দূর্গম পাহাড়ে শিক্ষার জন্য উক্রেমং মার্মার নিরন্তর সংগ্রাম

NewsDetails_01
পাঠদান করছে বান্দরবানের থানচি উপজেলার উক্রেমং মার্মা
NewsDetails_03

আমাদের সমাজে অনেক তরুণ স্বপ্ন দেখে সমাজের জন্য কিছু করার, যাতে দেশটা এগিয়ে যায়, এগিয়ে যায় সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ, আর সেই ধরণের একজন উক্রেমং মার্মা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার বড় মদক হতে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে মিয়ানমার সীমান্তে ম্রা গং পাড়ায় ও তার আশেপাশের পাড়া হতে ঊঠে আসা কোমল মতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আলো পৌছে দিতে নিরন্তর সংগ্রামে নেমেছে শিক্ষক উক্রেমং মার্মা। দূর্গম পাহাড়ে শিক্ষা আলো ছড়াচ্ছে এই শিক্ষক। প্রথম ধাপে প্রায় ৪৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে স্বপ্ন যাত্রা শুরু করলে, তাকে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসে স্থানীয়রাও। স্থানীয়দের উদ্যোগে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ছাত্রাবাস গড়ে তোলা আর খাওয়া দাওয়াসহ নানাবিদ সহযোগীতা দিয়ে যাচ্ছে। সরকারি ভাবে সহযোগীতা পেলে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে আরো নিত্যনতুন স্বপ্ন দেখবে পাহাড়ের অদম্য এই তরুণ।
থানচি উপজেলা ১নং রেমাক্রী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডে ম্র গং পাড়া অবস্থান। ২০১৭ সালে স্থানীয় পাইহ্লা প্রু মারমা ও কারবারী ক্যশৈ প্রু মারমা ( কারবারী) উদ্যোগ নেন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের। পাড়াবাসী ও এলাকার পাশের পাড়া থেকে সহযোগীতা ও অনুদান সংগ্রহ করে দূর্গম এলাকাবাসীদের এক মুঠো চাল সংগ্রহ থেকে দেড় লক্ষ টাকা সংগ্রহ হয়। তা দিয়ে নিজেদের সংগ্রহীত গাছ বাঁশ দিয়ে নিজেরা তৈরী করেন স্কুল ঘর ও ছাত্রাবাস ঘরটি। ২০১৮ সালে শিশু ও প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয় ৪৭ জন কোমল মতি শিক্ষার্থী।
ম্র গং পাড়া প্রধান কারবারী ক্যশৈ প্রু মারমা পাহাড়বার্তাকে জানান, ৫ বছর আগে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা ও তৎকালিন মন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছে, তাই উদ্যোগ গ্রহন করেছি। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি বেসরকারিভাবে কোন প্রকার সহযোগীতা পায়নি।
তিনি আরো বলেন, সহযোগীতার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সংশ্লিষ্ট জন প্রতিনিধিদের আবেদন করা হয়েছে।
আরো জানা গেছে, প্রথম বারের মতো ২০১১ সালে ২১ শে ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৎকালিন প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লাসহ আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা ম্রাং ওয়া পাড়া পরিদর্শণ করেন। তৎ সময়ে ম্রাং ওয়া পাড়ায় দুপুরে কলা পাতা দিয়ে মধ্যাহৃ ভোজন করেন সবাই। প্রতিমন্ত্রী ও চেয়ারম্যান ম্র গং পাড়ার প্রধান পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈ প্রু মারমাকে বলেন, এলাকাটি খুব সুন্দর ও সমতল এবং পর্যটনের উপযোগি গড়ে তুলতে হবে। তখন থেকে পাড়ার মধ্যে ৩ পরিবার থেকে ২০১৬ সালে ৩৫ পরিবার উন্নিত হয়। বর্তমানে ৪০টি পরিবার নিয়ে পাড়াটি গঠিত হয়েছে। এসব পরিবারের প্রধানদের স্বপ্ন দেখেন অন্তত পক্ষে প্রাইমারির গন্ডি শেষ করতে হবে নিজেদের ছেলে মেয়েকে এবং তারা এই স্বপ্ন পূরনের উদ্যোগ নেন।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক উক্রেমং মার্মা জানান, শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় ব্যবস্থা,বিনোদন মূলক ফুটবলসহ ক্রিড়া সামগ্রি, আসবাবপত্র বই, খাতা-কলম এর অভাব রয়েছে। আমি আমি এস এস সি পাশ, তাই এলাকার ছেলে মেয়েদের জন্য আমি আজীবন সংগ্রাম করে যাবো তারা যাতে আরো বেশি শিক্ষার আলো দেখতে পায়।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পাইহ্লা প্রু মারমা জানান, আমরা প্রতিষ্ঠানটি হোষ্টেল ভিত্তিক করছি, কারন দুর্গম পাড়ায় পাড়ায় স্কুল না থাকা, যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় কয়েকটি পাড়া মিলে এ ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। সরকারি বা বেসরকারিভাবে বই খাতা কলম মশারি,বিশুদ্ধ পানীয় ব্যবস্থা,ব্লেক বোর্ড,চক, ডাষ্টারসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ সহযোগীতা পেলে এই এলাকা ছেলে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা না হলেও অন্তত পক্ষে স্বাক্ষর জ্ঞান শিক্ষা অর্জন করতে পারবে।
এই ব্যাপারে থানচি উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) নিজাম উদ্দিন সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ম্রা গং এলাকাতে কোন দিন যাওয়ার হয়নি, ঐ এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।

আরও পড়ুন