খালেদা জিয়াকে ডে-কেয়ার সেন্টারে স্থানান্তর

NewsDetails_01

দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ডে-কেয়ার সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়েছে।

শনিবার রাতে খালেদা জিয়াকে কারাগারের নারী সেলের দোতলায় অবস্থিত ওই কক্ষে নেওয়া হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রায়ের পর তাকে কারাগারে নেওয়া হলে প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় একজন কারা কর্মকর্তার কক্ষে রাখা হয়েছিল।

খালেদা জিয়াকে স্থানান্তরের বিষয়ে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি-প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘তাকে আরও একটু ভালো জায়গায় রাখা হয়েছে। এর আগে কারা অফিসের পাশে একটি কক্ষে তাকে রাখা হয়েছিল। সেখানে লোকজনের আনাগোনা ছিল। এতে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রাইভেসি নষ্ট হতে পারে, সে চিন্তা করে তাকে দোতলায় ডে-কেয়ার সেন্টারের একটি কক্ষে স্থানান্তর করা হয়েছে।’

কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, কারাবিধি অনুযায়ী খালেদা জিয়া কারাগারে সাধারণ কয়েদি হিসেবে রয়েছেন। তবে তার মর্যাদা ও বয়স বিবেচনায় কারা কর্তৃপক্ষ তাকে বিশেষ কিছু সুবিধা দিচ্ছে।

বিএনপির আইনজীবীদের দাবি, তাদের নেত্রীকে কারাগারে স্যাঁতস্যাতে-নোংরা পরিবেশে রাখা হয়েছে, প্রায় অখাদ্য খাবার দেওয়া হচ্ছে—এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইজি প্রিজন্স বলেন, ‘বিএনপির আইনজীবীরা যা বলেছেন সেটা সঠিক নয়। খালেদা জিয়ার ডিভিশনের বিষয়ে আদালতের কোনো নির্দেশনা ছিল না। এজন্য তিনি একজন সাধারণ কয়েদি। তবে মর্যাদা ও বয়স বিবেচনায় কারা কর্তৃপক্ষ তাকে কিছু বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। এখন তাকে যে কক্ষে রাখা হয়েছে সেখানে সংযুক্ত বাথরুম রয়েছে, হাই কমোড রয়েছে। তাকে থাকতে খাট ও বালিশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সবচেয়ে ভালো ভবনে, মানসম্পন্ন ভবনে রাখা হয়েছে। এগুলো সাধারণ কয়েদির জন্য নেই।’

NewsDetails_03

রোববারই আদালত খালেদা জিয়াকে প্রথম শ্রেণির (ডিভিশন) বন্দির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে কারাবিধি অনুযাযী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার জানান, এটি (আদেশ) তিনি এখনও হাতে পাননি। তা পেলে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা ডিভিশন পেতে ২০০৬ সালের জেল কোডের ৬১৭ ধারার (৭) (১)-এর কথা বলেছেন। কিন্তু ওই ধারার ১ থেকে ১৭ পর্যন্ত ডিভিশনের বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কথা বলা নেই। সাবেক রাষ্ট্রপতির কথা বলা আছে। সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে—এমন রাজনৈতিক দলের প্রধানের কথা বলা আছে।’

কারাগারে একজন সাজাপ্রাপ্ত বন্দিকে কয়েদির বিশেষ পোশাক পরানো হয়, সেটা খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও হয়েছে কি-না জানতে চাইলে কারা প্রধান বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ীই সবকিছু করার কথা।’

কারা অধিদপ্তরের অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কারাগারে ব্যক্তিগত সেবিকা বা গৃহপরিচারিকা রাখার সুযোগ নেই। তবে পুরোনো কারাগারে আর কোনো বন্দি না থাকায় খালেদা জিয়ার নির্জনতা কাটাতে তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক চারজন নারী কারারক্ষী ও একজন ডিপ্লোমা নার্স রয়েছেন। তিনি সকালের নাস্তা হিসেবে বেলা ১১টার দিকে রুটি ও সবজি খাচ্ছেন। কিন্তু দুই বেলার বেশি খাওয়া-দাওয়া করেন না। বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সামান্য খাবার নেন। রাত ১১টার দিকে তার পছন্দ অনুযায়ী ভাত ও মাছ হিসেবে রাতের খাবার খাচ্ছেন।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জন্য সব সময়ে একজন চিকিৎসক প্রস্তুত রয়েছেন। রোববারও তার স্বাস্থ্যের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি বলেছেন, ভালো আছেন। চিকিৎসক প্রয়োজন হলে তিনি জানাবেন বলে কারা কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।’

কারাগারের অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কারাগারে আসার পর থেকেই খালেদা জিয়া শান্ত রয়েছেন। তাকে কিছু বললে তিনি তা বুঝেন এবং তা মানার চেষ্টা করেন। কারা কর্মীদের সহায়তা করেন। তাকে একটি টেলিভিশন দেওয়া হলেও তিনি তা দেখতে চাননি। সেজন্য রোববার সেটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন