সাজেকের খাদ্য সংকট দূর করতে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের ৭০ কোটি টাকার প্রকল্প

NewsDetails_01

রাঙামাটির দূর্গম সাজেক ইউনিয়ন
পাহাড়ের দূর্গম এলাকার তীব্র খাদ্য সংকট দূর করতে ৭০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহন করছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার ৫টি উপজেলার দূর্গম এলাকাগুলোতে বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে জুমিয়া পরিবারগুলোতে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেয়। খারাপ আবহাওয়ায় জুমের ফলন ভাল না হওয়া, ইঁদুর বন্যা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ হ্রাসের কারনে আদিবাসীদের আয় কম হওয়ার কারনে দূর্গম এলাকার অধিকাংশ গ্রামে এই অভাব দেখা দেয়। আর এই সংকট দূর করতে নতুন প্রকল্প গ্রহন করছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র পাহাড়বার্তাকে জানায়,পার্বত্য জেলায় পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের মিশ্র ফল চাষ প্রকল্পের মাধ্যমে দারিদ্র দূরী করণের প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে বাস্তবায়িত হয়ে আসলেও, চলতি বছর সাজেকে তীব্র খাদ্য সংকটের কারনে রাঙামাটির জন্য ৭০ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প গ্রহন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ফল ফলাদি উৎপাদনের মাধ্যমে সাজেকের আধিবাসীদের দারিদ্র দূরীকরন,কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা, নারীদের কৃষিকাজে অধিকতর সম্পৃত্তকরন,সর্বপোরি জীবনমান উন্নয়ন করা।
সাজেক ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ডহিন্দ্র লাল ত্রিপুরা পাহাড়বার্তাকে বলেন, সংকট দূর করতে মিশ্র ফল বাগানের প্রকল্প ভালো উদ্দ্যেগ, তবে এর সাথে যদি গবাদিপশু পালনের প্রকল্প গ্রহন করলে আরো ভালো হতো।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জুম চাষ, বাঁশ ও বনজ সম্পদ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে দূর্গম এলাকার আদিবাসীরা। অধিকাংশ গ্রামে এখনও পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। গ্রামগুলো এতোই দূর্গম যে, গ্রামগুলো থেকে হাঁটা পথে বাজার আসতে তাদের সময় লাগে ৩ থেকে ৪দিন। আর এসব এলাকায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের উপরও জোর দেওয়া হচ্ছে।
সাজেকের গ্রামগুলো থেকে ভারতের মিজোরাম বাজার ও থানচির বড়মদক থেকে মিয়ানমার কাছে হলেও নিরাপত্তা বলয়ের কারনে তারা সেখান থেকে পণ্য ক্রয় করতে পারেনা। ফলে সাজেকের মাচালং বাজার থেকে ও থানচি বাজার থেকে কোন পণ্য ক্রয় করে এসব গ্রামে নেয়া পর্যন্ত খরচ পড়ে চারগুণ। আর্থিক অসঙ্গতির কারনে এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ খাদ্য ক্রয় করতে না পারার কারনে তীব্র খাদ্য সংকটে ভোগে তারা।
সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা পাহাড়বার্তাকে বলেন, সাজেকের ১হাজার পরিবারকে মিশ্র ফলবাগান এবং অন্যদের জন্য পশু পালনের জন্য ভেড়া ও গরু দেওয়া হবে বলে শুনেছি।
আরো জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে সাজেকের পুরান জোপুই, নতুন জোপুই, উদলছড়ি, পুরান থাঙনঙ, নতুন থাঙনঙ থারুম পাড়াসহ ২০টির মতো গ্রামের মানুষ আর্থিক অভাবের কারণে চাল কিনতে পারেনি, এসব গ্রামে প্রতি কেজি চাল বিক্রি হয়েছে ৯০-১১০টাকা। খাদ্য সংকটের কারনে তারা কলা গাছের আলেয়া, পাহাড়ী আলু ও লতাপাতা খেয়ে জীবনধারণ করে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ত্রিদিব কান্তি দাশ পাহাড়বার্তাকে জানান,সাজেকে উৎপাদন মুখী প্রকল্প গ্রহনের পাশাপাশি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে এই সংকট থাকবেনা, আর এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে রাঙামাটি জেলা পরিষদ।
স্থানীয়দের তথ্য মতে, সাজেক ও থানচির এসব এলাকার ৯৫ শতাংশ মানুষ জুমচাষী, জুম ফলন ভাল না হওয়ায় খাদ্য সংকটে পড়ে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পরিবার। গত বছরের মে মাসে থানচির রেমাক্রি, তিন্দু, ছোট মদক, বড় মদক ও সাঙ্গু রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দেয়। পরে সরকার ১৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়ে ত্রান তৎপরতা চালালে সংকট নিরসন হয় এবং চলতি বছর সাজেকে ফের খাদ্য সংকট দেখা দিলে পাহাড় থেকে এই সংকট চিরতরে দূর করতে পাহাড়ে মিশ্র ফল চাষ প্রকল্পের পরিধি বাড়াতে তৎপর হয় পার্বত্য মন্ত্রণালয়।
পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের সচিব নব কিশোর বিক্রম ত্রিপুরা স্বাক্ষরিত এক পত্রে জানা যায়, সাজেকের ৬০ হাজার জনসংখ্যার অধিকাংশ দূর্গম এলাকায় খাদ্যভাবে জীবনযাপন করে, আর এই খাদ্যাভাব নিরসনের জন্য এই প্রকল্প গ্রহন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে রাঙামাটি জেলা পরিষদ।
এই ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির এপিএস সাদেক হোসেন চৌধুরী বলেন, সাজেকের স্থানীয়দের জীবনমান উন্নয়নে সরকার দীর্ঘ মেয়াদি ৭০ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প গ্রহন করছে।

আরও পড়ুন