বাংলাদেশে ছেড়ে আমি আর মিয়ানমার যাব না

NewsDetails_01

নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা সীমান্তের চেরারমাঠ বড়ছন খোলায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা
“বাংলাদেশ ছেড়ে আমি আর মিয়ানমার যাব না, মরতে হলে এখানে মরবো, বাংলাদেশের মানুষের দয়া মায়ার মাঝে মরব। তারপর ও মিয়ানমারের নর পশুদের হাতে জীবন দিব না” বাংলাদেশ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এটা আমাদের অনেক বড় পাওয়া এমনটা বলেছেন, মিয়ানমারের স্যারিডং এলাকা থেকে আসা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বড়ছন খোলা এলাকায় আশ্রয় নেওয়া হাফেজ করিম উল্লাহ (৪২)।
তিনি আরো বলেন, মিয়ানমারে সৈনিকরা নির্মম ভাবে আমার ২ ভাই এক বোনকে মেরে হাতের মধ্যে বোমা বেঁধে দিয়েছিল। আমার বোনের স্বামীকে হাত পা কেটে হত্যা করেছে। আমি অনেক কষ্টে প্রাণ হাতে নিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। বাংলাদেশের মানুষের দয়ার কারনে আজকে আমরা এখানে ত্রাণ পাচ্ছি,খাবার,কাপড়,ঔষুধসহ আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে বাংলাদেশ আমাদের পাশে দাড়িয়েছে।
মিয়ানমার থেকে আসা আরেক রোহিঙ্গা শহিদুল্লাহ বলেন,মিয়ানমারে আমরা মুসলিমরা সঠিক ভাবে প্রাকাশ্যে নামায আদায় করতে পারি না। আমাদের মসজিদের ও ফোরকানিয়া (শিশুদের সকাল বেলা ইসলামিক শিক্ষা গ্রহণের প্রতিষ্ঠান) তাবলিগের জমাত হওয়ার জায়গা বন্ধ করে তালা দিয়ে দিয়েছে বর্মি আর্মিরা (মিয়ানমারের সেনাবাহিনী) যার কারনে আমরা সেখানে তেমন কোন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, আমি আমার পরিবার নিয়ে সেখানে হালচাষ করে জীবন চালাতাম আমার নিজের প্রায় ২ হাজার শতক জমি আছে। আমি আমার পরিবার নিয়ে সেখানে ভাল ভাবে থাকতাম। আমার কোন অভাব ছিলনা। আমার ৫ ছেলে ৩ মেয়ে সহ আমরা স্বামী স্ত্রী ভালই ছিলাম। হঠাৎ করে কেন তারা আমাদের উপর এমন অত্যাচার শুরু করল তা আমি বুঝতে পারি নাই।
তিনি আরো বলেন, সেইদিন ছিল রবিবার (২০ আগস্ট) মিয়ানমারের বুচিডং এ কিছু দিন আগে বিয়ে দিয়েছিলাম আমার ছোট বোন আলিয়া খাতুনকে, সেই তার স্বামী কে নিয়ে রবিবার সকালে বেড়াতে আসে আমার বাড়ি স্যারিডং এ। তখন ও বাহির থেকে একটু একটু শুনছিলাম বর্মিদের সাথে কি একটা সমস্যা চলছে। আমি ভাবছিলাম সমাধান হয়ে যাবে । কারণ প্রায় সময় তো এমন ঘটনা হতো। আমার বোনের জন্য রান্না বান্না প্রায় শেষ, দুপুরে এক সাথে খাবার খেলাম, হঠাৎ এসে দেখি আমার পাড়ার মধ্যে গুলা গুলির শব্দ। বের হয়ে দেখি আমার এলাকার প্রায় ঘরে আগুন লাগাচ্ছে বর্মি ছেলে ও আর্মিরা। আমার বোনের স্বামী বাধা দেওয়ার কারনে আমার নতুন বিয়ে হওয়া বোনের স্বামীকে হাত পা কেটে ফেলেছে। আমার বোন কান্নায় কাতার হয়ে তার স্বামীর দিকে গেলে বর্মি আর্মিরা তাকে গুলি করে মেরে ফেলে এবং পরে হাতে বোমা বেধে দেয়। ঠিক একেই ভাবে আমার দুই ভাইকে ও তারা আমার চোখের সামনে মেরে ফেলে রেখে দেয়।
শহিদুল্লাগ আরো বলেন, আমরা মিয়ানমারে শুধু বোবার মত থাকি। আমাদের নেই কোন নিজস্ব স্বাধীনতা। এখন বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমার একটাই চাওয়া আমাকে যেন এখানে থাকতে দেয়। আমি আমার শেষ নি: শ্বাস এখানে ত্যাগ করতে রাজি তার পর ও মিয়ানমারে যাবো না।
প্রসঙ্গত,গত ২৫ আগষ্টে মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে প্রায় ছাব্বিশ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে এবং গত ৩ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত সাতহাজার জন রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার বালুখালী শরনার্থী ক্যাম্পে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আরও পড়ুন