লামায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জায়গায় নেতাদের অবৈধ দোকান !

NewsDetails_01

লামায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জায়গায় নেতাদের অবৈধ দোকান
লামায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জায়গায় নেতাদের অবৈধ দোকান
বান্দরবানের লামার আজিজনগর ইউপি’র ‘চাম্বি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের’ জায়গা অবৈধ দখলের অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ের সামনে বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠেছে ১৩টি দোকান ঘর। স্কুলের জায়গায় দোকান নির্মাণের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়ের মোট জায়গার পরিমাণ ১একর ৯৮শতক। বিদ্যালয়ের ২টি ভবনে ৮টি শ্রেণী কক্ষে চলছে নিয়মিত পাঠদান। অধিক সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী হওয়ায় এক শ্রেণীতে শতাধিক ছেলেমেয়ে একসাথে ক্লাস করতে দেখা যায়। প্রচুর ছেলেমেয়েকে একসাথে পাঠদানে সমস্যা হয় বলে জানায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া রয়েছে আসবাব পত্রের সমস্যা। শ্রেণী কক্ষ বর্ধিত করার খুবই প্রয়োজন বলে জানান স্কুলের অভিভাবকরা।
আরো জানা যায়, বিদ্যালয়ের সামনের দিকে নিজস্ব জায়গায় প্রধান ফটকের পাশ গড়ে উঠেছে ১৩টি দোকান ঘর। যার মধ্যে ৬টি দোকানের ভাড়া বিদ্যালয় পায় আর বাকী ৭টি দোকার ঘর বিভিন্ন দলের প্রভাবশালী লোকজন অবৈধভাবে দখল করেছে রেখেছে। যার মধ্যে সাবেক বিএনপি নেতা এএসএম আবু জাহাঙ্গীর ৪টি, শ্রমিকলীগ নেতা মুন্না ১টি, বিএনপি নেতা আব্দু লতিফ ১টি ও ১টি বিএনপি অফিস করে দখল করেছে।
বিএনপি’র অফিসটি পরিত্যাক্ত পড়ে থাকতে দেখা যায়। দখলদাররা প্রত্যেকটি দোকানঘর সালামী নিয়ে মাসিক ভাড়ায় বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে ভাড়া দিয়েছে। অবৈধ দখলদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় কিছুই করা যাচ্ছেনা বলে জানায় বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে দখল উচ্ছেদে বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ইকবাল আহছান বাদী হয়ে ১৯৯৮-৯৯ সালে লামা কোর্টে মামলা করলে প্রতিপক্ষ মামলাটি জর্জ কোটে নিয়ে যায়।
দখলের বিষয়ে এএসএম আবু জাহাঙ্গীর জানান, আমি বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতির সাথে বৈধভাবে ভাড়া চুক্তি করে দোকান পরিচালনা করছি।
এবিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াছমীন বলেন, বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে জায়গা অবৈধ দখল উচ্ছেদে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগে আমি লিখেছি, কোন প্রতিকার পায়নি।
তিনি আরো বলেন, অবৈধ দখলদার এএসএম আবু জাহাঙ্গীর বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন কোম্পানীর ভগ্নিপতি হয়।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও আজিজনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন কোম্পানী বলেন, ১৩টি দোকান প্লটের মধ্যে যদি ৬টি বৈধ হয় তাহলে বাকী ৭টিও বৈধ। বিগত সময়ে ভাড়া দেয়া দোকানের আয়ের কোন হিসাব স্কুলের কর্তৃপক্ষ দেখাতে না পারায় আমি নতুন কমিটির সদস্যদের মতামত নিয়ে ৬টি দোকান মাসে ৫শত টাকায় ভাড়া দিয়েছি। প্রতিমাসে ভাড়ার টাকা স্কুলের একাউন্টে জমা হয়।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার যতীন্দ্র মোহন মন্ডল বলেন, এবিষয়ে লামা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দিয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত শেষে তারা প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
বান্দরবানের লামা উপজেলার সর্ববৃহৎ প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাম্বি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। আবাসিক অনাবাসিক মিলে স্কুলে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ২৭৯জন। দীর্ঘদিন যাবৎ বিদ্যালয়ের ধারাবাহিক ভাল ফলাফল ও মানসম্মত লেখাপড়ার জন্য স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে কুঁড়িয়েছে নানান সফল অর্জন। বিগত সময়ের সাথে সমন্বয় রেখে ২০১৬ সালের পিএসসি পরীক্ষায় ৪২জন ছাত্র-ছাত্রী এ-প্লাস পেয়েছে। লামা উপজেলার একমাত্র আবাসিক সুবিধা সম্মত চাম্বি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দূর্গম এলাকার ৮০জন উপজাতি ও অউপজাতি শিশু ছাত্রাবাসে থেকে লেখা পড়া করে।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদ মাহমুদ বলেন, অতি শীঘ্রই শিক্ষা কমিটির সভা করে সমস্যাটির সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

আরও পড়ুন