রাঙামাটির সাজেকে ফের খাদ্য সংকট

NewsDetails_01

রাঙামাটির দূর্গম সাজেক ইউনিয়ন
রাঙামাটির দূর্গম সাজেক ইউনিয়নে জুমিয়া পরিবার গুলোতে গত ৩মাস ধরে তীব্র খাদ্য সংকট চলছে। খারাপ আবহাওয়ায় জুমের ফলন ভাল না হওয়া এবং প্রাকৃতিক সম্পদ হ্রাসের কারনে আদিবাসীদের আয় কম হওয়ার কারনে সাজেকের ১৫-২০টি দূর্গম গ্রামে অভাব দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জুম চাষ, বাঁশ ও বনজ সম্পদ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে সাজেকের আদিবাসীরা। অধিকাংশ গ্রামে এখনও পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। গ্রামগুলো এতোই দূর্গম যে, গ্রামগুলো থেকে হাঁটা পথে মাচালং বাজার আসতে তাদের সময় লাগে ৩ থেকে ৪দিন।
সাজেকের উদলছড়ি গ্রামের হৃদয় রঞ্জন ত্রিপুরা পাহাড়বার্তাকে জানান, পাহাড়ে জুম চাষ ও বনজ সম্পদ আহরণ করে আমরা জীবিকা চালায় কিন্তু জুম চাষে ফসল কম উৎপাদন হওয়ার কারণে কজতলী গ্রামসহ অনেক গ্রামে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
গ্রামগুলো থেকে ভারতের মিজোরাম বাজার কাছে হলে নিরাপত্তা বলয়ের কারনে তারা সেখান থেকে পণ্য ক্রয় করতে পারেনা। ফলে মাচালং বাজার থেকে কোন পণ্য ক্রয় করে এসব গ্রামে নেয়া পর্যন্ত খরচ পড়ে চারগুণ। আর্থিক অসঙ্গতির কারনে সাজেকের অধিকাংশ গ্রামের মানুষ খাদ্য ক্রয় করতে না পারার কারনে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মিজোরাম-সাজেক সীমান্তে যদি সীমান্ত হাট চালু হলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে মনে করছে অনেকে।
সাজেক ইউপি’র ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার ডহিন্দ্র লাল ত্রিপুরা জানান, বাসায় খাবার না থাকায় অনেকে ভাতের অভাবে জংলি আলু, মিষ্টি কুমড়া, আলেয়া (কলা গাছের কাণ্ডের নরম অংশ) খেয়ে ক্ষুধা মেটালেও বেশির ভাগ মানুষ রয়েছেন অনাহারে।
সাজেকের পুরান জোপুই, নতুন জোপুই, উদলছড়ি, পুরান থাঙনঙ, নতুন থাঙনঙ থারুম পাড়াসহ ২০টির মতো গ্রামের মানুষ আর্থিক অভাবের কারণে চাল কিনতে পারছেনা। এসব গ্রামে প্রতি কেজি চাল বিক্রী হচ্ছে ৯০-১১০টাকা। জরুরী ভিত্তিতে যদি দূর্গত এলাকায় ত্রাণ সরবরাহ করা না যায় তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার সুশীলা চাকমা পাহাড়বার্তাকে বলেন, প্রতিবছর সাজেকের দূর্গম গ্রামগুলোতে খাদ্য সংকট দেখা দেয়, এ সংকটে সবচেয়ে বেশী ভুগছে নারী ও শিশুরা। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহন করা উচিত।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য মতে, সাজেকের এসব এলাকার ৯৫ শতাংশ মানুষ জুমচাষে নির্ভরশীল সুতরাং জুমধান ভাল না হওয়ায় খাদ্য সংকটে পড়েছে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পরিবার।
রাঙামাটির দূর্গম সাজেক ইউনিয়নে জুমিয়া পরিবার গুলোতে দেওয়া হচ্ছে ত্রাণ
বাঘাইহাট বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: জুয়েল জানান, বাঘাইহাট ও মাচালং বাজারে পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক কিন্তু সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকার কারণে মাচালং বাজার থেকে ব্যাটলিং কিংবা অন্যান্য বাজারে পণ্য নিয়ে যেতে খরচ পড়ে ক্রয়মূল্যের ৩-৪ গুণ। যার কারণে সেসব ব্যবসায়ীরা বেশী দামে পণ্য বিক্রী করছেন।
ইতোপূর্বে ২০১২ সালে রাঙামাটির সাজেক, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি উপজেলা, বান্দরবানের থানচি, রুমায় খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এসময় ছয় মাসের জন্য সাড়ে ছয় হাজার পরিবারকে একটি প্যাকেজের আওতায় খাদ্য সাহায্য দেয়া হয়। প্রতি মাসে পরিবার প্রতি ৫০ কেজি চাল, নগদ ১২শ’ টাকা, ৩ লিটার ভোজ্য তেল, গর্ভবতী মায়েদের জন্য ৬ কেজি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য, জুমের বীজ কেনার জন্য এককালীন পরিবার প্রতি দুই হাজার টাকা দেওয়া হয়।
সাজেক ইউপি’র চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা জানান, খাদ্য সংকটের কথা শুনে গত ২১ এপ্রিল দূর্গত এলাকার ৪১০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। জরুরী ভিত্তিতে দূর্গত এলাকার জন্য ৬শ মেট্টিক টন ত্রাণ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে এবং সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সাজেকে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
আরো জানা গেছে, গত বছরের মে মাসে বান্দরবানের থানচির দুর্গম রেমাক্রি, তিন্দু, ছোট মদক, বড় মদক ও সাঙ্গু রিজার্ভ ফরেস্ট; মূলত এসব এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দেয়। পরে সরকার দুর্গত এলাকার ৮শ’ পরিবারের বিপরীতে ১৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দ্রুত ত্রান তৎপরতা চালালে সংকট নিরসন হয়।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক(ভারপ্রাপ্ত) প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন, দূর্গত এলাকায় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মাধ্যমে ৫ মেট্টিক টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়েছে। ইউএনও’কে তালিকা তৈরী করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে সাজেকের খাদ্য সংকট নিরসনে বৃহস্পতিবার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রাথমিক পর্যায়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুকুলে ১০ মেট্রিকটন খাদ্যশষ্য বরাদ্ধ প্রদান করেছে, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আরো বরাদ্ধ দেওয়া হবে।
এই ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি পাহাড়বার্তাকে বলেন, রাঙামাটির সাজেকের সাময়িক সংকট মোকাবেলায় সার্বিক প্রস্তুতি আছে, প্রয়োজনে আরো খাদ্যশষ্য বরাদ্ধ দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন