি কিক দেন রেফারি। রহমত মিয়া কাঁপিয়ে দেন ভারতের জাল। থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামের চিৎকার চেঁচামেচি তখন অনেকটাই মিইয়ে গেছে। ভারতীয়দের আপ্রাণ চেষ্টা বাংলাদেশকে আর গোল করতে না দেয়ার। দাঁতে দাঁত চেপে তারা ঠেকাতে লাগলো লাল-সবুজ জার্সিধারীর আক্রমণ বৃষ্টি; কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি।
বাংলাদেশ ম্যাচে সমতা আনে ৭৪ মিনিটে সুফিলের দেয়া গোলে। ভারতীয় ডিফেন্ডারের ভুলপাস ধরে বাম দিক থেকে ক্রস করেছিলেন জাফর ইকবাল। ফাঁকায় দাঁড়ানো সুফিলের হেডে ৩-৩। দুর্দান্তভাবে ম্যাচে ফেরা বাংলাদেশ তখন আরো চেপে ধরে ভারতীয়দের। ততক্ষণে গ্যালারিতে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা।
নির্ধারিত সময় শেষে মনে হচ্ছিল দুর্দান্ত এক ড্র নিয়েই হোটেল ফিরছে বাংলাদেশ; কিন্তু বাড়িয়ে দেয়া সময়ের প্রথম মিনিটেই জাফর ইকবালের আরেকটি হেডে থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে লেখা হয়ে যায় ফুটবলের নতুন এক রূপকথা। সাবাশ বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ : মাহফুজ হাসান প্রিতম, রহমত মিয়া, টুটুল হোসেন বাদশা, রিয়াদুল হাসান, মাহমুদুল হাসান কিরণ, আল-আমিন, সোহানুর রহমান, মাহবুবুর রহমান সুফিল (মো. রহিম), জাফর ইকবাল, মো. স্বাধীন, বিপলু আহমেদ (সৈকত মাহমুদ মুন্না)।

আরও পড়ুন