আখ চাষে লাভ বেশি

NewsDetails_01

বান্দরবানের লামায় তামাকের পরিবর্তে আখ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা । পোকা মাকড়ের আক্রমণ না থাকায় আর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার আখ উৎপাদন হয়েছে ভালো । উৎপাদিত আখের আশানুরূপ দাম পেয়েও খুশি চাষিরা ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ১০০ একর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইক্ষু গবেষণা ও উম্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় ১৮ জন কৃষক ৬ একর ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২৫ জন কৃষক ৯৪ একর জমিতে আখ চাষ করেছে। এতে বিএসআরআই-৪২ রং বিলাস, চায়না-২৮, অমৃত- ৮৪১, সিও-২০৮ ও বিএমসি-৮৬-৫৫০ জাতের আখ রয়েছে। যা উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলা উপজেলা শহরে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি হচ্ছে। আখ উৎপাদনে ঝুঁকি কম এবং অধিক ফসল উৎপাদন করে বাড়তি টাকা আয় করা যায়। যার কারণে আখের উৎপাদন খরচও কম হয়। এতে করে কৃষকরা অন্যান্য ফসলের চেয়ে আখ চাষে বেশি লাভবান হন।

এ ব্যাপারে পৌরসভা এলাকার হরিণঝিরি গ্রামের আখ চাষি আবদুল হানিফ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ইক্ষু গবেষণা ও উম্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় ৩৩শতক জমিতে বিএসআরআই আখ-৪২ জাতের আখের চাষ করেছি।জমিতে প্রায় ১০ হাজার আখ রয়েছে। এতে সব মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। আখ বিক্রি করে কমপক্ষে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পাব বলে আশা করছি।

NewsDetails_03

রুপসীপাড়া ইউনিয়নের ইব্রাহিম লিড়ার পাড়ার আখ চাষী মোর্শেদুল আলম, গজালিয়া ইউনিয়নের মানিকজন ত্রিপুরা পাড়ার চাষী সমেন্দ্র ত্রিপুরা। তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ইক্ষু গবেষণা ও উম্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্প আওতায় আমাদেরকে সার, চারা, কীটনাশক দেয়া হয়েছে। এছাড়া গুড় উৎপাদনের জন্য কড়াই, মিনি পাওয়ার ক্রাসার, সেচ মেশিন ও পাওয়ার স্পেয়ার মেশিন প্রদান করা হয়েছে।

পৌরসভার চাষী জসিম উদ্দিন, হায়দার আলী ও মোমেনা বেগম জানান, ভাদ্র থেকে আশ্বিন মাসের মধ্য চারা লাগানো হয়। চলতি মাসে আখ বিক্রির সময় হয়েছে। এখন পর্যন্ত ফলন ভালো আছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে ইক্ষু গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদার করণ প্রকল্প লামা উপজেলায় দায়িত্বরত বৈজ্ঞানিক সহকারি বসন্ত কুমার তঞ্চঙ্গা জানান, তাঁরা কয়েকজন কৃষকের মাধ্যমে পরীক্ষা মূলকভাবে এবার ৬ একর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিআরএসআই আখ-৪১ (অমৃত), ৪২, ৪৩, ৪৪ (রং বিলাস), সিও- ২০৮, চায়না, বনপাড়া গ্যান্ডারী, মিশ্রিমালা,মধুমালা, রনাঙ্গন, কিউ৬৯ ও বিএমসি-৮৬-৫৫০ জাতের আখ চাষ রয়েছে। এসবের মধ্যে চিবিয়ে খাওয়া ও চিনি বা গুড় জাত রয়েছে। গত বছর পরীক্ষামূলক চাষে উৎপাদিত আখ থেকে তিনজন চাষী ১ হাজার ৫০০ কেজি গুড় উৎপাদন করে লাভবান হয়েছেন। চলতি মৌসুমে প্রায় সাড়ে আটশ থেকে নয়শ মেট্রিক টন আখ উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে লামা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. নুরে আলম জানিয়েছেন, উপজেলার জমিগুলোতে আখ চাষের অনুকুল পরিবেশ বিদ্যমান। মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকা, ভালো জাত নির্বাচন, রোগব্যাধি কম থাকায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর ফলন বেশি হয়েছে। আগাম আখ বাজারে আসায় কৃষকরা দামও বেশি পাচ্ছে। তামাকের বিকল্প চাষ হিসেবে এখানকার মাটিতে আখ চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন