জেরী-মাম্যাচিং দ্বন্দ্বে নাজুক বিএনপি !

NewsDetails_01

জেরী-মাম্যাচিং
আন্ত:দ্বন্দ্ব আর কোন্দলে বান্দরবান জেলা জুঁড়ে নাজুক অবস্থার মধ্যে রয়েছে বিএনপি। সাবেক সভাপতি সাচিং প্রু জেরী আর বর্তমান সভাপতি মাম্যাচিং সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব এখন চরমে। ফলে বিভক্ত হয়ে পড়ছে দলীয় নেতাকর্মীরা, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে বিএনপির অভ্যন্তরিন কোন্দল তত চাঙ্গা হবে বলে মনে করছে অনেকে।
জেলা বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, জেলা বিএনপির আংশিক কমিটি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিভক্তি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচিগুলো আলাদাভাবে পালন করে আসছে দুই পক্ষই। এছাড়াও একে অপরকে ঘায়েল করার জন্য দুই পক্ষই জড়িয়েছে সংঘাতে, এর ফলে পাল্টাপাল্টি মামলায় জর্জরিত দলটির নেতাকর্মীরা। যার কারনে জেলার রাজনীতির মাঠে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে আওয়ামীলীগ। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০নং আসনে বিএনপির নির্বাচনী ফলাফল সন্তোষজনক হবে না বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ।
আরো জানা যায়, বান্দরবান জেলা-উপজেলা জুঁড়ে এক সময় বিএনপির কর্মী, সমর্থক ছিল প্রচুর, ছাত্রদল আর যুবদল ছিলো মূল দলের শক্তি। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতাদের চরম অনৈক্য আর স্বার্থের রাজনীতির কারণে বর্তমানে তাতে ভাটা পড়েছে, উপজেলার অনেক নেতাকর্মী হয়তো আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে,নয়তো নিস্ক্রিয় অবস্থানে রয়েছে। যার ফলে বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আর জেলার ২টি পৌরসভা নির্বাচনে হেরে যায় বিএনপির দলীয় প্রার্থী।
জেরী-মাম্যাচিং এর বিরোধ নিরসন প্রয়োজন মনে করে লামা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আমির হোসেন জানান, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির মহা সচিবের সাথে ব্যক্তিগতভাবে আলাপ হয়েছে। দ্রুত উভয়কে নিয়ে বসে তিনি বিষয়টি সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছেন।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, ১৪তম বোমাং রাজা মং শৈ প্রু চৌধুরীর দুই ছেলে ছাড়া রাজপরিবারের অন্য সবাই বিএনপি সমর্থক। রাজার আসনে বসা নিয়ে বোমাং রাজপরিবারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ১৯৬০ সাল থেকেই। সে সময়ে অং শৈ প্রু কে পেছনে ফেলে রাজার আসনে বসেন মং শৈ প্রু চৌধুরী। মং শৈ প্রু চৌধুরী স্বাধীনতাযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিলেও অং শৈ প্রু চৌধুরী ছিলেন পাকিস্তানের পক্ষে। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে অং শৈ প্রু চৌধুরী খাদ্য প্রতিমন্ত্রীও নিযুক্ত হন। মং শৈ প্রু চৌধুরীর মৃত্যুর পর আদালতে লড়াই করে অং শৈ প্র“ রাজা হয়েছেন তবে রাজপরিবারের দ্বন্দ্বের অবসান হয়নি।
জেলা বিএনপির এক পক্ষের কাণ্ডারি সাচিং প্রু জেরী, যিনি অং শৈ প্রু চৌধুরীর ছেলে এবং আরেক পক্ষের কাণ্ডারি মাম্যাচিং, যিনি ১৩তম রাজার ক্য জ সাইন প্রু চৌধুরীর পুত্রবধূ। ফলে রাজনৈতিকভাবে একই দল হলেও তাঁরা রাজ পরিবারের বিভাজন থেকে মুক্ত হতে পারেননি। স্থানীয় লোকজন মনে করে, রাজপরিবারের এই দ্বন্দ্বই মূলত বিএনপিকে দুই ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে, আর এই বিরোধের কারনে বছরের পর বছর ধরে বিএনপির ঐক্যবদ্ধ হতে পারছেনা।
এই ব্যাপারে সাবেক ছাত্রদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম (জেরী গ্রুপ) পাহাড়বার্তাকে বলেন, জেলা বিএনপির বিরোধ নিরসনে কেন্দ্র বা জেলার কোন উদ্দ্যেগ নেই। দ্রুত বিরোধ নিরসন করলে আমরা সমর্থন জানাবো।
আরো জানা গেছে, প্রায় আট বছর পর ২১ সদস্য বিশিষ্ঠ বান্দরবান জেলা বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। গত ২ মার্চ বিকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক মো.তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় সাবেক মহিলা সাংসদ মাম্যাচিং’কে সভাপতি এবং সাবেক পৌরসভার মেয়র ছাত্র নেতা মোহাম্মদ জাবেদ রেজা’কে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কেন্দ্র ঘোষিত বান্দরবান জেলা বিএনপির আংশিক কমিটি থেকে নাম প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় অনেক নেতা। ঢাকায় এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন জেরি গ্রুপ। নতুন কমিটি ঘোষণার পর সাবেক সভাপতি সাচিং প্রু জেরী সমর্থকেরা অসন্তোষ প্রকাশ করে। এর এই কমিটি গঠনের পর থেকে জেলা উপজেলার বিভিন্ন কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘটনা ঘটে। ক্ষোধ বিএনপির দুই গ্রুপের বিরোধ মেটানোর জন্য কেন্দ্রিয় নেতারা বান্দরবান সফর করে বিভিন্ন সময় উদ্দ্যেগ গ্রহন করলেও কার্যত কোন ফল পাওয়া যায়নি।
জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রশিদ পাহাড়বার্তাকে বলেন, নেত্রী ( বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া) মুক্ত হলে আমাদের বিরোধ নিরসন করা হবে বলে কেন্দ্র থেকে জানিয়েছে। তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে সাচিং প্রু জেরী’কে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে, আমরা সবাই ঐক্যের ভিত্তিতে প্রার্থীর জন্য কাজ করবো।
একদিকে সাচিং প্রু জেরী’র অতি জামাত প্রীতি, অন্যদিকে জেলা বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষনার পর নব কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের মেনে নিয়ে সাচিং প্রু জেরীকে আগামী সংসদ নির্বাচন করার জন্য প্রস্তাব দিলেও উল্টো নতুন কমিটির বিরুদ্ধে জেরী কঠোর অবস্থানের কারনে আগামী নির্বাচনে কেন্দ্র থেকে সাচিং প্রু জেরীকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও মাম্যাচিং গ্রুপ যে বিরোধীতা করবে এই ব্যাপারে অনেকটা নিশ্চিত স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বান্দরবান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা বলেন, বিএনপিতে আগে যে কোন্দল ছিলো এখন প্রায় মিটে গেছে, এখন নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা চলছে মাত্র।
এদিকে সংকট নিরসনে মাম্যাচিং গ্রুপ ও সাচিং প্রু জেরী গ্রুপ থেকে নেতাদের নিয়ে জেলা ছাত্রদল, শ্রমিক দল ও সেচ্ছাসেবক দলের নতুন জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারপরও বিভেদ কমছেনা দলটিতে।
তবে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, শেষ পর্যন্ত জেলা বিএনপির দুই গ্রুপের বিরোধ মিটবেতো? নাকি আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দলীয় কোন্দল আরো প্রকট হবে?

আরও পড়ুন