আমাদের মুক্তিসংগ্রামের এক অকুতোভয় আলোকচিত্রী’র কথা..

NewsDetails_01

photostudio_1473943242155

পাহাড়ের হাসি-কান্না’র মাঝেই যিনি নিজের অস্তিত্ব অনুভব করেন; পাহড়ের সুখ-দু:খের সাথেই যিনি গড়েছেন আত্মার বন্ধন। হারিয়ে যেতে যেতে কোন রকমে অস্তিত্ব ধরে রাখা পাহাড়ের লোকজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সমূহ সংগ্রহ-সংরক্ষণ, সুস্থ চর্চা ও এর বিকাশের পরিবেশ ভাবনা যাকে তাড়িত করে, পাহাড়ে স্বপ্ন-সম্ভাবনা ছড়িয়ে যিনি অনেক দূরপথ পেরিয়ে এসেছেন…সীমাবদ্ধতার গন্ডিতেও জীবনমুখী কিছু প্রয়াস মানবিক টান থেকেই যিনি নিয়ত অনুভব করেন তিনি…. ফেবিয়ান বি. গোমেজ। পাহাড়ের আদিবাসী ও আদিবাসী বান্ধব অনািদবাসীদের যৌথ প্লাটফর্ম “জুমঘর ফাউন্ডেশন” এর চেয়ারম্যান তিনি। আমাদের মহান মুক্তি সংগ্রামের ঘটনাবহুল সময়ের নিরব সাক্ষী আলোকচিত্রী নীতিশ রায়ের দীর্ঘশ্বাস হয়ে ফিরে আসা কষ্টগাঁথা লিখেছেন, ফেবিয়ান বি. গোমেজ।

NewsDetails_03

আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রখ্যাত আলোকচিত্রী নীতিশ রায় ভীষণ অসুস্থ আছেন। বার্ধক্যজণিত বিভিন্ন রোগে বেশ কয়েকমাস যাবত তিনি বিছানায় শয্যাশায়ী। কারো সঙ্গে কথা বলছেন না ইদানিং। তাঁর বিখ্যাত সব আলোকচিত্রগুলো কোথায় আছে তাও এখন আর ঠিকমতো মনে করতে পারছেন না। তাঁর ভাইঝি জানিয়েছেন যে, তিনি এখন তাঁর সব ছবি শেষ ইচ্ছা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে দিয়ে যেতে চান।

আলোকচিত্রী নীতিশ রায়
আলোকচিত্রী নীতিশ রায়
একাত্তরে সারা দেশে যখন পশ্চিম পাকিস্তানীদের বর্বর হামলা শুরু হয় তখন দেশপ্রেমী জনতা ঝাপিয়ে পড়ে মাতৃভূমি রক্ষায়। কেউ বন্দুক হাতে, কেউ দেশীয় অস্ত্রে, কেউ মুক্তির গান গেয়ে, কেউ বা আবার ক্যামেরা হাতে নেমে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। এদের মধ্যে অগ্রভাগে ছিলেন শেরপুরের প্রবীণ আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক নিতিশ রায়। একাত্তরে ১১ নং সেক্টরের নিয়ন্ত্রণাধীন শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী তাওয়াকুঁচা ও হলদিগ্রাম বিওপি ক্যাম্প এলাকার যুদ্ধের মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে তিনিও ছিলেন। তবে তাঁর হাতে ছিল ক্যামেরা। শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ক্ষেত্রে ক্যামেরাই ছিল তার হাতিয়ার। স্বাধীনাতার পরও থেমে থাকেনি নিতীশ রায়ের ক্যামেরার ক্লিক আর সাংবাদিকতার কলম।

নীতিশ রায় এর আঁকা বিখ্যাত ছবি ‘তৃষ্ণা’।
নীতিশ রায় এর আঁকা বিখ্যাত ছবি ‘তৃষ্ণা’।
যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি তুলেছেন অসংখ্য ছবি। মুক্তিযোদ্ধাদের রণ প্রস্তুতি, রক্তাক্ত বাংলাদেশ, যুদ্ধ জয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয়ের দুর্লভ দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করেছিলেন এই আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক। তিনি সে সময় মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত জয়বাংলা পত্রিকার প্রেস ফটোগ্রাফারও ছিলেন। বয়সের ভারে ন্যুজ্জ হয়ে আজও তিনি খুঁজে ফিরেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দিকৃত রণাঙ্গনের দুর্লভ ছবির স্মৃতিগুলো। স্মৃতির পাতায় হাতড়ে বেড়ান সেই সব দিনগুলির কথা। একাত্তরে অস্ত্র হাতে বীর সেনারা পেয়েছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি। পেয়েছে নানা সুযোগ-সুবিধা। মহান মানুষটি আজো পাননি কোন স্বীকৃতি। অথচ ২০০৯ সালে ১৭ মার্চ তৎকালীণ রাষ্টপতি জিল্লুর রহমানের কাছে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদপত্র পেতে পত্র দিলে প্রয়াত রাষ্টপতি জিল্লুর রহমান তার আবেদনটি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। এরপর তিনি দফায় দফায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কক্ষে ঘুরেও এর কোন সুরাহা করতে পারেননি। একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সুপারিশের কথা বলা হলে তিনি কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে লিখিত আবেদন করেন। এছাড়া ২০০৯ সালের ১৭ মে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্থিক সহায়তা এবং স্বৃকিতি চেয়ে আরেকটি আবেদন করেন। কিন্তু উল্লেখিত আবেদন দুটি আজো আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমানে এই আলোকচিত্রী মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। অথচ রণাঙ্গনের অসংখ্য দুর্লভ ছবি আজো মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে। জাতির প্রতি তাঁর এই মহামুল্যবান অবদানের স্বীকৃতি মিলুক এটাই সুধীজনদের প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন