যেখানে পাহাড়ের স্বপ্নের চাষ হয়

NewsDetails_01

koromcha-1পাহাড়ি অঞ্চল একটি কৃষি নির্ভর অর্থনীতি। স্বাধীনতার পর এখানে তেমন কোনো শিল্প কারখানা গড়ে না উঠায় লোকজন কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এ অঞ্চলে কৃষির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে রাইখালীতে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। পাহাড়ি কৃষি গবেষণা এটির ভূমিকা অনস্বীকার্য। এখানকার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড, হারুনুর রশিদ পাহাড়ি অঞ্চলকে ‘উদ্যানতাত্ত্বিক জোন’ ঘোষণা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এখানকার মাটি ধান, গম কিংবা কৃষির জন্য উপযোগী নয়। কারণ এখানকার মাটি বেশিরভাগ ঢালু। এগুলোতে কৃষি জাতীয় ফসল উৎপাদন এমনিতেই কঠিন, সেক্ষেত্রে উদ্যানতাত্ত্বিক ফল কিংবা সবজি এ মাটিতে ভালো জন্মে। তাই এ অঞ্চলকে উদ্যানতাত্ত্বিক জোন ঘোষণা করে এখানকার উদ্যানভিত্তিক ফল কিংবা সবজির উন্নত জাত উদ্ভাবনে কাজ করে যেতে হবে।

কর্ণফুলি নদীর মোহনায় প্রায় ১০০ একর জমিতে ১৯৭৬ সালে গড়ে উঠা রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গত ৩৯ বছরে প্রায় ১১টি উদ্যানতাত্ত্বিক বিভিন্ন ফল ও সবজির উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে। এসব উদ্ভাবিত ফল ও সবজি শুধু এ অঞ্চলের নয়; বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। চারজন বিজ্ঞানী, ২৭ স্টাফ ও ৫০জন শ্রমিক নিয়ে হেঁটে চলা এ ইনস্টিটিউটে গতবছর আরো পাঁচটি ফল ও সবজির উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে।

NewsDetails_03

raikhali১১টি উদ্যানতাত্ত্বিক বিভিন্ন ফল ও সবজির মধ্যে রয়েছে বারি আম-৮(রাঙ্গুরাই), বারি মিষ্টি লেবু-১, বারি কামরাঙ্গা-২,বারি ঝারসীম-৩(খাইস্যা), বারি সীতা লাউ-১, বারি কুল-৪, বারি জ্যাকবীন-১, বারি কলা-৩, বারি কলা-৪, বারি ঝারসীম-২, বারি সীম-৪। এ বছরে যেসব জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে সেগুলো হলোঃ বারি চিনাল-১, ব্রোকলী-১, আমড়া-১, জলপাই-১, ড্রাগন ফল-১।
এছাড়া যে অপ্রচলিত ফল রয়েছে সেগুলো নিয়েও কাজ করছে রাইখালী কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে জাম, কাউয়া, চালতা, জিলাপী ফল, ডেউয়া, আঁতা, শরীফা, টক আঁতা, আঁশ ফল, লটকন, লুকলুকি, পানিয়ালা, জামরুল, সাফদা, টক বড়ই, মহুয়া, কফি জাম। পাশাপাশি বিদেশি সাতটি ফল নিয়ে কাজ করেছেন বিজ্ঞানীরা। এগুলো হলোঃ সৌদি খেজুর, এ্যাভোকেডো, চেরী, গ্রেপফ্রুট, জাবোটিকাবা, পীচ ফল, কফি জাম।

এ বছর উদ্ভাবিত জাতের মধ্যে ইতোমধ্যে ড্রাগন ফলের প্রতি চাষিদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাহাড়ের বিভিন্ন জমিতে এখন ড্রাগন ফলের চাষ দেখা যাচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় ড্রাগন ফল চাষের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড, হারুনুর রশিদ বলেন, সাধারণত রমজান মাসে রোজাদাররা শরবত খেতে পছন্দ করেন। সে সময় শরবত হিসেবে ড্রাগন ফল খুবই কার্যকরী। কারণ এর রঙ সরাসরি প্রাকৃতিক। এখানে কোনো কৃত্রিম রঙ মেশানোর প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজনমতো চিনি দিয়ে ড্রাগন ফলের শরবত তৈরি করা সম্ভব। তিনি এই ফলটিকে খুবই সম্ভাবনাময় ফল হিসেবে উল্লেখ করেন। এছাড়া রাইখালী কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে যেসব ফল ও সবজির উন্নত জাত উদ্ভাবন হয়েছে তা কৃষকদের কাছে পৌঁছানো খুবই জরুরি বলে তিনি জানান। তিনি জানান, যেসব উন্নত জাত আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলো জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল কৃষকদের জন্য খুবই কার্যকর। জুম চাষের প্রতি লক্ষ্য রেখে এসব জাত আবিষ্কার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন