পাহাড়ে জুমিয়াদের আগুনে জীব বৈচিত্র্য ও পরিবেশ হুমকির মুখে

NewsDetails_01

বান্দরবানের লামা উপজেলার পাহাড়ে পাহাড়ে এখন জুম চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি জুমিয়ারা। ইতিমধ্যে তাদের পাহাড় বাছাই এবং বাছাইকৃত পাহাড়গুলোর গাছপালা, গুল্ম ও লতাপাতা কেটে ফেলার কাজ শেষ করে এখন শুধু পাহাড়গুলোতে আগুন লাগিয়ে পোড়ানো হচ্ছে। গত ১৫-২০ দিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এ জুমের আগুনে পুড়েছে অর্ধশতাধিক পাহাড়। আর পুড়ে যাওয়া পাহাড়ে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ।

উপজেলার গজালিয়ার জুমিয়া অংহ্লাপ্রু মার্মা বলেন, এক পাহাড়ে পর পর দুই বার জুম করা হয় না। কারণ এক পাহাড়ে বার বার ফসল ভালো হয় না। তাই একেক বছর একেক পাহাড়ে জুম চাষ করা হয়। এরপর সামান্য বৃষ্টি হলেই ফসল রোপন শুরু হবে।

তিনি আরও বলেন, এখনো এ চাষের বিকল্প কোন চাষের ব্যবস্থা না হওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে এ চাষ করছি। চলতি মৌসুমে সরকারী হিসাবমতে এবার জেলায় ১৫-২০ হাজার হেক্টর পাহাড়ী ভুমিতে জুম চাষ করা হবে বলে জানা গেলেও বেসরকারী ভাবে এর পরিমাণ বেশি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

NewsDetails_03

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, পার্বত্য তিন জেলায় জুম চাষের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে কাজ করেছে সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (সিএফএসডি) নামের এক প্রতিষ্ঠান। তাদের মতে, প্রথাগত চাষ পদ্ধতি হিসেবে জুম চাষ কয়েকশ’ বছর ধরে চলে এলেও পরিবেশ-প্রকৃতির ওপর এটা বিরূপ প্রভাব ফেলে। তবে জনসংখ্যা অনুপাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পাহাড় থাকলে জুম চাষের সময়ের আবর্তনটা সঠিকভাবে রক্ষা করা সম্ভব। আর এ সময় আবর্তনটা ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ধরে রাখা গেলে যেটুকু বিরূপ প্রভাব ফেলে তা প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম। এখন যে হারে জুম চাষ হচ্ছে তাতে প্রাকৃতিক বনজ সম্পদ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি মৃত্তিকা ক্ষয়ও বাড়ছে।
ফলে প্রাকৃতিক ছড়া-নালা বর্ষাকালে ধুয়ে আসা মাটিতে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে শুষ্ক মৌসুমে পানীয়জলের সংকট প্রকট হয়।

আরো জানা গেছে, জুম চাষ থেকে বিরত রাখতে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম নিয়ন্ত্রণ নামে বন বিভাগের একটি শাখা রয়েছে। এ ছাড়া আশির দশকে সরকারি উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে জুমিয়া পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় কয়েক হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। স্থায়ীভাবে জীবনযাপনের মতো পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারায় এ প্রকল্পটি কোনো কাজে আসেনি।

লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরে আলম বলেন, প্রতি বছর শত শত একর পাহাড়ে অপরিকল্পিতভাবে জুম চাষ করা হয়। আর জুম চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করতে পোড়ানো হয় পাহাড়ের পর পাহাড়। তাই জুমচাষের ক্ষতিকারক দিকগুলো জুমিয়াদের মাঝে তুলে ধরে তাদের এ চাষের বিকল্প হিসাবে কমলাসহ মিশ্র ফসল চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ফলে আগের তুলনায় জুম চাষের নামে পাহাড় পোড়ানো কমে এসেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠী যুগ যুগ ধরে জুম চাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। তাদের জীবন জীবিকা এখনো প্রায় জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল। পাহাড়ি জেলায় কৃষি জমির পরিমাণ অতি সামান্য বিধায় বাধ্য হয়ে জুমিয়ারা সনাতন পদ্ধতিতে জুম চাষ করেন। জুমে ধান, ভুট্টা, পেঁপে, কলা, আনারস, মারফা, চিনার, মরিচ, তুলা, আলু (সাদা আলু), কাসাভাসহ (শিমুল আলু) নানা ফসল রোপন করা হয়।

আরও পড়ুন