“সাংগ্রাই” উৎসবে রঙিন বান্দরবান

NewsDetails_01

বান্দরবানে সাংগ্রাই উপলক্ষে ঐতিহ্যের বর্ণিল শোভাযাত্রায় পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপিসহ অন্যরা
বান্দরবান পার্বত্য জেলায় আদিবাসী ঐতিহ্যের সাজে বর্ণিল শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে মারমা আদিবাসীদের পাঁচদিন ব্যাপি বর্ষবরণ উৎসব সাংগ্রাই শুরু হয়েছে।
এ উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার সকালে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট এর আয়োজনে বান্দরবান শহরের রাজারমাঠ থেকে বর্নিল শোভাযাত্রা বের করা হয়, পরে শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে রাজার মাঠে শেষ হয়।
এসময় প্রধান অতিথি হিসাবে র‌্যালিতে অংশগ্রহন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ণিবান চাকমা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হারুন অর রশীদ, সিভিল সার্জন উদয় শংকর চাকমা, পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ক্য সা প্রু মার্মা, লক্ষীপদ দাস, ফিলিপ ত্রিপুরা, ম্রাচা খেয়াং , উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি হ্লা গ্য চিং মার্মা, সাধারণ সম্পাদক কো কো চিং প্রমুখ। এসময় এছাড়াও মারমা,ত্রিপুরা, চাকমা, বম, লুসাই, চাক, ম্রো, খুমীসহ ১২টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির নারী পুরুষ আদিবাসী তরুন-তরুনী তাদের ঐতিহ্য অনুসারে শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহন করেন।
বান্দরবানে সাংগ্রাই উপলক্ষে ঐতিহ্যের বর্ণিল শোভাযাত্রা
বান্দরবান পার্বত্য জেলায় সংখ্যাঘরিষ্ঠ আদিবাসী মারমা, রাঙ্গামাটি’র চাকমা ও খাগড়াছড়ি’র ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসবাস। চাকমা সম্প্রদায় এই উৎসবকে বিঝু, মারমা’রা সাংগ্রাই এবং ত্রিপুরারা বৈসু বা বৈসুক বলে। ত্রিপুরাদের বৈসুর (বৈ), মারমাদের সাংগ্রায়ের (সা) চাকমাদের বিঝুর (বি) থেকে “বৈসাবি”। আর এ উৎসবকে কেন্দ্র করে বর্ষবরণের ভিন্ন আমেজে মেতে উঠে পাহাড়ের আদিবাসীরা। পাহাড়ের দূর্গম এলাকায়ও এই উৎসবের রঙ ছড়িয়ে পড়ে।
মারমা আদিবাসীদের এই জলকেলি উৎসব পাহাড়ী-বাঙালির মিলন মেলায় পরিনত হয়। দেশে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসে পর্যটকরা। শহরের রাজবাড়ীর মাঠে জলকেলি উৎসবে যোগ দিয়ে বিকাল থেকে দলে দলে মারমা তরুন-তরুণীরা নির্ধারিত মঞ্চে অবস্থান করে। এ সময় চারিদিকে মারমা সঙ্গীতের মূর্ছনা ছড়িয়ে পরে।
বান্দরবানে সাংগ্রাই উপলক্ষে ঐতিহ্যের বর্ণিল শোভাযাত্রা
তরুণীদের সামনে বিভিন্ন পাত্রে বা জলাধারে জল রাখা থাকে। তরুণেরা জলভর্তি পাত্র নিয়ে দলে দলে এসে ‘সাংগ্রাইংতে মিলে মিশে পানি খেলা খেলি ও ভাই সকলে ও বোন সকলে এসো একত্রে আনন্দ করি’। লেঃ লেঃ লেঃ.. লেঃ .. মংরো মংরোঃ.. মংরো মংরো, পেং পাদাউশে পোওয়াংরে লা সাংগ্রে, ক্যালোঃ মংরো প্যয়ে, (রাঙা পুস্প শোভিত এ মাসে আত্মহারা হয় সাংগ্রের আনন্দে এই শুভ দিনে তুলনাহীন তুমি, প্যন্ডেলে বসে স্বাগত জ্বানাও, সাংগ্রেং এর জল হীম শীতল সুন্দরী তুমি অপূর্ব) শহরের অলিতে-গলিতে এই ধরনের গান গেয়ে আদিবাসীরা এক অপরকে পানি বর্ষন করে জলকেলী বা পানি উৎসবে মেতে উঠবে। এক একজন তরুণ একজন তরুণীর দেহে জল ছিটায়। আর ঐ তরুণীও ঐ তরুণের দেহে পাল্টা জল ছিটিয়ে তার প্রতি উত্তর দেয়। এভাবে তরুণ- তরুণীরা পানি ছিটানোর মাধ্যমে জলকেলীতে মেতে উঠে।
বান্দরবানে সাংগ্রাই এর অনুষ্ঠানে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপিসহ অন্যরা।
সাংগ্রাই উৎসব উৎযাপন কমিঠির সূত্রে জানা যায়, ১৪ এপ্রিল দুপুরে উজানী পাড়ার পাশ্ববর্তী সাঙ্গুনদীতে বৌদ্ধ মূর্তিস্নান। ১৫ ও ১৬ এপ্রিল পুরাতন রাজার মাঠে মারমা আদিবাসী তরুন-তরুনীরা জলকেলিতে মেতে উঠবে, সন্ধ্যায় তারা আনন্দে মেতে উঠবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে। ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত রয়েছে মন্দিরে মন্দিরে ধর্ম দেশনা শ্রবণ, বিশেষ প্রার্থনাসহ ছোয়াইং দান অনুষ্ঠান।
সাংগ্রাই উৎসব উৎযাপন কমিঠির সাধারণ সম্পাদক কো কো চিং বলেন, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এ উৎসবে মেতে উঠেছে আদিবাসীরা।
বর্ষবরণ উৎসবকে ঘিরে তিন পার্বত্য জেলায় শুরু হয়েছে আনন্দের বন্যা। দেশের অন্যতম পর্যটন শহর বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ির বিশেষ করে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা সম্প্রদায় পুরাতন বর্ষকে বিদায় ও নবর্বষকে স্বাগত জানিয়ে বর্ষ বিদায় ও বর্ষবরণ উৎসব উদ্যাপন করে। আর এ উৎসবকে ঘিরে পাহাড়ে পর্যটকদের আগমন বাড়ার কারনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
বান্দরবানে সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষে রাজার মাঠে বয়ঃজৈষ্ঠ পূজা
এদিকে বুধবার রাতে তংচঙ্গ্যা কল্যান সংস্থার উদ্দ্যেগে জেলা শহরের বালাঘাটায় বিষু উৎসব উৎযাপন করা হয়, এসময় আদিবাসী তংচঙ্গ্যারা মেতে উঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও তাদের ঐতিহ্যবাহী ঘিলা খেলা প্রতিযোগীতায়। পাহাড়ের ভিন্নধর্মী বর্ষ বরণের এই উৎসবকে ঘিরে তিন পার্বত্য জেলায় হাজার হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে, হোটেল -মোটেল গুলোতে সিট সংকট দেখা দেয়।
বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিক উল্লাহ জানান, বর্ষবরণের উৎসবকে ঘিরে উৎসবস্থলে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন