সৈয়দ আশরাফের জন্য হাহাকার!

NewsDetails_01

provash-amin20161021161116রাজধানীতে এখন সাজ সাজ রব। শুধু রাজধানী নয়, সাজ সাজ রব আসলে দেশজুড়ে। ক্ষমতাসীন দলের কাউন্সিল বলে কথা। দিনে যেমন তেমন, রাতে ঢাকায় বেরুলেই আপনি টের পাবেন ঢাকার বাতাসে উৎসবের রঙ লেগেছে। পেশাগত কারণে আওয়ামী লীগের একাধিক কাউন্সিল অধিবেশন কাভার করার সুযোগ হয়েছে। তবে এতটা আয়োজন দেখিনি কখনো। টানা ৮ বছর ক্ষমতায় থাকার জৌলুসটা টের পাওয়া যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ডিনার শেষে ফেরার পথে আলো ঝলমলে ঢাকা দেখে চেনাই যাচ্ছিল না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে তো চেনাই যাচ্ছে না। নিত্যদিনের যানজটের ঢাকার এমন মোহনীয় রূপ দেখে মন ভালো হয়ে গেল। কিন্তু বাসায় ফিরে ফেসবুকে অনেকের স্ট্যাটাস দেখলাম লোডশেডিং নিয়ে। অনেকদিন লোডশেডিংয়ের কথা শুনিনি। বুঝলাম সুখের পাশেই শুয়ে থাকে দুঃখ, আলোর নিচেই থাকে অন্ধকার, উৎসবের আয়োজনের আড়ালেই বাজে হাহাকারের রাগিনী।

শেখ হাসিনা টানা ৩৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এবার কাউন্সিলকে সামনে রেখে তিনি একাধিকবার অবসরের কথা বলেছেন বটে, তবে এখনও আওয়ামী লীগ মানেই শেখ হাসিনা। তাই এখন আওয়ামী লীগের কাউন্সিল মানেই সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে কৌতূহল, আলোচনা। ওয়ান-ইলেভেনের পর ক্ষমতায় এসে ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে প্রথম সাধারণ সম্পাদক হন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এমনিতে মাঠের রাজনীতিতে তার তেমন ভূমিকা নেই, তবে ওয়ান-ইলেভেনের সময় জিল্লুর রহমানের পাশে সৈয়দ আশরাফের অনমনীয় ভূমিকা অনেক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে আওয়ামী লীগকে। তাই তার সাধারণ সম্পাদক হওয়াটা অনেকটা শেখ হাসিনার সভাপতি হওয়ার মতই নিশ্চিত ছিল। তবে ২০১২ সালের কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দ আশরাফের পাশে উঠে আসে ওবায়দুল কাদেরের নাম। তবে সৈয়দ আশরাফই টানা দ্বিতীয়বার সাধারণ সম্পাদক হন।

এবারও কাউন্সিলের আগেও উঠে আসে ওবায়দুল কাদেরের নাম। ওবায়দুল কাদের কৌশলে প্রায় প্রতিদিনই নিজের নামটি আলোচনায় রাখেন। প্রতিদিনই তিনি বলছিলেন, আমি প্রার্থী নই, কাউকে প্রার্থী বানাবেন না.. ইত্যাদি ইত্যাদি। এটা অনেকটা ‘মোল্লার পাতে ভাত নাই’ ধরনের। তবে সৈয়দ আশরাফই আবার সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন, এমনটাই ছিল সবার ধারণা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পাল্টে গেছে হাওয়া। কাউন্সিলের দু’দিন আগে বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে শেখ হাসিনার সাথে ওবায়দুল কাদেরের একান্ত বৈঠকের পর বাতাসে ভাসতে থাকে, ওবায়দুল কাদেরই হচ্ছেন আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক। এত জাঁকজমকের কাউন্সিলের আগেই যদি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ঠিক হয়ে যায়, তাহলে আর কাউন্সিলের দরকার কি?

NewsDetails_03

ওবায়দুল কাদের ক্যারিয়ার পলিটিশিয়ান। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেছেন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় আটক অবস্থায় শেখ হাসিনার বিপক্ষে কথা বলে একটু পিছিয়ে পড়েছিলেন। ২০০৯ সালের প্রথম মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাননি। তবু লেগেছিলেন। ফল পেয়েছেন। পরে হলেও মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়ে সক্রিয়তায় সবাইকে ছাড়িয়ে যান। যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে রাস্তাঘাটে ঘুরে ঘুরে নানা অভিযানে এক ধরনের চমক তৈরি করেন, যা অনেকে পছন্দ করেছেন। তার চেষ্টায় দেশের অবকাঠামো খাতে বৈপ্লবিক উন্নতি হয়েছে, হচ্ছে। দলের নেতাকর্মীদের সাথে তার যোগাযোগ দীর্ঘদিনের নিবিড়। দলে তার দারুণ জনপ্রিয়তাও আছে।

তবে সৈয়দ আশরাফ অন্য ঘরানার মানুষ। সাধারণ আওয়ামী লীগারদের মত নন। তিনি প্রচারবিমুখ তো বটেই, কর্মীদের অভিযোগ তিনি কর্মীবিমুখও। সারাবছর তার বিরুদ্ধে সবাই সোচ্চার, তিনি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলকে যথেষ্ট সময় দেন না, মন্ত্রী হিসেবে সরকারেও সরব নন। তবে কাছের লোকেরা বলেন, তিনি অন্যদের মত দিনরাত পড়ে না থাকলেও দরকারি সময়টুকু ঠিকই দেন, দরকারি কাজটা সময়মতই করেন, তার মন্ত্রণালয়ে কোনো ফাইল আটকে থাকে না। কিন্তু অপ্রয়োজনে দলের অফিসে বা সচিবালয়ে গিয়ে তদ্বিরবাজদের ভিড় সামলানো তার কাজ নয়। তার গুটিয়ে থাকা নিয়ে সমালোচনা থাকলেও; তার যোগ্যতা নিয়ে, দক্ষতা নিয়ে, সততা নিয়ে, আনুগত্য নিয়ে, বিশ্বস্ততা নিয়ে, দৃঢ়তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।

ওয়ান-ইলেভেনের সময় বা হেফাজতের ৫ মের তাণ্ডবের সময় তার দৃঢ়তায় দেশ ও দল বেঁচে গেছে বার বার। এত যে অভিযোগ, কিন্তু যখনই তাকে সরানোর প্রশ্ন আসে, তখনই তার পক্ষে আবেগের ঢেউ খেলে যায়। যখন তাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরানো হলো, তখন এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। এবারও কাউন্সিলের শেষ মুহূর্তে ওবায়দুল কাদেরের নাম বাতাসে ওড়ার সাথে সাথেই সৃষ্টি হয়েছে সৈয়দ আশরাফের জন্য হাহাকার। আগেই যেমন বলেছি, উৎসবের আয়োজনের আড়ালেই বাজছে হাহাকারের রাগিনী।

আসলেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে সৈয়দ আশরাফের মত চরিত্র বিরল, হয়তো বেমানানও। সৈয়দ আশরাফের পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম জীবন দিয়েছেন দলের জন্য, বঙ্গবন্ধুর জন্য তার ভালোবাসার প্রমাণ দিয়ে গেছেন। শুধু সৈয়দ নজরুল নন, ৭৫’র ৩ নভেম্বর কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতার পরিবারই পরীক্ষিত। অভিমান করে সোহেল তাজের সরে যাওয়া যেমন দলের জন্য ভালো হয়নি, তেমনি সৈয়দ আশরাফকে সরিয়ে দিলেও ভালো থাকবে না আওয়ামী লীগ। হয়তো হাইব্রিড, ধান্দাবাজ নেতাকর্মীদের একটু অসুবিধা হবে; তবে সৈয়দ আশরাফ-সোহেল তাজরা পাশে থাকলে শেখ হাসিনা নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। সূত্র : জাগোনিউজ

আরও পড়ুন