জীবনটা শেষ করে দেওয়া কেন!

NewsDetails_01

tania-morshedবর্তমান সময়ে বাংলাদেশে ডিভোর্সের সংখ্যা অনেক বেড়েছে বলে শোনা যায়। প্রাপ্তবয়স্ক দু’জন একসঙ্গে আর থাকতে না পারলে আলাদা হয়ে যাওয়াই উত্তম। আলাদা হবার জন্য দু’জনের একজনকে বা দু’জনকেই যে খারাপ হতে হবে এমন কথা নেই। দু’টো ভাল মানুষও একসময় হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে, তাদের আর একসাথে থাকা সম্ভব নয়।

এই একসাথে না থাকার সিদ্ধান্তের জন্য বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। কেন দু’জনের সম্পর্ক টিকছে না তা বাইরের মানুষের পক্ষে বোঝা অনেক সময়ই কঠিন হতে পারে। আবার কিছু বিষয় আছে যা অনেকটা স্পষ্ট হতে পারে। বিশেষত যদি তা প্রকাশ হয়ে থাকে কথায়, কাজে, আচরণে। কোনো সম্পর্কের মধ্যে যদি অ্যাবিউজ থাকে শারীরিক, মানসিক বা উভয়, তাহলে সেই সম্পর্ক সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম এমনকি সন্তানের কারণেও টিকিয়ে রাখা বোকামি।

যেই সন্তানের “জীবন নষ্ট” হবে ভেবে অ্যাবিউসিভ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা হয়, তা আসলে সন্তানের জন্য কখনই ভালো কিছু নিয়ে আসে না। মানুষের সাইকোলজি এক অদ্ভুত বিষয়। অ্যাবিউসিভ সম্পর্কের পরিবারে পুত্র সন্তান মায়ের নির্যাতিত হওয়া দেখে কষ্ট পেলেও অনেক সময়ই তার নিজের জীবনে একজন অ্যাবিউসিভ বর হয়। আর কন্যা সন্তান নিজের জীবনে অ্যাবিউজড হলে মায়ের মতোই সহ্য করে। এছাড়াও আরও অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে সন্তানদের মনোজগতে।

অনেক সময় দেখা যায় উচ্চ শিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত নারীও অ্যাবিউসিভ সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসতে পারেন না, বা অনেক সময় পার করে দেন। আপাত কোন কারণ নেই যে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার, সেখান থেকে বের হতে অনেক সময় অনেক নারী সময় নেন।

NewsDetails_03

কেউ কেউ বের হয়েই আসতে পারেন না! মানসিকভাবে এক অদ্ভুত স্থানে বিচরণ করেন তারা। পৃথিবী শুদ্ধ মানুষ বুঝছে অথচ তারা নিজেদের কোন না কোন এক প্রবোধ দিয়ে চলেছেন! আর গোঁড়া সমাজ, দেশে তো নারীর পক্ষে ডিভোর্স নেবার চিন্তা করার আগে হাজারটা বিষয় ভাবতে হয়! অনেক নারীর মা-বাবাও পক্ষে থাকেন না।

এখনও ডিভোর্স একটি চূড়ান্ত নেতিবাচক শব্দ। মার খেয়ে মরে যাওয়া সহ্য হবে, কিন্তু ডিভোর্স শব্দটিও উচ্চারণ করা যাবে না! উচ্চ শিক্ষিত, সামর্থ্যবান, “প্রগতিশীল” পরিবারেও এই শব্দটি অসহনীয়। ডিভোর্স মানেই যেন চরম ব্যর্থতা জীবনে! উচ্চ শিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত নারী যার কোনও কারণ নেই অ্যাবিউসিভ সম্পর্কে থাকার, তিনিও চূড়ান্ত একাকী হয়ে যান ডিভোর্সের কারণে। কারোরই কোন কারণ নেই অ্যাবিউসিভ সম্পর্কে থাকার। কিন্তু যেই নারীর শিক্ষা নেই, কর্ম নেই, কোথাও যাবার জায়গা নেই, কেউ নেই পাশে দাঁড়ানোর তিনি বের হতে পারেন না কেন তা বোধগম্য। কিন্তু ধাক্কা লাগে যখন দেখা যায় উচ্চশিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত নারী পারছেন না। অনেক সময় তাদের এই না পারাটার পেছনে কাজ করে বিষন্নতা। বিষন্নতা একটি রোগ। সময়মতো এর চিকিৎসা জরুরি। এই রোগ মানুষকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে যা স্বাভাবিক অবস্থায় সেই মানুষটি কল্পনাও করতে পারতেন না হয়তো। এই রোগ যেকোনো মানুষের হতে পারে। কেউ কেউ জেনেটিক্যালি ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। কারো কারো আবার কিছু অসুখের সাইড এফেক্ট হিসাবে হতে পারে। কারো কারো কোন ওষুধের সাইড এফেক্ট হিসাবে হতে পারে। আবার জীবন যুদ্ধের বিভিন্ন কারণে হতে পারে।

কেউ যদি নিজে বুঝতে পারেন তিনি বিষন্নতায় ভুগছেন তার অবশ্যই চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। কেউ যদি দেখেন অন্য কেউ ভুগছেন, সেই মানুষটির পাশে দাঁড়ানো ভীষণ জরুরি। এই রোগ থেকে মানুষ আত্মহত্যা করতে পারেন। আপাত সবদিক দিয়ে স্বাভাবিক মানুষও এই রোগে ভুগতে পারেন। এই রোগ নিয়ে মানুষ সবদিক দিয়ে সফলতাও অর্জন করতে পারেন। কোন মানুষ যখন একদিন আত্মহত্যা করে বসেন, তখন অনেকেই এক তরফা সেই মানুষটির এই আচরণ নিয়ে চুলচেরা বিচারে বসে যান! অথচ কেউই হয়ত জানতেন না তিনি একাকী কী এক যুদ্ধ করে যাচ্ছিলেন সবার অজান্তে!

অনেক সময় দেখা যায় নিজের পছন্দে করা প্রেমের বিয়ে টিকছে না। অনেক সময় অনেকে এটাকে চূড়ান্ত ব্যর্থতা হিসেবে দেখেন। অথচ সম্পর্ক কার টিকবে বা টিকবে না তা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। সম্পর্ক না টিকলে এটাকে চূড়ান্ত ব্যর্থতা হিসাবে না দেখে জীবনের একটি বড় ঝড় হিসাবে দেখে অন্যান্য ঝড় যেভাবে মানুষ পাড়ি দেয়, সেভাবে দেখা উচিৎ।

সেজন্য সন্তানদের একটি বয়স থেকে বলতে হবে যে, নিজের জন্য “পারফেক্ট” মানুষ না খুঁজে দেখবে যে, তুমিও সেই মানুষের জন্য “পারফেক্ট” কিনা! তবে দু’জন “পারফেক্ট” মানুষ, দু’জনের জন্যই, একসময় আলাদা হয়ে যেতে পারে। নিজেকে সেভাবে শক্তিশালী করে গড়তে হবে যেন অন্যান্য ঝড়ের মতো এই ঝড়ও পাড়ি দেয়া যায়। এটা শুধু বিয়ে নয়, প্রেমের বেলায়ও। কোন মানুষেরই কারো জন্য, কিছুর জন্য জীবন শেষ হয়ে যায় না। জীবনটা অনেক বড়! আর এটা একটাই!

আরও পড়ুন