যে কারণে বিলম্ব খালেদার লন্ডন সফর

NewsDetails_01

চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন যাচ্ছেন এমন গুঞ্জন এখন সর্বত্র। চলতি মাসেই তার লন্ডন সফরের বিষয়টি নিয়ে জোর গুঞ্জন থাকলেও নানা জটিলতায় আটকে আছে তার বিশেষ এই সফর। তবে প্রয়োজনীয় কাজগুলো শেষ হলেই দ্রুত লন্ডনের উদ্দেশে রওনা করবেন তিনি।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৬ জুলাই আদালতে হাজিরা শেষে লন্ডন সফরের বিষয়টি স্পষ্ট হবে এমন ধারণা করা হলেও ঐ দিন স্ব-শরীরে আদালতে উপস্থিত হননি খালেদা জিয়া। পরে মামলা দুটির পরবর্তী শুনানির জন্য ১৩ জুলাই দিন ধার্য করেছেন আদালত।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের লন্ডন সফরের জন্য প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র ঠিক থাকলেও তার সফরসঙ্গী একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার ও গৃহকর্মী ফাতেমার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এখনো ঠিক না হওয়ায় মূলত লন্ডন সফরের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি।

বাকী দুই সফরসঙ্গীর ভিসাসহ আনুসঙ্গিক কাগজপত্র ঠিক করতে বিএনপির কূটনৈতিক টিম জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এসব প্রক্রিয়া শেষ হলেই দ্রুত তারিখ চূড়ান্ত করে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা করবেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

সূত্র মতে, বিএনপি চেয়ারপারসনের এবারের সফরের কারণ হিসেবে চোখের চিকিৎসার কথা বলা হলেও এই সফরকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন দলের নেতারা। কারণ সফরে আন্তর্জাতিক মহলের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার যোগাযোগ ও বৈঠক হতে পারে। বৈঠকের বিষয়টি নিয়ে অবশ্য গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে।

আসন্ন সফরে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের বাসায় উঠবেন খালেদা জিয়া। সেখানে আগামী নির্বাচনের ধরন কেমন হবে, তখনকার পরিস্থিতিতে বিএনপির অবস্থান কী হবে সে বিষয়ে আলোচনা হবে দুজনের।

NewsDetails_03

তাছাড়া সহায়ক সরকারের চূড়ান্ত রূপরেখা সঙ্গে করেই নিয়ে যাবেন তিনি। এতে কোনো ধরনের সংযোজন বিয়োজন করতে হলে সে বিষয়েও পরামর্শ করবেন তারেক রহমানের সঙ্গে। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকে সহায়ক সরকার মানা না হলে পরবর্তী করণীয়, আন্দোলনে যেতেই হলে তার ধরন ও প্রক্রিয়া, নির্বাচন নিয়ে পর্যবেক্ষক ও আন্তর্জাতিক মহলের মনোভাব ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে দলের এ দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে।

এ ছাড়াও তাদের আলোচনায় স্থান পাবে দলের কিছু সাংগঠনিক বিষয়। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে স্থায়ী কমিটির তিনটি ফাঁকা পদে কাদের নিয়োগ দেয়া যায় সেই বিষয়ে ছেলের সঙ্গে আলোচনা করে তিনটি নাম চূড়ান্ত করেই ফিরবেন তিনি। তাছাড়া দীর্ঘদিন দলে জিইয়ে রাখা অভ্যন্তরীণ কোন্দলের স্থায়ী সুরাহার পথ খুঁজবেন বিএনপির নেত্রী। জামাতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়সহ জোটে যোগ-বিয়োগ নিয়ে তারেকের সঙ্গে পরামর্শ করবেন খালেদা। ফিরে এসে পরিকল্পিত সব সিদ্ধান্তের বিষয়ে পরামর্শ নেবেন বিশেষজ্ঞদেরও।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, নিয়মিত চিকিৎসার অংশ হিসেবে দলীয় প্রধান লন্ডন সফরে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও আয়োজন চলছে। যাওয়ার আগে দল সুসংগঠিত করতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তিনি জোর দিয়েছেন। দলীয় সাংগঠনিক কাজ সমাপ্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন, সেসব কাজ এগিয়ে চলছে।

খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, ম্যাডাম অতি শিগগিরই লন্ডনে যাচ্ছেন, তবে দিনক্ষণের বিষয়ে এখনো কিছু ঠিক হয়নি বলেই আমার জানা।

চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেলেও এ সফরের রাজনৈতিক গুরুত্ব থাকছে স্বীকার করে তিনি বলেন, লন্ডনে অনেকদিন পরে দলের দুই শীর্ষ নেতৃত্বের সাক্ষাৎ হবে, দলের অনেক গুরুরত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে- এটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া কূটনৈতিকভাবেও এ সফর দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি চোখ ও বাতের চিকিৎসা নেন। দুই মাসের বেশি সময় লন্ডনে অবস্থান শেষে গত বছরের ২১ নভেম্বর দেশে ফেরেন। লন্ডনে পারিবারিক পরিমণ্ডলে সময় কাটানোর পাশাপাশি বিএনপির আয়োজনে দুটি অনুষ্ঠানেও অংশ নিয়েছিলেন খালেদা জিয়া।

আরও পড়ুন