“এখনও খেতে আসলো না আমার দুই মেয়ে” পাহাড় ধসে দুই সন্তান হারা মা হ্লায়ই প্রু

NewsDetails_01

দুই সন্তান হারা মা হ্লায়ই প্রু
“সকাল থেকে কিছুই খাবার খায়নি। বাসায় এসে’ই খাব মা। মা দুপুরে খাবার জন্য কি রান্না করছো? মা রান্না হয়ে গেছে? মুঠোফোনে এসব জিজ্ঞাসা করেছিল। কিন্তু বাসায় এসে এখনও খেতে আসলো না আমার দুই মেয়ে। কেন এমন করেছো ভগবান, তুমি কোথায় নিয়ে গেছো তাদের? এসব কথা বলে বিলাপ করছিল হ্লায়ই প্রু মারমা(৪৮)। কারোর সাথে কথা বলা দুরের কথা, নিজেই দাড়াতে পারছিলেন না। সন্তান হারা এক মায়ের আহাজারিতে বান্দরবানের রুমা উপজেলার মংশৈ প্রু পাড়ার এলাকায় শোকের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠেছে।
গত রোববার সকাল ১০টা দিকে রুমা- বান্দরবান সড়কে ২২কিলোমিটার এলাকায় পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে কমপক্ষে ৯জনের নিখোঁজ হন। তার মধ্যে রুমা‘র পাইন্দু ইউনিয়নের মংশৈপ্রু পাড়াপ্রধান মংশৈপ্রু কারবারির দুই মেয়ে সিংমেহ্লা(১৭) ও সিংমেচিং(১৫) ছিল। তবে ওইদিন বিকেলে সিংমেহ্লা এর লাশ উদ্ধার হয়। এই হতভাগা দুই মেয়ের মা হচ্ছেন হ্লায়ইপ্রু মারমা।
পরিবারে সদস্যরা পাহাড়বার্তা’কে জানায়, সিংমেহ্লা(১৭) ও সিংমেচিং(১৫) আপন দুই বোন অন্য যাত্রীদের মতো বাসে করে বান্দরবান থেকে রুমা আসছিল। সকাল ১০টার দিকে মাকে ফোন দেন সিংমেহ্লা। বলেন, “মা আমরা ১২মাইল ওয়াই জাংশন পার হয়ে এখন পাহাড় ভাঙ্গন জায়গা এসেছি। আর এক ঘন্টার মধ্যে বাসায় এসে পৌছঁবো”। সিংমেহ্লা আরো বলেন “ আমার সাথে ছোটবোনও আছে। চিন্তা করবেননা মা, সে সুস্থ আছে। কি রান্না করছো” একথা বলে মুঠোফোন কেটে যায়। তারপর বিশ মিনিট থেকে আধা ঘন্টার মধ্যে খবর পায়, ২২কিলোমিটার এলাকায় পাহাড় ভেঙ্গে বেশ কজন মাটি চাপা পড়ছে। একটু পরে খবর আসে তার বড় ভাইয়ের কাছ থেকে। ওই দুই বোনও মাটি চাপা পড়ে নিখোঁজ এখন। তখন থেকে আমার মা ও বাবা কান্না আর কান্না। কারোর সাথে কথা বলতে পারছেনা। মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে পড়েন মা। এসব কথা জানাতেই কান্নায় চোখের জল ভাসিয়ে দেয় বাসায় থাকা বড়বোন নাইম্রাচিং মারমা‘র।
কান্না জড়িত কন্ঠে নাইম্রাচিং পাহাড়বার্তা’কে জানায়, দুইবোনের মধ্যে সিংমেহ্লা এর লাশ উদ্ধার করা গেলেও তার ছোট সিমেচিং এখনো উদ্ধার হয়নি। দুই বোনের মধ্যে সিংমেহ্লা বাঙ্গাহালিয়া খ্রিষ্টান মিশন থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। সে বেসরকারি সংস্থা ঢাকা আহছানিয়া মিশন সংস্থায় টিউটর হিসেবে নিয়োজিত। ছোট সিংমেচিং(১৫) বান্দরবান সদরে সাঙ্গু উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।
উল্লেখ্য যে, গত রোববার (২৩জুলাই) পাহাড় ধসের ঘটনায় আজ মঙ্গলবার সকালে বাঁশখালীর এলাকায় নদী থেকে একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশটি নিখোঁজ মুন্নী বড়ুয়া’র বলে আত্মীয় স্বজনরা শনাক্ত করেছে বলে জানা গেছে।
নিখোঁজ বাকী তিনজনকে এখনো উদ্ধার করা যায়নি। এরা হলেন রুমা‘র পোষ্ট মাষ্টার জবিউল আলম, কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা গোপাল কুমার নন্দী ও পাইন্দু ইউনিয়নের মংশৈপ্রু পাড়াপ্রধানের মেয়ে সিংমেচিং মারমা।
এদিকে নিহত পরিবার মংশৈপ্রু মারমা’র পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২০হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন