৪-২ গোলে বাংলাদেশের মেয়েদের জয়

NewsDetails_01

sএএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বের ‘সি’ গ্রুপের সবচেয়ে শক্তিশালী দল ধরা হয়েছিল ইরানকে। কিন্তু বাংলাদেশের মেয়েদের কাছে উদ্বোধনী ম্যাচেই পাত্তা পায়নি তারা। কিন্তু হঠাৎ করে আলোচনায় চলে আসে চাইনিজ তাইপে। তারা প্রথম ম্যাচে কিরগিজস্তানকে ৭-১ গোলে হারায়। ৫-০ গোলে ধরাশায়ী করে আরব আমিরাতকে। আর সিঙ্গাপুরকে গোল বন্যায় ভাসায় (৯-০)। উঠে যায় পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে।
বাংলাদেশও দাপটের সঙ্গে তাদের তিনটি ম্যাচ জিতলেও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে থাকে। আজ শনিবার তাদের বিপক্ষের ম্যাচটি নিয়ে বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ম্যাচটির গায়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচের তকমা লেগে যায়। হয়ে ওঠে অলিখিত ফাইনাল। তাইতো ম্যাচটি দেখতে বিবর্ণ গ্যালারিতে হাজার পাঁচেক দর্শকের আগমণ। কিন্তু সন্ধ্যায় মাঠে নেমেই নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দেয় চাইনিজ তাইপের মেয়েরা। ১১ মিনিটেই বাংলাদেশকে এক গোল দিয়ে বসে তারা। গোলটি করেন চাইনিজ তাইপের অধিনায়ক সু ইউ সুয়ান (১-০)।
শুরুতেই পিছিয়ে পড়লেও বাংলাদেশের মেয়েদের খেলার ছন্দপতন ঘটেনি। আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে বল দখলে রাখে অধিকাংশ সময়। পাশাপাশি মুহূর্মুহ আক্রমণ। তাতে ২৩ মিনিটের মাথায় ডি বক্সের সামনে দারুণ একটি ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ। কিন্তু নার্গিস খাতুনের নেওয়া শটটি সরাসরি তাইপের গোলরক্ষক ওয়াং ইউ-টিংয়ের হাতে গিয়ে জমে যায়।
বাংলাদেশের মেয়েদের আক্রমণ রুখতে বেশ বেগ পেতে হয় চাইনিজ তাইপের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের। তাই তারা বার বার ফাউল করতে থাকে। আর রেফারিও বার বার বাঁশি বাজাতে থাকেন। ম্যাচের ২৫ মিনিটের সময় ডি বক্সের মধ্যে কৃষ্ণা রানীকে মারাত্মক ফাউল করেন চাইনিজ তাইপের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় চেন চিয়াও-ই। হংকংয়ের রেফারি ল বিক চি হলুদ তাকে কার্ড দেখানোর পাশাপাশি পেনাল্টির বাঁশি বাজান।
দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন চেন চিয়াও-ই। তাতে ২৫ মিনিটেই ১০ জনের দলে পরিণত হয় চাইনিজ তাইপে। পেনাল্টি থেকে গোল আদায় করে বাংলাদেশকে সমতায় ফেরান শামসুন্নাহার (১-১)। ৩৬ মিনিটে দারুণ প্রচেষ্টা চালিয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন কৃষ্ণা-অনুচিংরা। ৩৭ মিনিটে আবারো পেনাল্টি পায় বাংলাদেশ। আবারো বাংলাদেশের অধিনায়ক কৃষ্ণা রাণীকে ডি বক্সের মধ্যে ফাউল করেন তাইপের ক্যাপ্টেন সু ইউ সুয়ান। আবারো পেনাল্টি কিক নেন শামসুনন্নাহার। পেনাল্টি থেকে গোল আদায় করে দলকে এগিয়ে নেন তিনি (২-১)।
৪০ মিনিটে নিশ্চিত গোলের সুযোগ মিস করেন অনুচিং। ফাঁকা পোস্টে বল জড়াতে ব্যর্থ হন তিনি। ৪৩ মিনিটে তার নেওয়া দূরপাল্লার শট বারের পাশ দিয়ে চলে যায়। ফলে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই বিশ্রামে যায় বাংলাদেশের মেয়েরা।
বিরতির পর ফিরেই গোল করেন অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী। ৫৬ মিনিটে মাথায় অনুচিংয়ের বাড়িয়ে দেওয়া বল ডি বক্সের মধ্যে পেয়ে যান কৃষ্ণা। ডান পায়ের জোরালো শটে চাইনিজ তাইপের গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে জালে আশ্রয় নেয় (৩-১)। তার অসাধারণ গোলটি দর্শকদের মুগ্ধ করে। ৭৬ মিনিটের মাথায় ডি বক্সের বাইরে সিরাত জাহান স্বপাকে ফাউল করলে রেফারি ফ্রি কিকের বাঁশি বাজান। ফ্রি কিক নেন শামসুন্নাহার। কিন্তু তার শটটি চাইনিজ তাইপের খেলোয়াড়দের তৈরি মানব দেয়ালে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে কর্নার হয়। কর্নার কিক থেকে উড়ে আসা বল জটলার মধ্যে ক্লিয়ার করতে গিয়ে আত্মঘাতি গোল দিয়ে বসে নিয়েন চিং-উন (৪-১)। ৮৭ মিনিটে একটি গোল শোধ দেন চাইনিজ তাইপের মিডফিল্ডার উ ইউ-জউ (৪-২)। ৮৯ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন চাইনিজ তাইপের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় টেং পেই-লিন। ফলে ৯ জনের দলে পরিণত হয় তাইপে। এরপর আর কোনো গোল না হওয়ায় ৪-২ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশের মেয়েরা।
এ জয়ের ফলে চার ম্যাচ থেকে পূর্ণ ১২ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি মূলপর্বের টিকিটও এক প্রকার নিশ্চিত করে ফেলেছে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে সোমবার অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে জয় পেলে অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ২০১৭ সালের এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের মূলপর্বে খেলতে যাবে কৃষ্ণা রানী-অনুচিং।

আরও পড়ুন