শিক্ষক বটে ! রোয়াংছড়িতে ছাত্রকে বেধড়ক পেটালো শিক্ষক

NewsDetails_01

নির্যাতনের শিকার রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উক্যসিং মারমা
নির্যাতনের শিকার রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উক্যসিং মারমা
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী উক্যসিং মারমা (১৬) কে বেধড়ক পিটিয়েছেন বাড়িওয়ালা শিক্ষক রসিকো তঞ্চঙ্গ্যা। গত সোমবার দুপুর দেড়টায় রোয়াংছড়ির ওয়াগই পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রসিকো রোয়াংছড়ি উপজেলার আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের বিজয় পাড়ায় হাংটুক্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরে এ শিক্ষকের রোয়াংছড়িস্থ ওয়াগই পাড়ার বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণী শিক্ষার্থী উক্যসিং মারমা। গত সোমবার কথা না শুনার জের ধরে লাঠি দিয়ে তাকে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে থাকে শিক্ষক । এক সময় সে অজ্ঞান হয়ে যায়, তার শরীর জুঁড়ে জমাটবদ্ধ রক্তের দাগ।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী উক্যসিং মারমা পাহাড় র্বাতাকে জানায়, স্কুল থেকে আসার পর বাসায় ঢুকতে চাইলে বাড়ি ওয়ালা রসিকো মানা করে ও বলে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে। আমি ওনাকে বলি স্যার চলে যাবো কিন্তু কাপড় চোপড় নিতে হবে বলাতেই আমাকে লাঠি দিয়ে মারতে থাকে, এক পর্যায়ে আমি পরে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।

NewsDetails_03

শিক্ষার্থীর বাবা উবা মং মার্মা পাহাড়বার্তাকে বলেন,আমার ছেলে দোষ করে থাকলে আমাকে জানাবে কিন্তু আমার ছেলেকে এভাবে মারবে কেন? আমি ১ নং রোয়াংছড়ি ও নং আলেক্ষ্যং চেয়ারম্যানকে অবগত করেছি এবং সুষ্ঠ বিচারের দাবী জানিয়েছি।

অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষক রসিকো তঞ্চঙ্গ্যা পাহাড়র্বাতাকে বলেন, ছেলেটার সাথে আরো দুই তিন জন থাকে, তারা খুব উশৃঙ্খল, বাইরে থেকে এসে ছেলেরা মোবাইলে চার্জ দেয় আড্ডা দেয়। এ শিক্ষক আরো বলেন, তাদের বিরুদ্ধে হাঁস চুরির অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী, এসবের পর বাবাকে খবর দেওয়ার পর ও তিনি যোগাযোগ করেন নাই।

শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ এ কথা জানে কিনা জিজ্ঞেস করা হলে শিক্ষক রসিকো বলেন,ভাই সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে মানুষের মাথা ঠিক থাকে না, তাই মারছি।

নির্যাতনের শিকার রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উক্যসিং মারমা
নির্যাতনের শিকার রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উক্যসিং মারমা

আইন কি বলে?
২০১১ সালে ৯ই আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রনালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১১ ধরনের শারীরিক শাস্তি ও মানসিক শাস্তি নিষিদ্ধ করে। এই ১১ ধরনের মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে- “শিক্ষার্থীদের হাত-পা বা কোনো কিছু দিয়ে আঘাত বা বেত্রাঘাত”। এছাড়া মানসিক শাস্তির ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে- “শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে মা-বাবা, বংশ পরিচয়, গোত্র-বর্ণ ও ধর্ম সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য, অশোভন অঙ্গভঙ্গি করা বা শিক্ষার্থীদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে এমন বিষয়গুলো মানসিক শাস্তি হিসেবে চিহ্নিত হবে।”

কোন শিক্ষক অভিযুক্ত হলে কি ব্যবস্থা ?

নীতিমালা অনুযায়ী, কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ ধরণের শাস্তি দেওয়ার অভিযোগ উপস্থাপন এবং ওই শিক্ষক অভিযুক্ত হলে সরকারি কর্মচারি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এর আওতায় ব্যবস্থা নেওয়া যাবেন। প্রয়োজনে ফৌজদারি আইনেও এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে তাদের বিরুদ্ধে। এসব অপরাধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে, তা ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারি আচরণ বিধিমালার পরিপন্থী হবে এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫-এর আওতায় অসদাচরণের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। প্রয়োজনে ফৌজদারি আইনেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
এছাড়া ২০০৮ সালে শিক্ষামন্ত্রনালয় শারীরিক শাস্তি দেওয়া বন্ধ করতে এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিয়েছে। যাঁরা শারীরিক শাস্তি দেবেন তাঁদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১৮৬০, ১৯৭৪ সালের শিশু আইন এবং ক্ষেত্রমতে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ গ্রহণেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন