লামার নিচু এলাকা প্লাবিত : গৃহবন্দি ১৫ হাজার মানুষ

NewsDetails_01

বান্দরবানের লামা উপজেলায় বন্যা
টানা ভারী বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের পানিতে বান্দরবানের লামা পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে ১৫ হাজার মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাতামুহুরী নদী, লামাখাল, বমুখাল, ইয়াংছা খাল, বগাইছড়িখাল, ইয়াংছা খাল ও পোপা খালসহ বিভিন্ন স্থানের পাহাড়ি ঝিরিগুলোতে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে বিভিন্ন পেশাজীবির প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। একই সাথে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসও দেখা দিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার নাগাদ মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কায় ইতিমধ্যে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার জন্য মাইকিং করে তাগাদা দেয়া হয়। দূর্যোগ কবলিতদেরকে আশ্রয় নেওয়ার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৫৫টি আশ্রয়ন কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত শুক্রবার (৫ জুলাই) দিনগত রাত থেকে মুষুলধারে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। আর এ টানা বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলায় অবস্থিত নদী, খাল ও ঝিরির পানি ফুঁসে উঠে লামা পৌরসভা এলাকার নয়াপাড়া, বাসস্টেন্ড, টিএন্ডটি পাড়া, বাজারপাড়া, গজালিয়া জিপ স্টেশন, লামা বাজারের একাংশ, চেয়ারম্যান পাড়ার একাংশ, ছোট নুনারবিলপাড়া, বড় নুনারবিলপাড়া, উপজেলা পরিষদের আবাসিক কোয়ার্টার সমূহ, থানা এলাকা, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা বাজাররসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। এতে পৌর এলাকার হলিচাইল পাবলিক স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারী বেসরকারী সংস্থার কার্যালয়সহ শতশত ঘরবাড়ী, দোকান পাঠ রয়েছে। আবার অতি বৃষ্টির কারনে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধ্বস দেখা দিয়েছে।
গত কয়েকক দিনে লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের লাইনঝিরি ও মিরিঞ্জা এলাকায় এক পাশের মাটি ধসে পড়েছে। এছাড়া ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বড়ছন খোলা এলাকার ব্রিজ, পৌরসভা এলাকার মাস্টার পাড়া ও মধুঝিরি আনসার ভিডিপি কার্যালয় সংলগ্ন পূর্বপাড়া শাহাদাতের বাড়ির পাশের ব্রিজটি পানির স্রোতের টানে দেবে গেছে। এতে ওই এলাকার হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। একই সময় উপজেলার বিভিন্ন স্থানের গ্রামীণ সড়কগুলো ধসে পড়েছে বলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে লামা আলীকদম সড়কের কেয়ারারঝিরি এলাকা পানিতে ডুবে যানচলাচল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। মাতামুহুরী নদীর তল দেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় ও নদীর চাম্পাতলী এলাকার পশ্চিম পাশে সরু হওয়ায় পানি দ্রুত পানি নামতে না পারায় এ বন্যার সৃষ্টি হয় বলে স্থানীয়দের দাবী। তারা বলেন, গজালিয়া ইউনিয়নের সাফমারা ঝিরি এলাকায় একটি ঝিরি কেটে নদীর গতি পরিবর্তন করলে বন্যা থেকে রক্ষা পৌরসভা এলাকার ৪০ হাজার মানুষ।
ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার জানান,লামা পৌরসভা, লামা সদর, গজালিয়া,ফাইতং,ফাঁসিয়াখালী, আজিজনগর, সরই ও রুপসীপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ গৃহবন্দি হয়ে দুর্ভোগে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বর্ষণ অব্যাহত থাকায় নতুন করে ঘরবাড়ি প্লাবিত হচ্ছে। বাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের মালামাল এবং উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি দপ্তর সমুহ মালামাল ও নথিপত্র নিরাপদে সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
লামা বাজার পাড়ার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মো. সেলিমসহ আরো অনেকে বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ৪-৫ বার পাহাড়ি ঢলের পানিতে শত শত ঘরবাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়। পানি ওঠার সময় ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয়। এমনকি বড় ধরনের আর্থিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
লামা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক জাপান বড়ুয়া জানান,দ্রুত পানি বৃদ্ধির কারনে কেউ কেউ আবার ক্ষতির সম্মুখিন হয়। অতি বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের কারণে পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চলতি মৌসুমের বীজতলা এবং বিভিন্ন ফসলাদি পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
পাহাড়ি ঢলে লামা পৌরসভার নিম্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে বন্যার পরিস্থিতি সার্বক্ষনিক তদারকি করার জন্য কমিটি গঠন করার পাশাপাশি প্লাবিত লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও আশ্রিতদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়। দূর্যোগকালীন সময় জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। যোগাযোগের নম্বর সমূহ যথাক্রমে নির্বাহী অফিসার-০১৫৫০০০৭১৮০, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ০১৮৪৫৭২৯৭২১ ও পিআইও সহকারী ০১৭১৭৭১৪৭৩৬।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, দুর্যোগকালীন সময়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের ৫৫টি বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষনা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পৌরসভা এলাকার ২৬ পরিবারসহ বেশ কয়েকটি পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। তাছাড়া পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষকেও ঝুঁকিপুর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য তাগিদ দিতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন