পাহাড়জুড়ে উৎসবের আমেজ

NewsDetails_01

আগামী ১৩ এপ্রিল শুরু হবে মারমা জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাইং পোয়ে উৎসব। আর বাঙালিরা একে বলে জলকেলি উৎসব। এ উৎসবের মাধ্যমে পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করার মধ্য দিয়ে উল্লাসে মাতবেন সবাই। পুরনো সব জীর্ণতা, গ্লানি-ভেদাভেদ ভুলে নতুনকে সবাই গ্রহণ করবে।

মারমা সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সাংগ্রাই। এরই মধ্যে এ নিয়ে পাহাড়জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে উৎসবের আমেজ।

প্রতি বছরের মতো এবারও চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আযোজন করেছে উৎসব উদযাপন কমিটি। আর এ উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তোলার জন্য আদিবাসী শিল্পীরা কাজ করছেন দিন-রাত। অনেকটা রাত জেগে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিয়ে পটুয়ারা দিচ্ছেন তুলির শেষ আঁচড়।

প্রতিটি প্ল্যাকার্ডে লাল-নীল রঙ আর তুলির আঁচড়ে আঁকছেন মারমা সম্প্রদায়ের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। এবারও রঙতুলির মনোরম সন্নিবেশে আঁকা হচ্ছে বানর, হাতি, বাঁশি, রাজা, হরিণসহ বিভিন্ন রকমের জীবজন্তুর প্রতিচ্ছবি।

ছবিতে রঙের আঁচড় দিতে গিয়ে পটুয়া একিনু মার্মা বলেন, প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য শোভাযাত্রায় তুলে ধরব এবারও। সাংগ্রাই উৎসবের শোভাযাত্রাকে বর্ণিল করার জন্য সবাই দিন রাত কাজ করছে ।১৩ এপ্রিলের শোভাযাত্রাকে বর্ণাঢ্যময় করে তোলার জন্য শিল্পী বাপ্পি মারমা বলেন, পহেলা বৈশাখ বা সাংগ্রাইকে স্বাগত জানানোর জন্য আমরা প্ল্যাকার্ডের ওপরে বিভিন্ন নকশা তৈরি করেছি। আর এসব তৈরি করা প্রতীক হাতে নিয়ে সবাই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করবেন।

নতুন বছরকে বরণ করতে এবারও রয়েছে নানা আয়োজন। শুরুতেই সকাল ৮টায় স্থানীয় রাজার মাঠ থেকে সাংগ্রাইং শোভাযাত্রা বের করার মাধ্যমে বরণ করে নেয়া হবে নতুন বছরকে। এরপর হবে বয়স্কদের উদ্দেশ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা।

NewsDetails_03

এবারের শোভাযাত্রায় প্রধান অতিথি হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুরের উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান উৎসব উদযাপন কমিটি ।

পরের দিন শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) বেলা আড়াই টায় জেলার উজানী পাড়া খেয়া ঘাটে বুদ্ধ মূর্তিস্নান এবং রাত ৮টায় বিভিন্ন আদিবাসী পাড়ায় পিঠা তৈরির অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

পরের দিন শনিবার ও রোববারে (১৫ ও ১৬ এপ্রিল) বেলা ৩টায় স্থানীয় রাজার মাঠে শুরু হবে সাংগ্রাই উৎসবের মূল আর্কষণ মৈত্রী পানি বর্ষণ বা জলকেলি উৎসব।এ সময় তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতিরা নিজেদের শুদ্ধ করার জন্য একে অপরের গায়ে পরিষ্কার পানি ছিটাবেন। সেই সঙ্গে বিকেল ৪টায় বান্দরবান মারমা শিল্পী গোষ্ঠীর পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

এদিকে, সংস্কৃতিক কর্মী চ থুই প্রু মার্মা বলেন, আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষের পথে। এবারের মঞ্চে নতুন নতুন মারমা গান আর নৃত্য পরিবশেন করা হবে। জলকেলি উৎসবকে ঘিরে প্রতিবছরই শত শত পর্যটকের আগমন ঘটে বান্দরবানে।

উৎসব উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কোকোসিং বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আমরা চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। ১৫ তারিখ বিকেলে দূর-দুরান্ত থেকে আসা যুবক-যুবতিরা নিজেদের মধ্যে পানিবর্ষণ করবেন।

বান্দরবান পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, সাংগ্রাই উৎসবকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য জেলায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন