যে কারনে বান্দরবান আসনে বিএনপির টানা পরাজয়

NewsDetails_01

জেরী-মাম্যাচিং
পার্বত্য জেলার বান্দরবান আসনে ফের আওয়ামী লীগ তাদের দূর্গ অক্ষুন্ন রেখে টানা ৬ষ্ট বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন বীর বাহাদুর উশৈসিং। অন্যদিকে বিএনপি তথা দলটির প্রার্থী সাচিং প্রু জেরীর টানা পরাজয়ের অন্যতম কারন হিসাবে নেতাকর্মীরা দেখছেন বছরের পর বছর ধরে দলের অভ্যন্তরে অন্ত:দ্বন্ধ, অতি জামায়েত প্রতি, বিএনপির সরকারের সময়ে উন্নয়ন বঞ্চণার শিকার হওয়া।
সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হন সাচিং প্রু জেরী। পাল্টা হিসেবে মাঠে নামেন বিএনপির মাম্যাচিং। ২০০১ সালে সাচিং প্রু জেরী ও মাম্যাচিং দুজনই সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতায় নামেন এবং দুজনই বীর বাহাদুরের কাছে পরাজিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন মাম্যাচিং পেলেও সাচিং প্রু জেরীর বিরোধীতার কারণে মাম্যাচিং মাত্র ৮শ ৫৩ ভোটে বীর বাহাদুরের কাছে হেরে যান। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি।
আরো জানা গেছে, এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে সাচিং প্রু জেরী ও জেলা বিএনপির সভাপতি মাম্যাচিংকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে দলের প্রার্থী ঘোষনা করা হয় সাচিং প্রু জেরীকে। এরপর থেকে জেরী তার নির্বাচনী প্রচারনায় ক্ষোধ দলীয় সভাপতি মাম্যাচিং ও সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজাকে নির্বাচনী কাজে না ডাকার কারনে তারা জেরীর পক্ষে আলাদা ভাবে ভোটের প্রচারনা নামেন বলে অভিযোগ করেন। যার ফলে এই বিভক্তি দলের কর্মীদের মধ্যে দৃশ্যমান হওয়ার কারনে অনেকে ক্ষোভে ভোট কেন্দ্র গিয়ে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি, অনেকে নৌকার পক্ষে ভোট প্রদান করে। এর জের ধরে বিএনপির অনেক কর্মী এজেন্ট হওয়া থেকে বিরত থাকায় অনেক ভোট কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে পারেনি বিএনপির প্রার্থী সাচিং প্রু জেরী।
আলীকদম উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মাশুক আহম্মেদ বলেন,বিএনপির উভয় গ্রুপ একসাথে মাঠে নামলে এই ধরণের ফলাফল হতোনা বলে আমি মনে করি।
দলটির সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির প্রার্থী সাচিং প্রু জেরীর অতি জামায়েত প্রীতিকে দায়ী করছে অনেকে, বিএনপির এই প্রার্থী তার নির্বাচন পরিচালনায় যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার অধিকাংশ জামায়েত ইসলামী ও শিবির নেতাদের পরামর্শ ক্রমে বাস্তবায়ন করেছেন। তাছাড়া ক্ষোদ বিএনপির সরকারের সময় তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানে দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন না হওয়া, এর বিপরীতে আওয়ামীলীগের টানা ১০ বছরের জেলার ৭টি উপজেলায় সাড়ে ৫হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন ও আরো সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার কাজ চলমান থাকার কারনে সাধারণ ভোটাররা বীর বাহাদুরকে সমর্থন প্রদান করে।
তবে নির্বাচন সুষ্ঠ হয়নি বলে অভিযোগ করে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা বলেন, আমাদের কোন্দল দৃশ্যমান হয়নি, তবে একসাথে কাজ করতে পারলে আমার অনেক ভোট বেশি পেতাম।
আরো জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে জেলার রাজনীতিতে দলের আলাদা আলাদা কর্মসূচী বাস্তবায়ন, এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা,হামলার ঘটনা ঘটে আসলেও নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষনার পর কেন্দ্র থেকে বারবার কোন্দল নিরসনে উদ্দ্যেগ গ্রহন করলেও আন্ত:দ্বদ্ব আর কোন্দলে জেলা জুঁড়ে নাজুক অবস্থার মধ্যে রয়েছে বিএনপি। দলের প্রার্থী সাচিং প্রু জেরী আর বর্তমান সভাপতি মাম্যাচিং সমর্থকদের চরম দ্ব›দ্ব এই ফল বিপর্যয়ের অন্যতম কারন।
এই ব্যাপারে বিএনপির প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট অধ্যাপক ওসমান গণি বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রার্থী (সাচিং প্রু জেরী) নিজেই সাংবাদিকদের সাথে কথা বলবে।
বান্দরবান আসনের ১৭৬ টি কেন্দ্রের ফলাফলে আওয়ামী লীগের বীর বাহাদুর উশৈসিং ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৯৬৬, বিএনপির সাচিং প্রু জেরী ৫৮হাজার ৭১৯, ইসলামী আন্দোলন এর মো.শওকতুল ইসলাম ১হাজার ০০৩ এবং ইসলামী ঐক্যজোট এর মো: বাবুল হোসেন ৩৮৭ পান। ৮৫হাজার ২৪৭ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয় আওয়ামী লীগের বীর বাহাদুর।

আরও পড়ুন