বান্দরবানে বিদেশী অনুপ্রবেশ বাড়ছে : ১ মাসে ১১জন আটক

NewsDetails_01

প্রশাসনিক অনুমতি ছাড়া বান্দরবান জেলায় বিদেশী নাগরিকদের অনুপ্রবেশ বাড়ছে। অনুপ্রবেশের কারনে আটক হচ্ছে ভারতীয়সহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক। গত ১ মাসে বান্দরবানে ৭ ভারতীয় বিদেশী নাগরিকসহ মোট ১১ বিদেশী আটক হওয়ায় ক্ষোধ জেলার আইনশৃংখলা বাহিনীকে ভাবিয়ে তুলেছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কোন বিদেশী নাগরিককে বান্দরবানে প্রবেশ করার সময় শহরের রেইছা পুলিশ চেক পোষ্টে প্রশাসনের অনুমতি পত্র হস্তান্তর করে জেলায় প্রবেশ করতে হয়। এসব নাগরিকের কোন অনুমতি পত্র না থাকার পরও চেকপোষ্ট অতিক্রম করে কিভাবে জেলায় প্রবেশ, সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত নীলগিরি ভ্রমন এবং তিনদিন অবস্থান গ্রহন করেন সেই বিষয়ে জোর আলোচনা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৩ নভেম্বর বান্দরবান এসে চাঁদের গাড়ী নিয়ে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে রওনা হলে জেলার ওয়াই জংশন পুলিশ চেকপোস্টে দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নেপালী ছাত্রকে আটক করে। আটকৃতরা হল, নেপালের নাগরিক দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র আনন্দ রায়, দীপেশ পোদ্দার ও সুভাস চন্দ্র। এর আগে ২নভেম্বর রাতে একইভাবে অনুমতি ছাড়া বান্দরবানে প্রবেশ করায় নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র থেকে ভারতীয় নাগরিক মোনালিসা ভট্টাচারিয়াকে আটক করা হয় এবং পরবর্তীতে তাদের যাচাই বাছাই শেষে ছেড়ে দেয়া হয়।
আরো জানা গেছে, গত ২০অক্টোবর পর্যটন কেন্দ্র নীলগিরি থেকে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের চব্বিশ পরগনার মাজেদুল হক মন্ডল নজরুল হক মন্ডল, বিবি ফরিদা, আসমিফ মন্ডল, আমিনা মন্ডল, মহিউদ্দিন মোল্লা ও সাহিল হোসাইনকে আটক করে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সদস্যরা। পরে তাদের আটক করে পুলিশে হস্তান্তরের পর জেলার বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বিদেশী ছাত্ররা বান্দরবানসহ অপর দুই পার্বত্য জেলায় ভ্রমনে আসলে ক্ষোধ দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে তাদের বিদেশী ছাত্রদের পাহাড়ে ভ্রমনের ক্ষেত্রে অনুমতি নেবার বিষয়টি অবহিত না করার কারনে এই সমস্যা হচ্ছে। আবার অনেক বিদেশী আসছেন বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনের নেতা ও উন্নয়ন সংস্থার সাথে গোপন বৈঠকে মিলিত হতে।
তবে স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থার মতে, বাংলাদেশিদের সাথে ভারতের কলকাতার বাঙালিদের ভাষা ও সাংস্কৃতি ও চেহারায় মিল থাকায় অনেকে বিশেষ করে ভারতীয়দের বান্দরবানসহ অপর দুই পার্বত্য জেলায় প্রবেশ কোন ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছেনা।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকে পার্বত্য জেলায় বিদেশিদের ভ্রমণের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। বলা হয়, বিদেশিদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে। একই সঙ্গে নির্দেশনা জারি করা হয়, কূটনীতিক বাদে যেকোনো বিদেশি নাগরিককে তিন পার্বত্য জেলায় যাওয়ার এক মাস আগে অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। পরে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলে একই বছরের ২২ মার্চ বিদেশি নাগরিকের প্রবেশে অনুমতির বিষয়টি শিথিল করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আরো জানা গেছে, বর্তমানে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বান্দরবানসহ অপর দুই পার্বত্য জেলায় বিদেশীদের প্রবেশ ও ভ্রমনের বিধান থাকলেও অনেক বিদেশী বিষয়টি অমান্য করে বান্দরবানে প্রবেশ করায় স্থানীয়সহ প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রমণে গিয়ে সরাসরি স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠকসহ যোগাযোগ করে থাকে বিদেশিরা। ফলে বিষয়টি প্রশাসন ও নিরাপত্তা-বাহিনীর অগোচরেই থেকে যায়। এছাড়া অনেক বিদেশি পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রমণে গিয়ে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নানা সমস্যা সৃষ্টি করছে। এ কারণে বিদেশিদের পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। প্রতিবছরই বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি ও অসংখ্য বিদেশি নাগরিক পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে ভ্রমণ করে থাকেন। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, আর এই সময়ে পার্বত্য জেলায় বিদেশীদের অনুপ্রবেশ বাড়ার কারনে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বান্দরবানসহ অপর দুই পার্বত্য জেলায় প্রবেশ করার আগে বিদেশীদের অবশ্যয় প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী যে কোন বিদেশীকে তিন পার্বত্য জেলায় ভ্রমনের জন্য জেলা প্রশাসনের পূর্বাঅনুমোদন নেয়া প্রয়োজন।

আরও পড়ুন