খাগড়াছড়ি সংসদীয় আসন : জাতীয় দলের মাথা ব্যাথা আঞ্চলিক দল

NewsDetails_01

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে পাহাড়ের রাজনীতি তত জটিল হচ্ছে। নির্বাচনী কৌশল ঘিরে মাঠে তৎপর জাতীয় ও আঞ্চলিক সংগঠনগুলো। আগামী নির্বাচনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খাগড়াছড়ি (২৯৮নং) আসনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মাথা ব্যাথা আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)। বিগত কয়েক মাসে পাহাড়ের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির নৈপথ্যে জাতীয় নির্বাচনের সমীকরণ রয়েছে বলে মনে করেন রাজনীতিবীদরা।
পাহাড়ের রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারের জেরে ইউপিডিএফ গতবছর থেকে কোণঠাসা অবস্থায় থাকলেও বিভিন্ন ইস্যুতে রাজপথে রয়েছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত ইউপিডিএফ এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারলে নির্বাচনে ফ্যাক্টর হবে। যেটি আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মতো বড় দুই দলের জন্য অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন অনেকে। এমতাবস্থায় রাজনৈতিক গ্রুপিংয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। অন্যদিকে, ঝিমিয়ে পড়া ও দুসময়ে দলের সাথে থাকা নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে নির্বাচনের বছরে অঙ্গসংগঠনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেছে বিএনপি। শুন্যস্থান পূরণে নানা নির্বাচনী কৌশল নিয়ে মাঠপর্যায়ে সক্রিয় পাহাড়ের অনিবন্ধিত আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ। ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ইউপিডিএফ প্রার্থী দিয়ে জয় পেলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হচ্ছে ২০০১ সাল থেকে।
জেলা নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, ৯ উপজেলা নিয়ে খাগড়াছড়ি একটি সংসদীয় আসন(২৯৮নং)। মোট ভোটার সংখ্যা ৪লক্ষ ৪১হাজার ৬৮ জন। গত সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল ৩লক্ষ ৮১হাজার ৫শ ১৬ জন। এবার ভোটার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৬০হাজার। যার অধিকাংশই তরুণ প্রজন্মের।

►একাধিক প্রার্থী ও কোন্দলে জর্জরিত আওয়ামীলীগ:
২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনে প্রার্থী দেয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট কোন্দলে জর্জরিত খাগড়াছড়ি আওয়ামীলীগ। সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এবং সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য জাহেদুল আলমের অনুসারীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে রাজনীতি করছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে একাধিক প্রভাবশালী নেতা দৌঁড়ঝাপ করায় নতুন করে কোন্দলের আশঙ্কা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ নির্বাচনে সুযোগ পেতে শীর্ষ পর্যায়ে অনেকে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন। এদের মধ্যে বর্তমান সাংসদ ও জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সহ-সভাপতি কংজরী চৌধুরী এবং সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরার নাম গুঞ্জনে আছে।
প্রার্থীতার ব্যাপারে যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, ২০০৮ সালে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা আমাকে ভরসা করে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আশানুরূপ ভোটে জয়ী হওয়ার পর তিনি আমাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কাজ করার সুযোগও দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৪ সালে আমি অসুস্থতার কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। আশা করছি আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী আমাকে আবারও নৌকা প্রতীক দিয়ে জনগণের সেবা করার সুযোগ দিবেন।
বর্তমান সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা পাহাড়বার্তাকে বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে কে প্রার্থী হবেন সেটি কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। নেত্রী যাকে নৌকা প্রতীক দিবেন তার পক্ষে আমি ও আমার নেতৃত্বাধীন খাগড়াছড়ি আওয়ামীলীগ কাজ করবে।

►মামলার রায় বাধা হতে পারে বিএনপির:
২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খাগড়াছড়িতে বিএনপি সমর্থিত তৎকালীন সাংসদ ওয়াদুদ ভূইয়া ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চালালেও আগামী সংসদ নির্বাচনে তার প্রার্থী হওয়া নিয়ে শঙ্কা আছে। ১/১১ সরকারের দায়ের করা দুর্নীতি মামলার আপীলের রায়ের উপর নির্ভর করছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার প্রার্থী হওয়া না হওয়া। এছাড়া খাগড়াছড়ি আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য সমীরণ দেওয়ান ও খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মণীন্দ্র লাল ত্রিপুরার নাম গুঞ্জনে রয়েছে।
তবে নির্বাচন থেকে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি মূখ্য দাবি করে জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়া পাহাড়বার্তাকে বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি হলে কেন্দ্র যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত দেয় তাহলে আমরা নির্বাচনে যাব, প্রার্থী কে হচ্ছেন সেটি সময় বলে দিবে।

NewsDetails_03

►জাতীয় পার্টিতে “অতিথি পাখি”:
২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও যদি আওয়ামীলীগ জোটগত প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে খাগড়াছড়ি আসনে জাতীয় পার্টির পক্ষে “অতিথি পাখি” প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক সোলাইমান আলম শেঠ খাগড়াছড়ি আসনে এবারও প্রার্থী হবেন।
জাতীয় পার্টি খাগড়াছড়ি আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার খোরশেদ আলম পাহাড়বার্তাকে বলেন, এরশাদ ক্ষমতা থাকাকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিপুল ভোটে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়ী হবেন।

►ইউপিডিএফ’র একক প্রার্থী চূড়ান্ত:
পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর মধ্যে বিপুল জনসমর্থনপুষ্ট সংগঠন ইউপিডিএফ। প্রতিবারের ন্যায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দলীয় প্রধান প্রসীত বিকাশ খীসার নাম প্রস্তাবিত হয়ে আছে বলে সংগঠনটির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ইউপিডিএফ সমর্থিত গণতান্ত্রিক যুবফোরামের সভাপতি অংগ্য মারমা পাহাড়বার্তাকে বলেন, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে ইউপিডিএফর প্রার্থী জয়ী হয়ে সংসদে যেতে পারবে। ইউপিডিএফকে নির্বাচনী মাঠে নিষ্ক্রিয় করতে সরকার পাহাড়ে নব্য মুখোশ বাহিনী সৃষ্টি করে খুনাখুনী শুরু করেছে।

►জাতীয় ও আঞ্চলিক দলের আরও প্রার্থী:
আওয়ামীলীগ ও বিএনপি ছাড়াও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল(বাসদ), ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, জাসদ(ইনু) এর পক্ষ থেকে দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করবে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এমএন লারমা গ্রæপ ও নাগরিক কমিটির ব্যানারে আঞ্চলিক সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রার্থী দেয়া হবে।

আরও পড়ুন