মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি রাঙামাটি

NewsDetails_01

রাঙামাটিতে লাশের সন্ধানে তৃতীয় দিনে উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত
প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসের কারণে সড়ক যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় গত তিনদিনে রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় এসব সংকটের কারণে মানবিক বিপর্যয় চলছে। শহরে সর্বত্র চলছে বিশুদ্ধ খাবার পানির হাহাকার। বিদ্যুৎ ও তেল না থাকায় কোথাও খাবার পানির সন্ধান মিলছে না।
টানা বর্ষণে দূষনের চরম পর্যায়ে থাকা কাপ্তাই হ্রদের পানিও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রবাদির দাম এখন আকাশ ছোঁয়া। প্রতিটি পণ্যে গড়ে দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, পর্যাপ্ত পণ্য মজুদ থাকলেও প্রতিকুল পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে কিছ অসাধু ব্যবসায়ী।
সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় রাঙামাটির সাথে চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খাগড়াছড়ির সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পাহাড় ধসে মূল রাস্তার অনেক অংশে ভাঙ্গন হওয়ায় সবধরণের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি সকল ধরণের পন্যের আমদানি রপ্তানীও বন্ধ রয়েছে। ফলে এক প্রকার সবদিক দিয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে রাঙামাটিবাসী। সময় যত গড়াচ্ছে ততই মানবিক বিপর্যয়ের দিকে সম্মুখিন হচ্ছে এ জেলার জনগণ।
এদিকে,রাঙামাটিতে পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় তৃতীয় দিনের উদ্ধার অভিযানে নিখোঁজ সেনা সদস্য মোঃ আজিজসহ আরো ৩টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শহরের সার্কিট হাউজে পিছনে পাহাড়ী খাদ থেকে এক নারী, ভেদভেদী বিএডিসি এলাকা থেকে ১জন ও শহরের মানিকছড়ি পাহাড়ী খাদ থেকে আরো একটি লাশসহ মোট ৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা ৩টি স্থান থেকে এই তিনটি লাশ উদ্ধার করে। এর মধ্যে দুইটি পুরুষ ও একটি মহিলা লাশ রয়েছে। এপর্যন্ত রাঙামাটিতে নিহত সংখ্যা ১১০ জন।
এর মধ্যে রাঙামাটি শহরে ৫ সেনা সদস্যসহ ৬৫ জন, কাউখালী উপজেলায় ২১ জন, কাপ্তাই উপজেলায় ১৮ জন, জুরাছড়ি উপজেলায় ৪ জন ও বিলাইছড়ি উপজেলায় ২ জন মারা গেছে। সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা শহরের ভেদভেদী যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মনোঘর, লোকনাথ মন্দির এলাকা, শিমুলতলী, রূপনগর, মানিকছড়ি এলাকাসহ আশেপাশে এলাকায় আরো নিহতের সন্ধানে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে।
এদিকে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতলের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। রাঙামাটি হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় পানি ও খাদ্য সংকটে রোগীদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে নারী ও শিশু রোগীদের অবস্থা আশংকাজনক। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি আশংকায় রয়েছে গর্ভবতী মহিলারা। ফলে ব্যাহত হচ্ছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাইলে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুত ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে পারে। রোগীদের চরম ভোগান্তিতে তাদের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার পুরো বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে আরো দুই থেকে তিনদিন সময় লাগতে পারে। অপরদিকে রাঙামািিট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে কাপ্তাই হয়ে নদী পথে রাঙামাটি সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ দুর করার জন্য দুটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর আনা হচ্ছে।
অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় চলছে শোকের মাতম। বৃহস্পতিবার সকালেও আরও তিনটি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে লাশের সংখ্যা ১১১ জন। অবশেষে মিলেছে নিখোঁজ সেনা সদস্য আজিজুল হকের লাশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে মানিকছড়ি ঘটনাস্থলের মাটির নীচ হতে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এদিকে অবশিষ্ট নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে।
রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম পাহাড়বার্তাকে জানান, পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্থ পাঁচটি এলাকায় জোর উদ্ধার অভিযান চলছে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায়ও পানি, খাদ্য সংকটের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। দুর্গত এলাকা পানি ও খাদ্য ব্যবস্থার পাশাপাশি অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্প খোলার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। রাঙামাটির মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে প্রশাসনের পাশাপাশি সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো: আবু মুছা পাহাড়বার্তাকে জানান, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এর শালবন এলাকায় ১০০ মিটার রাস্তা ৩০ ফুট জায়গা পাহাড়ের নীচে তলিয়ে গেছে। রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের বিভিন্ন স্থানে ১০০ মিটার রাস্তা ৪০ থেকে ৫০ ফুট গভীরে তলিয়ে গেছে।
তিনি আরো জানান,বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্থ মুল সড়কের পাশে পাহাড়ে পুন:রায় কেটে বাইপাস করে সড়ক তৈরীর চেষ্টা করছে সেনা বাহিনী ও সড়ক বিভাগের কর্মীরা। রাঙামাটি চট্টগ্রাম সড়কের ক্ষতিগ্রস্থ স্থান সমূহে মাটি সরানোর কাজ শুরু হলেও এখনো সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। রাঙামাটি- খাগড়াছড়ি সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গনে ও ব্যাপক পাহাড় ধসের কারণে সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে।
অন্যদিকে রাঙামাটি শহরে গত ৪ দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক বিঘ্ন ঘটায় টেলিযোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের মাটি ভেঙ্গে পড়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে, পানি ও বিদ্যুৎ সংকটে মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।

আরও পড়ুন