স্থল বন্দরের সঠিক স্থান নির্ধারণে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী নজর দেবেন কি?

NewsDetails_01

পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় প্রবাহমান নদী সমূহের সীমানা নির্ধারণ নাব্যতা হ্রাস এবং মিয়ানমার সীমান্তে স্থল বন্দর নির্মাণে উদ্যেগ নিচ্ছে সরকার। এ সংক্রান্ত সম্ভাব্য করণীয় নির্ধারণে গত রবিবার নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ে এক সভা অনুষ্টিত হয়েছে।
এদিকে পার্বত্য এলাকায় স্থল বন্দর নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা ও ঘুমধুম সীমান্ত। স্থানীয়দের মতে সম্ভাব্য চাকঢালা, আশারতলী ও ঘুমধুমের যেকোন একটি সুবিধাজনক স্থানে ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে ট্রানজিট পয়েন্ট স্থাপন করা গেলে পার্বত্য এলাকার মানুষ উপকৃত হবে। পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব সাদেক হোসেন চৌধুরীর এক ফেইসবুক ষ্ট্যাটাস বার্তায় সীমান্ত এলাকার জনসাধারণের মাঝে নতুন ভাবে আশার সঞ্চার সৃষ্টি হয়। নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা সীমান্তে দীর্ঘ প্রতিক্ষিত এ ট্রানজিট পয়েন্ট স্থাপন হলে পার্বত্য এলাকার মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে বলে স্থানীয়দের অভিমত।
তবে সর্বশেষ রবিবার সচিবালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় নদীর সীমানা নির্ধারণ, নাব্য বৃদ্ধি এবং স্থলবন্দর নির্মাণ সংক্রান্ত সভায় বান্দরবানের ঘুমধুম স্থলবন্দর ও রাঙ্গামাটির থেগামুখ স্থলবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। বান্দরবানে ঘুমধুম স্থলবন্দর ও রাঙ্গামাটির তেগামুখ স্থলবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, ‘কীভাবে আমরা বন্দরগুলো করব, এজন্য আলোচনা চলছে।’ বলে জানান মন্ত্রী।
সূত্র মতে,

১৯৯৬-২০০১ সনে তৎকালীন সরকার আমলে ডুলহাজারা থেকে শাহসুজা সড়কের আশারতলী হয়ে মিয়ানমারের সাথে বাণিজ্যের জন্য স্থল বন্দর নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়। ওই সময় তৎকালীন মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন এ স্থল বন্দর কার্যক্রমে সহায়তা করেন। কিন্তু পরবর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর কক্সবাজার জেলার এক এমপি ঘুমধুমে নিয়ে যান।

স্থানীয়দের মতে, ঘুমধুমে স্থল বন্দর হলে পার্বত্য এলাকার মানুষ কোন প্রকার উপকৃত হবেনা। কারণ মিয়ানমারের জিরো পয়েন্ট থেকে কাষ্টম মেইন রোড় পর্যন্ত মাত্র কয়েক’শ গজ এলাকা পড়েছে বান্দরবানের (ঘুমধুম ইউনিয়নে)। বাকী পুরো এলাকা কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলায়। অন্যদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালায় স্থল বন্দর নির্মিত হলে পার্বত্য এলাকার মানুষ সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে। কারণ চাকঢালা জিরো পয়েন্ট থেকে রামুর প্রধান সড়ক পর্যন্ত প্রায় ১৫কি:মি এলাকা পড়েছে বান্দরবানে। এছাড়াও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি দিয়ে বড় কোন নদ-নদী নেই। অতিরিক্ত কোন বরাদ্দেরও কোন প্রয়োজন নেই স্থল বন্দর নির্মাণে। সরকার যদি সত্যিকারার্থে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ কারতে চায়, তাহলে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে স্থল বন্দর নির্মাণের কোন বিকল্প নেই।
সূত্র মতে, সম্ভাব্য তিনটি ট্রানজিট পয়েন্ট এর মধ্যে চাকঢালা ও আশারতলী দুটি পয়েন্ট নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরে অবস্থিত। অপরটি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে। বর্তমানে চাকঢালা চেরারমাঠ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের জনবহুল ওয়ালিডং, ফকিরাবাজার হয়ে মংডু ও আকিয়াব শহরে সহজেই যাতায়ত সম্ভব, মাঝখানে বড় কোন নদীও নেই। গত কয়েক বছর পূর্বে থেকে মিয়ানমারের ওপারে সীমান্ত সড়ক গুলোও উন্নয়ন করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ সীমান্তে ট্রানজিট পয়েন্ট স্থাপনে বড় ধরনের কোন বাজেটেরও প্রয়োজন নেই। কয়েকটি ব্রিজ, কার্লভাট ও সীমান্তের কিছুটা সড়ক সংস্কার করা হলে দেশের উন্নত একটি বাণিজ্যিক পয়েন্ট চাকঢালা হবে বলে সচেতন মহল দাবী করেছেন।

ট্রানজিট ও বর্তমান অবস্থাঃ

বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পিলার ৪৩-৪৪ এর প্রায় তিন কি:মি মধ্যবর্তী সুবিধাজনক স্থানে বাংলাদেশ-মিয়ানমার স্থল পথে সীমান্ত বাণিজ্যের এক নতুন ট্রানজিট পয়েন্ট হতে পারে এবং এটি এলাকার গণমানুষের দাবীতেও পরিণত হয়েছে। চাকঢালার বাণিজ্যিক ট্রানজিট পয়েন্ট হিসাবে সরকারীভাবে বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে অবকাঠামো গড়ে তোলা হলে এখানে কক্সবাজারের টেকনাফের চেয়েও সহজ ও আধুনিক বাণিজ্যিক ট্রানজিট পয়েন্ট গড়ে তোলা সম্ভব বলে অভিজ্ঞজনের অভিমত।

অপরদিকে ঘুমধুম কিংবা আশারতলী এলাকায় বাণিজ্যিক পয়েন্ট করা হলে এতে বান্দরবানের চেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করবে পার্শ্ববর্তী কক্সবাজার জেলার রামু, উখিয়া ও টেকনাফ এলাকার জনসাধারণ। এ জন্য সুধূর প্রসারী চিন্তার মাধ্যমে ট্রানজিট পয়েন্ট স্থাপনের জন্য সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে পার্বত্য জেলার মানুষ।

NewsDetails_03

জানা গেছে, বাংলাদেশের চাকঢালা ও মিয়ানমারের ওয়ালিডং এলাকার উপর দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা এবং সহজ হওয়ার কারনে বিভিন্ন সময়ে সীমান্তের লোকজন প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে দু’দেশের স্থানীয় গরীব জনসাধারণের নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীসহ বিভিন্ন পন্য আমদানী রপ্তানি করে থাকে। এজন্য এ সড়ক দিয়ে বাণিজ্যিক ট্রানজিট চালু হলে অবৈধ ভাবে আমদানী-রপ্তানী বন্ধসহ সহজ যাতায়তের মাধ্যমে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হবে। এতে করে পার্বত্য সীমান্ত এলাকার উন্নয়ন বঞ্চিত জনাসাধারণের কর্মসংস্থানসহ দু’দেশের বন্ধুত্ব ও অর্থনৈতিক লেনদেনের উন্নয়ন সাধিত হবে।
এ ব্যাপারে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম বলেন,

পার্বত্য এলাকার মানুষের উন্নয়ন করতে হলে চাকঢালা চেরারমাঠ সড়ক দিয়েই ট্রানজিট পয়েন্ট স্থাপন করা প্রয়োজন। এ সড়ক দিয়ে ট্রানজিট পয়েন্ট স্থাপন হলে সরকারের রাজস্ব আদায়সহ সর্বপ্রকার সুবিধা হবে। তিনি আরো বলেন, অন্য পয়েন্ট হলে পুরো সুবিধা আদায় করবে পার্শ্ববর্তী কক্সবাজার জেলার জনসাধারণ।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীতি প্রার্থী তসলিম ইকবাল চৌধুরীসহ স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দরা জানিয়েছেন, ইতিপূর্বে বান্দরবান ৩০০ নং আসনের সংসদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী) বীর বাহাদুর (উশৈচিং) নাইক্ষ্যংছড়ি সফরকালে চাকঢালা চেরারমাঠ এলাকায় সীমান্ত বাণিজ্যিক ট্রানজিট পয়েন্ট স্থাপন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাই এটি স্বপ্ন নয় প্রতিমন্ত্রী স্থল বন্দর বাস্তবে রূপ দিবেন এমনটি মনে করেন তিনি।
উলে¬খ্য, নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা এলাকায় বাণিজ্যিক ট্রানজিট পয়েন্ট স্থাপন হলে দু’দেশের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বের পাশাপাশি দু’দেশের প্রয়োজন মাফিক আমদানী-রপ্তানির নতুন এক দীগন্ত উম্মোচিত হবে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী সরকারের সিদ্ধান্ত ও সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের চাকঢালা চেরারমাঠে একটি বাণিজ্যিক ট্রানজিট স্থাপনে দাবী জানিয়েছেন।

লিখেছেন:
মো.আবুল বশর নয়ন
সাধারণ সম্পাদক
নাইক্ষ্যংছড়ি প্রেসক্লাব, বান্দরবান।

আরও পড়ুন