নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আগামী দিনগুলোতে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে সুষ্ঠ ভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কিনা এই নিয়ে দেশব্যাপি ব্যাপক জল্পনাকল্পনা শুরু হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার কমিশনের অধিনে প্রথম নির্বাচন রাঙামাটির বাঘাইছড়ি পৌরসভা নির্বাচন। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির বাঘাইছড়ি পৌরসভার এই নির্বাচনকে ঘিরে নতুন কমিশনের টেষ্ট কেস হিসাবে ধরে নিয়ে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। অনেকে আশঙ্কা করছেন নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রথম টেষ্ট কেসে সফল হবেন তো ?
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৮ ফেব্রæয়ারী অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের সীমান্তবর্তী সর্ববৃহৎ উপজেলা বাঘাইছড়ি পৌরসভা নির্বাচন। রাঙামাটি জেলার এ উপজেলাটি একটি পৌরসভাসহ আট ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয়। ২০০৪ সালে গঠিত এ পৌরসভাটির দ্বিতীয় নির্বাচন এটি। বর্তমানে পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে বাঘাইছড়ি পৌর এলাকা। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা। নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন ৩ হেভিওয়েট প্রার্থী।
আরো জানা গেছে,নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগের জাফর আলী খান (নৌকা), বিএনপির মো. ওমর আলী (ধানের শীষ) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুর রহমান (মোবাইল ফোন)। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫ এবং ৩টি সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। অন্যদিকে নির্বাচনকে ঘিরে আলোচনায় ভোটাররা। প্রার্থীদের নিয়ে চুলচেড়া বিশ্লেষণ করছেন তারা। চলছে নানা জল্পনা কল্পনা ও নানামুখী হিসাব-নিকাশ।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা মাতব্বর বলেন, বাঘাইছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই, নির্বাচন সুষ্ঠু ভোট হলে দলীয় প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীরা রাতদিন এলাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন জনসংযোগ, সভা ও উঠান বৈঠক করে, যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। মেয়র পদে তিন প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে অনেকে আশা প্রকাশ করেছেন। ফলে নির্বাচনে হারজিত নিয়ে সঠিক হিসাব মেলাতে পারছেন না প্রার্থীরা।
জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, বাঘাইছড়ি পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হলে মেয়র পদে বিএনপির জয় নিশ্চিত হবে।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভাটির এবার নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১০ হাজার ১৭৭। এর মধ্যে পাহাড়ি ভোটার রয়েছে ১ হাজার ৭০০ জন। তিন মেয়র প্রার্থীর সবাই গুরুত্ব দিচ্ছেন পাহাড়ি ভোটারদের প্রতি। নির্বাচনে ৯ কেন্দ্রের ৩৩ বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করতে পুলিশ ও বিজিবি টহল জোরদার থাকবে।
আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. জাফর আলী খান বলেন, জয়ী হলে অবহেলিত এই পৌরসভার উন্নয়নে আপ্রাণ চেষ্টা করব। দলমত নির্বিশেষে আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবে বলে আমি দৃঢ় আশাবাদী।
তবে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোঃ ওমর আলী বলেন, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জয়লাভ নিয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী কিন্তু ডিজিটাল কারচুপির আশংকায় রয়েছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটানিং অফিসার মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে বলে আশা করছি। এ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে, আইনশৃংখলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে।
নির্বাচন অফিস সূত্রে আরো জানা গেছে, বাঘাইছড়ি পৌরসভার ৯টি ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তায় সব ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
বাঘাইছড়ি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, নির্বাচনে আইনশৃংখলা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, যে কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিরাপত্তাবাহিনী প্রস্তুত।
উলেখ্য, বাঘাইছড়ি পৌরসভার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালের শেষের দিকে। নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপি নেতা মো. আলমগীর কবির। তার আগে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে পরিচালনা করা হয়েছিল এ পৌরসভাটি।