খাগড়াছড়িতে ঘুষ দ্বন্দ্বে ঝুলে আছে শিক্ষক নিয়োগ !

NewsDetails_01

খাগড়াছড়িতে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নেতাদের নিয়োগ বাণিজ্য, কোটা ও নিয়োগ কমিটির দুই সদস্য হত্যা মামলার আসামী হওয়ায় দীর্ঘ দুই বছর ধরে ঝুলে আছে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া।
পার্বত্য জেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রণাধীন বিদ্যালয় গুলোতে সৃজনকৃত ও শুন্যপদে শিক্ষক নিয়োগে ২০১৫ সালে ৩৫৮ জন শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক কোটা, সম্প্রদায় ভিত্তিক কোটা ও নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা ভাগ ভাটোয়ারার দ্বন্দ্বে এতো দিন ঝুলে ছিল নিয়োগ প্রক্রিয়া। তন্মধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে নিয়োগ কমিটির দুই সদস্য হত্যা মামলার আসামী হওয়ায়। এতে করে দুইবার লিখিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করে তা বাতিল করেছে জেলা পরিষদ। বারবার সময় পেছানোর কারণে সরকারি চাকুরীর বয়স সীমা শেষ হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন অনেক চাকুরী প্রত্যাশি।
দলীয় ও পার্বত্য জেলা পরিষদের একাধিক সূত্রে জানা যায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরীর আওয়ামীলীগ সমর্থিত সংসদ সদস্যের মনোনয়ন পাওয়ার গুঞ্জন চলছে জেলা জুঁড়ে। এতে করে বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার সাথে চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক দূরত্ব তৈরী হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে গঠিত ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির দুই সদস্য (জেলা পরিষদ সদস্য খোকনেশ্বর ত্রিপুরা ও মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু) গত ১১ মে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের নুনছড়ি এলাকায় পিতা পুত্র হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী। খোকনেশ্বর ত্রিপুরা হত্যাকান্ডের পর থেকেই পলাতক রয়েছেন। এতে করে নিয়োগ সম্পূর্ণ করতে প্রস্তুতিমূলক সভা করতে পারছেনা কমিটি। পাশাপাশি রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ প্রত্যাশীদের কোটা নির্ধারণ, আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের কোটা, সম্প্রদায় ভিত্তিক কোটা(বাঙালী, চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা) নির্ধারণে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর বিভিন্ন নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা চাকুরী দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা গ্রহণ করেছে। এসব জটিলতা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ থাকায় পরিষদ দু’বার লিখিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করেও বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে।
জেলার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনস্থ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর জন্য ৩৫৮টি পদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। যার অনুকূলে প্রায় ৩ হাজার ৫ শত আবেদন জমা পড়ে। কিন্তু ২০১৩ সালে প্রকাশিত ৭৮টি পদে নিয়োগের বিষয়ে আইনী জটিলতার সৃষ্টি হওয়ায় তা স্থগিত হয়ে পড়ে। গতবছরের নভেম্বরে জটিলতা শেষ করে ৭৮ জন শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হওয়ার পর ২০১৫ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম শুরু করে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করতে দু’বার তারিখ নির্ধারণ করেও অনিবার্য কারণ দেখিয়ে তা স্থগিত করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের প্রার্থী আরিফুল ইসলাম জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে এক নেতার মাধ্যমে সাত লক্ষ টাকায় চাকুরী নেয়ার কথা ঠিক হয়। চাকুরী পাওয়ার নিশ্চিয়তা থাকায় অন্য কোথাও আবেদনও করিনি। এখন সরকারি চাকুরী করার বয়স সীমা শেষ পর্যায়ে।
মাটিরাঙার মো: নুরুজ্জামান জানান, প্রবেশ পত্র হাতে পাওয়ার পর মাটিরাঙা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এক নেতার হাতে জমি বিক্রি করে আট লক্ষ টাকা তুলে দিই। এখন চাকুরীও হচ্ছে না আর টাকাও ফেরত পাচ্ছি না।
খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন ফিরোজ জানান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে হওয়া প্রতিটি নিয়োগে রমরমা ঘুষ বাণিজ্য চলে। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে অনেক প্রার্থীর কাছ থেকে আট-নয় লক্ষ টাকা করে ঘুষ নেয়া হয়েছে বলে শুনেছি। টাকা দেয়ার পরও অনেক চাকুরী পাচ্ছেনা। অনেকের চাকুরীর বয়স সীমা চলে যাচ্ছে। এতে করে আওয়ামীলীগ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। দ্রুত লিখিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চান তিনি।
শিক্ষক নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন জানান, জেলায় ৪ শতাধিকের মতো শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে। এতে করে শিক্ষার মান খুব নাজুক। জেলা পরিষদে প্রাথমিক শিক্ষা ন্যস্ত হওয়ায় শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াটি তাদের হাতেই। পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে কথা বললে তা জানতে পারবেন।
শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বার বার স্থগিত হওয়ার কারণ সর্ম্পকে জানতে খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
কোটা ও আর্থিক লেনদেনের কথা অস্বীকার করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে লিখিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হবে। প্রাথমিক শিক্ষার মান্নোনয়নে জেলা পরিষদ কাজ করছে।

আরও পড়ুন