রাঙামাটি রাজবন বিহারে শেষ হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব। রাজবন বিহার বাংলাদেশের প্রধান বৌদ্ধধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
এই বৌদ্ধ বিহারে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব বৃহস্পতিবার শুরু হয়ে শেষ হয়েছে শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ফানুস উত্তোলণের মধ্য দিয়ে। উৎসবে এছাড়াও বুদ্ধপূজা, পঞ্চশীল প্রার্থনা, চরকায় সুতা কেটে চীবর বুনন ও তৈরি, কল্পতরু শোভাযাত্রা, বুদ্ধমূর্তি দান, অষ্টপরিস্কার দান, উৎসর্গ, মঙ্গলসূত্র পাঠ, ধর্মীয় দেশনাসহ পালিত হয়েছে নানা আচার-অনুষ্ঠান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পূণ্যার্থীদের পঞ্চশীল গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া কঠিন চীবর দানোৎসবের মূল অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয় রাজবন বিহারের উত্তর মাঠে। এই অনুষ্ঠানটির শুরু হয় বেলা ঠিক ২টায়। তার আগে গোটা বিহার এলাকাব্যাপী প্রদর্শন করা হয় হাজার বছরের ঐতিহ্য মহামতি গৌতম বুদ্ধের প্রধান সেবিকা মহাপূণ্যবতী বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তৈরি করা চীবরটি (বৌদ্ধভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র)। এছাড়া বিহার এলাকাজুড়ে প্রদর্শিত হয় বর্ণাঢ্য কল্পতরু (দানীয় টাকা ও সামগ্রি সম্ভার) শোভাযাত্রা। রাজবন বিহারে এবার অনুষ্ঠিত ৪৪তম কঠিন চীবর দানোৎসব উপলক্ষে বাণী পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মূল অনুষ্ঠানে সমবেত পূণ্যার্থীদের পক্ষে তৈরি করা চীবরটি মহাপরিনির্বাণগত মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের উত্তরসূরি ও রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষুপ্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবিরকে হস্তান্তর করে উৎসর্গ করেন চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদ অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান, সেনাবাহিনীর রাঙামাটি সদর জোনের অধিনায়ক, সাবেক পার্বত্য উপমন্ত্রী মণিস্বপন দেওয়ান, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, রবীন্দ্র লাল চাকমাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুস্মিতা খীসা।
অনুষ্ঠানে রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষুপ্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির পূণ্যার্থীদের মাঝে ধর্মীয় দেশনা দেন। এ সময় শ্রীমৎ জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবির, শ্রীমৎ ইন্দ্রগুপ্ত মহাস্থবিরসহ শতাধিক বৌদ্ধভিক্ষু মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
উৎসবে ঢল নামে লাখো পূণ্যার্থীর। এতে মুখর হয় রাজবন বিহার এলাকাসহ গোটা রাঙামাটির জনপদ। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় রাজবন বিহারের বেইন ঘরে চরকায় সুতা কেটে বেইন বুনন ও চীবর তৈরির উদ্বোধন করেন রাজবন বিহারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়।
প্রতি বছর মহামতি গৌতম বুদ্ধের প্রধান সেবিকা মহাপুণ্যবতী বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে রাজবন বিহারে আয়োজন করা হয় কঠিন চীবর দানোৎসবের। প্রায় আড়াই হাজার বছরেরও অধিক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এই নিয়মে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে চরকায় সুতা কেটে বুনন ও তৈরি শেষে চীবরটি (বৌদ্ধভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র) দান করা হয় বৌদ্ধভিক্ষুদের সমীপে। এবার অনুষ্ঠিত হয়েছে ৪৪তম কঠিন চীবর দানোৎসব।