আদিবাসী শিশুদের নিজস্ব মাতৃভাষায় প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিবন্ধকতার মুখে

NewsDetails_01

আদিবাসী শিশুদের নিজস্ব মাতৃভাষায় পাঠদান
পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের বহুল প্রতিক্ষিত নিজস্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চলতি বছরে প্রাক প্রাথমিক শ্রেণীতে চালু হলেও নানা সঙ্কটে তা প্রতিবন্ধকতার মুখে। সম্প্রদায় ভিত্তিক শিক্ষক, প্রশিক্ষণ ও পাঠদানের জন্য পৃথক শ্রেণীকক্ষ না থাকায় সরকারের ইতিবাচক এ উদ্যোগটি শুরুতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তবে সরকার সমস্যা উত্তরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, চলতি শিক্ষা বর্ষে খাগড়াছড়ির ৫৯২ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকমা সম্প্রদায়ের ৩৭৯৫ জন, মারমা সম্প্রদায়ের ১৭৯০ জন ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ১৫৫২ জন শিক্ষার্থীদের জন্য বই, খাতা, বর্ণমালা পরিচিতিসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়েছে।
বিভিন্ন বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, সম্প্রদায় ভিত্তিক শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য প্রাক প্রাথমিক শ্রেণীতে পৃথক ক্লাস রুমের ব্যবস্থা না থাকায় একজন শিক্ষক দিয়ে একটি কক্ষেই তিন সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। অন্যদিকে এবিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ না থাকায় বছর শেষে কাক্সিক্ষত শিক্ষার মান অর্জন নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। তবে যেসব বিদ্যালয়ে এক সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী রয়েছে সেসব বিদ্যালয়ে এ উদ্যোগ ইতিবাচক সাফল্য বয়ে আনবে বলে আশা শিক্ষকদের।
খাগড়াছড়ি সদরের মহালছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শর্মিষ্ঠা ত্রিপুরা জানান, ত্রিপুরা হয়েও “ককবরক” বর্ণমালা পরিচিতি না থাকায় শ্রেণীকক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে পারি না।
আপ্রæমা মার্মা নামে আরেক শিক্ষক জানান, পাহাড়ী জনগোষ্ঠীদের নিজস্ব মাতৃভাষা যেন বিলুপ্ত না হওয়ায় তার জন্য সরকারের এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কিন্তু প্রশিক্ষণ না থাকায় অনেক শিক্ষকই নিজ মাতৃভাষায় পাঠদান করাতে পাচ্ছে না। অন্যান্য শ্রেণীতে এ কার্যক্রম উন্নীত করার আগে সঙ্কট উত্তরণে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষক পদায়ন প্রয়োজন।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াছমিন জানান, মাতৃভাষায় পাঠদানে সক্ষমতা সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মন্ত্রণালয়কে অবগত করা হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে ৩০ জন প্রশিক্ষকও নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার পর প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মাতৃভাষার লেখক প্যানেলের সদস্য মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা জানান, এনসিটিবি’র সাথে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সমন্বয়হীনতার কারণে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হচ্ছে না।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী জানান, প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষক সঙ্কট দূর করতে ২৬১ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। সরকার পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণীতে মাতৃভাষার শিক্ষা কার্যক্রম উন্নীত করবে।
দীর্ঘদিন ধরে স্ব স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চালুর দাবি জানিয়ে আসছিল বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা। এর ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্যক্রম বোর্ড মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের জন্য বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লেখকদের সমন্বয়ে স্টাডিং কমিটি গঠন করে। লেখক প্যানেলদের প্রণীত পাঠ্যপুস্তকে চলতি শিক্ষাবর্ষে পাঁচ সম্প্রদায়ের নিজ মাতৃভাষায় পাঠ্য বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়।

আরও পড়ুন