রাঙামাটিতে ৫৭ বছর ধরে অন্ধকারে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ

NewsDetails_01

রাঙামাটির কাপ্তাই লেক
১৯৬০ সালে কর্ণফুলীর খর স্রোতা নদীতে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নির্মান করা হয়েছিল রাঙামাটির কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বাঁধের কারণে খাগড়াছড়ির কিছু অংশ এবং রাঙামাটির চাকমা রাজবাড়িসহ বিশাল অংশ পানিতে ডুবে যায়, ক্ষতিগ্রস্থ হয় হাজার হাজার পরিবার। কথা ছিল ক্ষতিগ্রস্থদের বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেয়া হবে কিন্তু রাঙামাটি সদর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে কাপ্তাই বাঁধের কাছে মগবান, বড়াদমসহ ২৫টি গ্রামের মানুষ এখনো বিদ্যুৎ সুবিধা পায়নি। অপরদিকে,রাঙামাটি সদরের ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে মগবান,বালুখালী ও বন্দুকভাঙ্গা এ ৩টি ইউনিয়ন অন্ধকারে। শহরের খুব কাছে থেকেও অন্ধকারে বসবাস করছে বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত এসব মানুষ।
রাঙামাটি সদর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে কাপ্তাই বাঁধের কাছে মগবান, বড়াদমসহ কয়েকটি গ্রামের ৭ হাজার মানুষ বিদ্যুৎ পায়নি। অথচ বাঁধের পানিতে তলিয়ে যায় মানুষদের চাষযোগ্য জমি, বাগান বাগিচা, সাজানো ঘর। জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার লড়াইয়ে উঁচু পাহাড়ে বসতি গড়ে ক্ষতিগ্রস্থরা। যাদের মধ্যে রয়েছে চাকমা, মারমা ও তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী। যে বিদ্যুৎ এর জন্য তারা ভিটে মাটি হারিয়েছিল আর গত ৫৭ বছরেও সেই বহুল প্রত্যাশিত বিদ্যুৎ যেন তাদের ধরাছোয়ার বাইরে। তারাই সেই বিদ্যুৎ এর আলো দেখেনি। রাঙামাটি শহর থেকে বেশী দূরে নয় এলাকাটি। এ গ্রামের মানুষ হারানোর বেদনা ভুলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বটে কিন্তু সন্ধ্যা যখন নামে নিজ ঘরের নিকটে বিদ্যুতের বাতি উজ্জল করে জ্বলে তখন কেঁদে উঠেন বঞ্চিত গ্রামের লোকজন। কেবল বড়াদম, মগবান নয় রাঙামাটি সদরের বালুখালী, বন্দুকভাঙ্গা এবং মগবান এই ৩টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ অন্ধকারে বাস করছে। এ যেন আলোর নিচে অন্ধকার, শহরের কাছে থেকেও অন্ধকারে বাস করছে ওরা। বিদ্যুৎ সুবিধা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী।
রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবানের ইউনিয়নের সাবেক ইউপি মেম্বার তুষার দেওয়ান বলেন, কথা ছিলো এখানকার সাধারণ মানুষ বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ সুবিধা পাবো। কিন্তু অত্যন্ত দু:খের বিষয় ৫৭ বছর পার হলেও বিদ্যুৎ এলাকার সবচেয়ে কাছে অবস্থান করেও এখনো বিদ্যুতের আলো দেখা মিলছে না, টাকা দিয়ে যে বাসায় বিদ্যুৎতের লাইন নিব এই ব্যবস্থা এখনও গড়ে উঠেনি।
এদিকে বালুখালী ইউনিয়নের যোগেশ চাকমা বলেন, আমার জন্ম হওয়ার পর থেকে এখানে বিদ্যুতের দেখা পাইনি। আমার মা বাবার কাছ থেকে শুনেছি তৎকালীন সরকার নাকি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এখানকার সকল মানুষ ফ্রীতে বিদ্যুৎ পাবে কিন্তু এখনো আমরা বিদ্যুৎ পাই নাই। অপরদিকে, বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা পলাশ চাকমা বলেন, বিদ্যুৎ না থাকার ফলে আমাদের এলাকার উন্নয়ন হচ্ছে না। এখানে বিদ্যুৎ থাকলে মানুষের ব্যবসা বাণিজ্যের সুবিধা বাড়তো। বিদ্যুতের অসুবিধার কারনে এ এলাকা অনগ্রসর হয়ে আছে।
বরাদমের আওলাদ বাজারের বাসিন্দা অমর চাঁন চাকমা বলেন, আমি জন্ম থেকে এ এলাকায় বসবাস করছি। এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় এখানকার ছেলে মেয়েরাও শিক্ষার দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে।
মগবান ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বর্তমান রাঙামাটি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অরুন কান্তি চাকমা বলেন, আমরা বার বার দাবি জানিয়ে আসছি সরকার দিবে বলেও বিদ্যুৎ সুবিধা দিচ্ছে না । ৫৭ বছর পরেও এখনো এখানকার মানুষ বিদ্যুৎ পায়নি। তিনি বলেন, কাপ্তাই বাঁধের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এই তিন ইউনিয়নের মানুষ। বিদ্যুৎ না থাকার কারনে মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে না। এ ইউনিয়নগুলোর যে ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রগুলো ডিজিটাল সেবা দেয়ার জন্য রয়েছে তা বিদ্যুতের অভাবে এখানকার জনগনকে সেবা দিতে পারছে না।
অরুন চাকমা আরো বলেন, আমি যতদুর জানি তিন পার্বত্য জেলার জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আশা করছি এ প্রকল্পের মাধ্যমে এ তিন ইউনিয়নের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে।
এদিকে বিদ্যুৎ বঞ্চিত মানুষ কবে নাগাদ বিদ্যুৎ পাবে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিন পার্বত্য জেলার বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো: মতিউর রহমান বলেন, বিদ্যুৎ উন্নয়নের জন্য একটি নতুন প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে এটি পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। তবে যেসব দুর্গম এলাকায় বিদ্যুৎ পৌছানো সম্ভব নয় সেসব এলাকায় সোলার সিস্টেম বসানো হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ঐসব এলাকায় সার্ভে শুরু করবো।

আরও পড়ুন