রাঙামাটি সংসদীয় আসন : ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ, বিএনপিতে বিভক্তি, নিরব জেএসএস

NewsDetails_01

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি হ্রদ পাহাড়ের জেলা রাঙামাটিতে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ৬১১৬.১৩ বর্গকিলোমিটারের বৃহত্তর এ জেলাতে একটি মাত্র সংসদীয় আসন। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৯৯ নং এ আসনটি পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বেড়ে গেছে ব্যস্ততা। জেলা, উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে, বিএনপি নিরবে নিভৃত্তে প্রচারণা চালাচ্ছে। বসে নেই পাহাড়ের অপর শক্তি জেএসএসও। আগামী নির্বাচনে ত্রিমুখি লড়াই যে হতে যাচ্ছে, সেটা অনেকটা পরিষ্কার। তবে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলেও বিএনপিতে এখনো বিভক্তি রয়ে গেছে। বিপরীতে অনেকটা নির্ভার আঞ্চলিক দল জেএসএস। বৃহত্তর এ জেলায় দশ উপজেলা ও দুই পৌরসভা নিয়ে জনসংখ্যা ৬ লাখ ২০ হাজার ২১৪ জন। এর মধ্যে ভোটার ৪ লাখ ২০ হাজারের মত।
৯০ এর এরশাদ সরকারের পতনের পর বিএনপি সরকার গঠন করলেও আসনটি আওয়ামী লীগের হাতে চলে যায়। ৯৬ নির্বাচনেও অক্ষুন্ন রাখে আসনটি। এরপর ২০০১ সালে বিএনপির হাতে চলে গেলেও পরের নির্বাচনে অর্থাৎ ২০০৮ সালে আসন পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু ২০১৪ সালে নির্বাচনে অনেকটা কাকতালীয়ভাবে আসনটি জেএসএস এর হাতে চলে যায় এবং জানান দেয় তাদের শক্তি-সামর্থের কথা। জেএসএসের উত্থানে বড় দুই দলের হিসাব-নিকাশও পাল্টে যায় রাতারাতি। ৯০ থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত পাহাড়ীদের ভোট ব্যাংকের আশির্বাদ নিয়ে বড় দুটি দল আসনটিতে জয়ী হলেও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আঞ্চলিক দল জেএসএস এর জয়ে এখন বড় দুলেরই মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আঞ্চলিক এই দলটি। যদিও বা আঞ্চলিক এ দলটির বিরুদ্ধে পেশি শক্তি ও অস্ত্রের মুখে ভোটারদের ভীতসন্ত্রস্ত করে রাখার অভিযোগ হরহামেশাই তুলছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। কারণ হিসেবে জেলার পাহাড়ী ভোটাররা প্রার্থী নির্বাচনে বড় ভুমিকা পালন করে থাকে। আগামী নির্বাচনেও পাহাড়ী ভোটাররা যে প্রার্থীকে বেছে নিবে, তার জয় শতভাগ নিশ্চিত হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে।

►ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ:
স্থানীয় আওয়ামী লীগের হয়ে দলটির অন্যতম সফল নেতা ও সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদারের নাম শোনা যাচ্ছে জোরেসোরে। স্থানীয় সকলের কাছে তিনি ‘দাদা’ নামেই পরিচিত। দাদা দীপংকর তালুকদারেই আস্থা রাখছেন রাঙামাটি আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী। দলটির সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছেন, দীপংকর তালুকদারের বিকল্প আপাততঃ নেই। সেদিক দিয়ে আগামী নির্বাচনে দলের পক্ষে দীপংকর তালুকদার একমাত্র প্রার্থী হিসেবে অনেকটা নিশ্চিতই বলা যায়। তিনি ১৯৯১, ৯৬, ২০০৮ সালে এ আসনে জয় লাভ করেন। এই সময়ের মাঝে দলকে সুসংগঠিত করা ছাড়াও এলাকার যথেষ্ট উন্নয়ন করেছেন। তিনি সবার কাছে জনপ্রিয় একজন নেতা। কিন্তু দলের প্রতি আনুগত্য, পার্বত্যাঞ্চলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার পাশাপাশি শান্তিচুক্তির বিষয়ে ধীরগতি ও পাহাড়ী নেতাদের বিরুদ্ধে নানা কটুক্তিতে বিরাগভাজন হয়েছেন জেএসএস এর কাছে। তারই ফল স্বরুপ ২০০১ সালের নির্বাচনে জেএসএস বিএনপিকে সমর্থন দিলে দীপংকর তালুকদার বিএনপি প্রার্থী মনি স্বপন দেওয়ানের কাছে হেরে যান এবং ২০১৪ সালে বিএনপি বিহীন নির্বাচনে জেএসএস এর প্রার্থী উষাতন তালুকদারের কাছেও হারতে হয় পার্বত্য রাঙামাটির পরীক্ষিত এই রাজনীতিবিদকে। এরপরও সবকিছু গুছিয়ে বর্তমানে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ দীপংকর তালুকদারকে সাথে নিয়ে আসন পুনরুদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছে।
দলের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. মুছা মাতব্বর বলেন, বরাবরের মত আগামী নির্বাচনে দীপংকর তালুকদারই দলটির একক প্রার্থী। বিকল্প কাউকে আপাততঃ ভাবছি না। তিনি যতদিন স্বেচ্ছায় অবসরে যাবেন না, ততদিন অন্য কাউকে নিয়ে চিন্তাও করছি না।

NewsDetails_03

►বিএনপিতে বিভক্তি:
বিএনপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা চারজনের নাম শোনা গেলেও, মাঠ পর্যায়ে তেমন দৌঁড়ঝাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। দলীয় কোন্দল, বিভক্তি, মামলা-হামলার কারণে খুব একটা সক্রিয় ভুমিকায় দেখা যাচ্ছে না কাউকে। যদিও বা নির্বাচনকে সামনে রেখে আলাদা আলাদা কর্মসুচির মাধ্যমে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে দলের শীর্ষ নেতারা। আগামী নির্বাচনে এ আসনে সম্ভাব্য চারজন মনোনয়ন চাইতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে দলটির ভেতর-বাইরে। যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন দলের কেন্দ্রীয় সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান, জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাহ আলম, সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও কেন্দ্রীয় সহ-উপজাতীয় বিষয়ক সম্পাদক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) মণীষ দেওয়ান, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনর রশীদ মামুন। দলটির বিভিন্ন সুত্র বলছে, কোন্দল-বিভক্তি সমাধান করে নেতারা ঐক্যমতে পৌছালে আগামী সংসদ নির্বাচন জয় পাওয়া সম্ভব। এ আসনে বিএনপির একমাত্র সাফল্য ২০০১ সালের নির্বাচনে মনি স্বপন দেওয়ানের জয়ী হওয়া। অবশ্য সে সময় জেএসএস বিএনপির পাশে ছিল বলে এ জয় পেয়েছে।
বিএনপির সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, রাঙামাটি আসনে বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত না হওয়ায় যে কেউ মনোনয়ন প্রত্যাশা করতে পারে। তবে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে তার হয়ে কাজ করতে রাঙামাটি বিএনপি ঐক্যবদ্ধ।

►নিরব জেএসএস:
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ বা বিএনপিকে জেতাতে ভুমিকা রাখা আঞ্চলিক দল জেএসএস এখন দুটি দলের জন্যই মাথা ব্যাথার কারণ। নিজেদের রয়েছে বিশাল ভোট ব্যাংক। যারা দলটির প্রতি আনুগত্য প্রকাশে দ্বিমত করেন না। দলের প্রধান সন্তু লারমার আদেশ নির্দেশ যেকোন মূল্যে মেনে চলতে বদ্ধ পরিকর। তারই জলন্ত প্রমান ২০১৪ সালের ১০ম সংসদ নির্বাচন। সেবার নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেএসএসের উষাতন তালুকদার ৯৬ হাজার ২৩৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্ধন্ধী আওয়ামী লীগের দীপংকর তালুকদার ৭৭ হাজার ৩৮৫ পান। তবে আগামী সংসদ নির্বাচনে দলটির প্রার্থী কে হবেন, তা এখনও পরিষ্কার নন। মুখ খুলছেন না শীর্ষ নেতাদের কেউই। দলের ভেতর-বাইরে বর্তমান সাংসদ উষাতন তালুকদারকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। বিকল্প হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ানের। তবে সবকিছু নির্ভর করছে দলের চেয়ারম্যান সন্তু লারমার ওপর, তার সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। আগামী নির্বাচনে কাকে প্রার্থী করবেন, না করবেন সেটা ঝুলে থাকলেও জয়ের ব্যাপারে একেবারে নিরব ভুমিকায় আছে দলটি। নিজেদের ভোট ব্যাংককে কাজে লাগিয়ে আগামী নির্বাচনে বৈতরণী পার করার স্বপ্নে বিভোর দলটির নেতা-কর্মীরা।

►কি ভাবছেন ভোটাররা:
পাহাড়ী এ জেলার মূল সমস্যা পাহাড়ী-বাঙালী বিভেদ, চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র, আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে খুনোখুনি ও রক্তপাত। নির্বাচন এলেই এসব সমস্যা আরো দ্বিগুন রুপ নেয়। শংকায় দিন কাটে পাহাড়ে বসবাসরত সকলের মাঝে। পাহাড়ী-বাঙালী সবাই শান্তির পক্ষে, সকলেই শান্তি চায়। স্থানীয়দের মতে, যে প্রার্থী অত্র এলাকার জনগণের পাশে থেকে পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়ন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারবেন, সে প্রার্থীকেই যোগ্য হিসেবে বেছে নিবেন।

আরও পড়ুন