লামায় ২২ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ : ধ্বস আতঙ্কে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী

NewsDetails_01

বান্দরবানের লামা উপজেলার ২২টি সরকারী ও বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এসব বিদ্যালয় ভবনেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে। যে কোনো সময় এসব ভবন ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, লামায় ৮৫টি সরকারি ও ৪টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন পুরানো এবং খুবই জরাজীর্ন। তাই এসব ভবনগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমানে এ বিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত।
দরদরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি শীতা রঞ্জন বড়ুয়া বলেন, বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণের করুণ চিত্রের বিষয়টি শিক্ষা অফিসে অসংখ্যবার জানানো হয়েছে কিন্তু কোন কাজ হচ্ছেনা।
লামার ঝুঁকিপূর্ণ সরকারী বিদ্যালয় ভবনগুলো হলো, রোয়াজা পাড়া, রাজবাড়ি, ত্রিডেবা, ইয়াংছামুখ, দরদরী, দরদরী পাড়া, ফাইতং নয়াপাড়া, বটতলী পাড়া, ২নং চাম্বি, ফাঁসিয়াখালী হেডম্যান পাড়া, ঠান্ডাঝিরি, ৩নং রিপুজিপাড়া, ফাঁসিয়াখালী শহীদ জিয়া, লেমুপালং, কলিঙ্গাবিল, লামা আদর্শ, শিলেরতুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও জোড়মনি পাড়া, কম্পনিয়া পাড়া, আন্ধারী জামালপুর, ডান ও বামহাতির ছাড়া সরকারী প্রাথমিক এবং নুনারঝিরি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ।
রাজবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পৌরসভার সবচেয়ে জরাজীর্ণ স্কুল বলে জানান সহকারী শিক্ষক জাহেদুল ইসলাম খোকা। শুধু এসব বিদ্যালয়ই নয়, অন্য সব বিদ্যালয়েও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
সূত্র আরো জানায়, কিছু বিদ্যালয় ভবন পাকিস্তান আমলে, আবার কিছু ১৯৮০ থেকে ১৯৯৭ইং সালের মধ্যে বিভিন্ন সংস্থা নির্মাণ করে। নির্মাণ কাজে নিম্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার ও যথাযথ সংস্কার না করার কারণে ভবনগুলোও এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভবন ধ্বস আতংকে আগের তুলনায় বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র ছাত্রী উপস্থিতির হারও কমে গেছে বলে জানান শিক্ষকরা। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা একাধিকবার প্রেরণ করার পরও অজ্ঞাত কারণে নতুন ভবন নির্মাণের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
রোয়াজা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান জানান, গত কয়েক বছর ধরে ভবনের ঝুঁকিপূর্ণের বিষয়টি শিক্ষা অফিসে বার বার জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সরই ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি জোড়মনি পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ছাদের বিম, পিলার ও দেওয়ালে ছোট বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ঝরে পড়ছে ছাদ, পিলার ও দেওয়ালের অংশ বিশেষ। দরজা-জানালা মরিচা ধরে ভেঙে গেছে। নেই শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেট। অথচ বিদ্যালয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসের ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় নেই।
জোড়মনি পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহেনা বেগম বলেন, ১৯৯৭ সালে ৩ কক্ষ বিশিষ্ট বিদ্যালয়টি ভবনটি নির্মান করা হয়। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজে নিম্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যাবহার করার কারনে অল্প দিনেই ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পড়ে। তিনি আরও বলেন, পানি পড়ার কারনে বর্ষায় পাঠদান করা যায়না।
অভিবাবকরা বলেন, ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়। তাই অনেক সময় বিদ্যালয়ে যেতে মানা করি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দ্রুত বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের জোর দাবীও জানান তারা।
এদিকে রাজবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাবেয়া বেগম জানায়, কিছুদিন পূর্বে দুপুরের বিরতির সময় ছাদ ও বিম ভেঙে সুরকিসহ আস্তর খসে পড়েছে। অল্পের জন্য বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে আমরা রক্ষা পায়।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী নাজিম উদ্দিন জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন ভবনের কাজ শুরু করা হয়েছে। সাতটি বিদ্যালয় ভবনের কাজ চলমান ও ৯টি টেন্ডারের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পর্যায়ক্রমে বরাদ্দ সাপেক্ষে সব ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
উপজেলার ২২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণের সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমার চৌধুরী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রস্তুত করে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সরেজমিনে তদন্ত করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিবেন।

আরও পড়ুন