নাইক্ষ্যংছড়িতে নিখোঁজ ৬ ব্যক্তির হদিস নেই

NewsDetails_01

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীতে নিখোঁজ ৬ ব্যক্তির কোন হদিস পায়নি পরিবার ও এলাকাবাসী। তবে তারা বিভিন্ন মামলার আসামী হওয়ায় এলাকা ছাড়া বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আলম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়িতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরীর ঘোষনায় নড়েচড়ে বসে অভিভাবকরা। এতে যারা এলাকার বাহিরে অবস্থান করছেন তারা নিজেরাই অভিভাবক এবং জনপ্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করছেন। সর্বশেষ একে একে সবাই যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ছয় ব্যক্তির কোন হদিস নেই। পাশাপাশি তারা কোথায় আছেন এবং কি করছেন তা জানা নেই বলে জানালেন ইউপি চেয়ারম্যান।
তারা হলেন, ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড এলাকার জয়নাল আবেদীনের পুত্র মোঃ ইউনুছ (৪০), মোস্তাক আহমদের পুত্র আমির হোছন (৩২), ৪নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা মৃত হোছনের পুত্র মোঃ রুবেল (২২), ৭নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা একই পরিবারের শফিক (৪৫), স্ত্রী রুবি আক্তার (৪০) ও ছেলে সালমান (১৯)। এদের কারও কারও বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। পুলিশ তাদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু তাহের জানান, সীতাকুন্ড ঘটনার পর প্রাথমিক ভাবে উক্ত এলাকায় ৭০ জন ব্যক্তি বাহিরে অবস্থানের খবর উঠে আসে। বাহিরে অবস্থানরত ব্যক্তিরা তাদের পরিবারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে আসলেও মোঃ ইউনুছ ও আমির হোছনের খবর নেই দীর্ঘদিন ধরে। নিখোঁজের ব্যাপারে আরো খোজখবর নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
উক্ত ছয় ব্যক্তিকে নিখোঁজ চিহ্নিত করে বাইশারী তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক আবু মুসা বলেন, এসব ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় নেই। তারা কোথায় আছেন বা কি করছেন এবং জঙ্গীবাদের জড়িয়ে পড়ছেন কিনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
সীতাকুন্ডের ছায়ানীড়ের জঙ্গী আস্তানায় কামাল ও জোবাইরা দম্পতি সহ পাঁচ ব্যক্তি নিহতের ঘটনায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এ ঘটনায় তিন জহিরুল, তার স্ত্রী রাজিয়া ও ছোট বোন মনজিয়ারা আটক রয়েছেন। পরে গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে নিহত দম্পতি ও তার শিশু বাচ্চা সহ আটক তিন জনের বাড়ী চিহ্নিত হয় নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ইউনিয়নের যৌথখামার পাড়া গ্রামে। শুরু হয় প্রশাসনের দৌড়ঝাপ, একে একে বেরিয়ে আসে আসল তথ্য। এলাকায় বসবাসকারী ব্যক্তিরা কেউ স্থায়ী বাসিন্দা নয়। তাদের অধিকাংশই মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিক।
জঙ্গী আস্তানায় নিহত কামাল হোসেনের মা ওয়াছ খাতুন ওরপে দিলবর খাতুন জানান, স্ত্রী জোবাইরাকে ডাক্তার দেখার কথা বলে নয় মাস পূর্বে বাড়ী থেকে বের হয় তারা। এর মাঝে যোগাযোগ ঘটেনি পরিবারের কোন সদস্যদের সাথে। তবে কিভাবে একাজে জড়িয়ে পড়েছে জানেন না তিনি। তার বাড়ীতে সন্দেহজনক কেউ আসত না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পিতা মোজাফ্ফর আহমদ জানায়, তারা রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা থেকে ১০ বছর পূর্বে যৌথখামার পাড়া এলাকায় বসতি স্থাপন করে। তার ছেলে কামাল হোসেন জঙ্গীপনায় জড়িয়ে পড়ায় অসন্তুষ্ট পিতা লাশ গ্রহনে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং পরে বেওয়ারিশ হিসেবে সোমবার দাফন কার্য সম্পন্ন করে সীতাকুন্ড পুলিশ।
ছোট ভাই জামাল জানায়, ৪নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা কুমিল্লার ছান্দিনায় আটক মোঃ হাসান ওরফে ভাগিনার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করত তার বড় ভাই কামাল ও জহিরুল। পরে কাউকে না জানিয়ে জহিরুলের বোন জোবাইরাকে বিয়ে করে কামাল। তিনি আরো জানান, বিয়ের পর থেকে নিজের স্ত্রীকে কাউকে দেখতে দেননি তিনি এমনকি পরিবারের একেবারে ছোট শিশুটিকেও। এতে বিরক্ত হয়ে তাকে বাড়ী থেকে বের করে দেন পিতা মোজাফ্ফর আহমদ।
এদিকে জোবাইরা পিতা জানিয়েছেন, তারাও ২০ বছর পূর্বে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর থেকে এসে একই পাড়ায় বসতি তৈরী করে স্থায়ী ভাবে বাসবাস করছেন। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও তাদের পরিবারের কোন সদস্যদের সাথে এলাকায় ঝামেলা তৈরী হয়নি। তারও প্রশ্ন কিভাবে তার ছেলে ও মেয়েরা জড়িয়ে পড়ছেন এসব জগন্য কাজে। সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজে এসব ছেলে-মেয়েকে দেশের আইনের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী জানিয়েছেন বড় ভাই জিয়াবুল হক।
জঙ্গী আস্তানায় নিহত জোবাইরা ও আটক জহিরুল, মনজিয়ারার মা জান্নাত আরা জানান, হঠাৎ কি হয়ে গেল। তিনি কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না, এলাকার সাধারন মানুষদের কিভাবে নিজের মুখ দেখাব এই চিন্তায় ঘুম আসছে না এখন।
এদিকে ঘটনার মোড় কোনদিকে যাচ্ছে সেই আতংকে সেই আতংকে বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে। পাশাপাশি তাদের দাবী, ঘটনায় সত্যিকারের অপরাধীরা বেরিয়ে আসুক এবং নিরহ ব্যক্তিরা হয়রানীর শিকার না হয় সেদিকে প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।
ঘটনার পরপরই ১৯ মার্চ (রবিবার) জঙ্গী আস্তানায় নিহতদের বাড়ী পরিদর্শনে আসেন বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়। তিনি এসময় এলাকার জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক সহ সাধারন মানুষদের সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, বাইশারীকে জঙ্গী আস্তানা হিসেবে ব্যবহার হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। এ জন্য তিনি এলাকাবাসীর সহযোগীতা কামনা করেন এবং এলাকাবাসীও সর্বোচ্চ সহযোগীতার আশ্বাষ দেন। বর্তমানে এলাকায় পুলিশী টহল অব্যাহত আছে এবং অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন রয়েছে বলে জানালেন বাইশারী তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক আবু মুসা।
উল্লেখ্য ২০১৬ সনের ৩ ফেব্রæয়ারী বাইশারী বাজারে পুলিশের উপস্থিতির দেখে বোমা বিষ্ফোরণ, ১৩ মে বৌদ্ধ ভান্তে হত্যা ও ৩০ জুন এক আওয়ামীলীগ নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে দুষ্কৃতিকারীরা। সীতাকুন্ডে জঙ্গি আস্তায় বাইশারীর দুইজন মৃত্যুর খবরের পর বাইশারীর এ হত্যাকান্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে এলাকায় গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে পুলিশ হন্য হয়ে খুজছে ২৭ মে ২০১৪ সালে বাইশারী-ঈদগড়-ঈদগাঁও সড়কে অপহরণের শিকার হওয়া মাহবুবুর রহমান সেলিম ওরপে সোহেল রানা এবং তার সাথে বেড়াতে আসা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাষ্টার্সের শিক্ষার্থী ময়মসসিংয়ের বাসিন্দা নাফিজ হোসেনকে। কুমিল্লা ও সীতাকুন্ডে আটক ছুরত আলম ওরপে হাসান, জহিরুল হক জসিম ও রাজিয়া সুলতানা আরজিনা পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে তার আসল রহস্য। ফেরিওয়ালা সেজে বাইশারী ইউনিয়নের লম্বাবিল ঘোনার পাড়ায় এলাকায় জমি ক্রয় করে বসতি স্থাপন করে সোহেল রানা ওরপে মাহবুবুর রহমান সেলিম।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ মার্চ বৃহস্পতিবার সীতাকুন্ডে ৪ ঘন্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ এবং গুলিতে ওই দম্পতি সহ চার জঙ্গির পাশাপাশি এক শিশু প্রাণ হারায়। ওই দম্পতি নিহত হওয়ার ঘটনা গণমাধ্যমে পাশাপাশি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারীর সাধারন মানুষের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন