দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত রাঙামাটির প্রশাসন

NewsDetails_01

রাঙামাটির ঘাগড়া – বড়ইছড়ি সড়কে অতি বর্ষনে ধসে যাওয়া রাস্তার একাংশ পদির্শন করছেন কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানবৃন্দ
লাগাতার বৃষ্টিতে রাঙামাটিতে পাহাড়ধসসহ সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। বৈরি আবহাওয়ার কারণে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করার পাশাপাশি গভীর রাত পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সরেজমিনে অবস্থান করে জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে অনুরোধ করেছেন জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ।
এবার সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় এলাকায় গিয়ে সরেজমিন পরিদর্শনে মাঠে নেমেছে প্রশাসনের যৌথটিম। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় তাঁবু গেড়ে বসানো হচ্ছে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র। এরই মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভিটা ছাড়তে শুরু করেছে লোকজন। গিয়ে উঠছে যার যার নিরাপদ জায়গায়। তাছাড়া, ঝুঁকিতে থাকা মানুষ জনকে নিরাপদে সরাতে তৎপরতা জোরদার করেছে স্থানীয় প্রশাসন। জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে জরুরী সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ফায়ার সার্ভিস, রোটার‌্যাক্ট ও রেডক্রিসেন্ট স্বেচ্চাসেবকদ দল।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একে এম মামুনুর রশিদ জানান, সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে। শহরে ২১ আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সরকার থেকে বরাদ্দকৃত পর্যাপ্ত ত্রান ও উপকরণ মজুদ রয়েছে। পাশাপাশি ২০০ তাবু বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৩ জুন ভয়াল পাহাড় ধসের দুর্যোগে রাঙামাটিতে ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। আহত হয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক। রাস্তাঘাট, সেতু, স্থাপনাসহ ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক।
নানিয়ারচরে নিহতের পরিবারগুলোকে জেলা পরিষদ ও প্রশাসন থেকে সহায়তা প্রদান: নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড় ধসে নিহত ১১ জনের প্রত্যেককে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ থেকে ১০ হাজার টাকা এবং রাঙামাটি জেলা প্রশাসন থেকে ২০ হাজার টাকা ও ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য ত্রিদিব কান্তি দাশ ও নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন নিহতের পরিবারের হাতে টাকা গুলো তুলে দেন। এদিকে, নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড় ধসের মাটি চাপায় নিহত ১১জনের সৎকার মঙ্গলবার রাতে সম্পন্ন করা হয়েছে। রাঙামাটিতে তিনদিন পর বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে যান চলাচল শুরু হলেও রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে এখনো যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
পাহাড়ী ঢলে বাঘাইছড়ির ১৪টি গ্রাম প্লাবিত ও কাপ্তাইয়ে ১৪ স্থানে পাহাড় ধস: টানা বৃষ্টিপাত ও সীমান্ত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে কাচালং নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাঙামাটির বাঘাইছড়ির উপজেলার ১৪টি গ্রাম সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছে। গ্রামগুলো হলো করেঙ্গাতলী, বাঘাইহাট, বঙ্গলতলী, রূপকারী, কদমতলী, তুলাবান, গুচ্ছগ্রাম, মুসলিম ব্লক, ইমাম পাড়া, মাস্টার পাড়া, গুনিয়া পাড়া, সরকার পাড়া, কলেজ পাড়া ও পুরাতন মারিশ্যা। পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক কৃষি জমি। পানিবন্ধি মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মার্কেটসহ বিভিন্ন পাকা ভবনে অবস্থান নিয়েছে। এব্যাপারে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ জানান, বাঘাইছড়িতে পাহাড়ী ঢলে বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ আশ্রয় গ্রহন করেছে। প্রাথমিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাঘাইছড়ি উপজেলা নিবার্হী অফিসারকে ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এদিকে, টানা বৃষ্টিপাতে কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে ১৪ জায়গায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি। কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মাদ রুহুল আমিন বলেন, ভারি বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের ফলে কাপ্তাই উপজেলায় কোন প্রাণহাণির ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবরকম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
টানা বর্ষনে জুরাছড়ি প্লাবিত:
টানা দুইদিনে প্রবল বৃষ্টিতে জুরাছড়ির সাধারন জনগনের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।বৃষ্টির পানিতে জুরাছড়ির রাস্তাঘাট ডুবে গেছে।ফলে জনগনের চলাফেরা করতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান,বিদ্যুৎ না থাকায় তাদের ব্যবসায়ীক কাজে অসুবিধা হচ্ছে।আগের অতি বৃষ্টির কারনে মানুষ বাজারে যেতে পারছে না।জুরাছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বুধবার দুদিনের টানা বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন এবং পাহাড়ের পাদদেশে ঝুকিপূর্ণ স্থানে বসবাসরত ব্যক্তিগণকে নিরাপদ স্থানে সরে যাবার নির্দেশ প্রদান করেন।

আরও পড়ুন