রোহিঙ্গা প্রবেশে বাধা দিতে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া মেরামত করছে মিয়ানমার

NewsDetails_01

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া
মিয়ানমার সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া কেটে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পার হয়ে আসে। আর বাংলাদেশে আসা মিয়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গারা যাতে ফের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে না পারে সেই জন্য সীমান্তের নষ্ট হওয়া কাঁটা তার পুনরায় মেরামত করছে মিয়ানমার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যকার সীমান্তপথ রয়েছে ২৭১ কিলোমিটার। এরমধ্যে ২০৮ কিলোমিটার স্থলপথ ও ৬৩ কিলোমিটার জলসীমান্ত। পাঁচ বছর আগে থেকেই মিয়ানমারের অভ্যন্তরের অধিকাংশ সীমান্তজুড়ে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছে মিয়ানমার। গত তিন দিন ধরে তারা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে ক্ষতিগ্রস্ত কাঁটাতারের বেড়া মেরামত করতে দেখেছে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা। আজ সোমবারও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, তমব্রু ও জলপাইতলী সীমান্তে ঘুরে এসময় দৃশ্য দেখা গেছে।
স্থানীয়দের ধারণা, মিয়ানমার থেকে সম্প্রতি পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা আর যাতে আর মিয়ানমারে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য ক্ষতিগ্রস্ত কাঁটাতারের বেড়া মেরামত করা হচ্ছে। মিয়ানমার সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, সীমান্ত ঘেঁষে তাঁবু তৈরি করে শ্রমিক নিয়ে কাঁটাতারের বেড়া মেরামত করা হচ্ছে। সীমান্তের যেসব পয়েন্টে কাঁটাতারের বেড়া ক্ষতিগ্রস্ত করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মূলত সেসব পয়েন্টগুলোয় মেরামত করা হচ্ছে। একইসঙ্গে কাঁটাতারের বেড়ার সঙ্গে লাগোয়া সীমান্ত পিলারও পরিবর্তন করা হচ্ছে। যাতে করে কোনও রোহিঙ্গা মিয়ানমারের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে।
ঘুমধুম ও তমব্রু সীমান্তে বসবাসকারী নুরুল আবছার জানিয়েছেন, গত তিন দিন ধরে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী তাদের সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া মেরামত করছে। এসব কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আসছে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে। তারা আরো বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সীমান্তে তাদের তৎপরতা বেশি দেখা যাচ্ছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়া খালের পাড় ঘেঁষে নো-ম্যানস ল্যান্ডে গড়ে উঠেছে একটি ছোট রোহিঙ্গা বস্তি। এই বস্তিতে প্রায় ১৫হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। ওই বস্তিতে থাকা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক আব্দু শুক্কুর, ছৈয়দ আলম, কালো মিয়া জানান, রাখাইন রাজ্যের গ্রামগুলো এখন সবই ফাঁকা। সেখানে কোনও বসতিতে মানুষ নেই। যা কিছু লোক এখনও রয়েছে, তারাও বিভিন্ন বনে জঙ্গলে লুকিয়ে আছে। এ কারণে আর কোনও রোহিঙ্গা যাতে মিয়ানমারে ফিরে যেতে না পারে সে ব্যাপারে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে মিয়ানমার। এরই ধারাবাহিকতায় সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া মেরামত, বিভিন্ন প্রবেশদ্বারে স্থল মাইন পুঁতে রাখা ও আকস্মিকভাবে সীমান্তে টহল জোরদারসহ নানা কার্যক্রম করে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গারা জানান, সীমান্তের খুব কাছে অবস্থান নেওয়ার একটি উদ্দেশ্য ছিল যেন রাখাইনের পরিস্থিতি সামান্য শান্ত হলে তারা দেশে ফিরে যাবেন। তাদের কারও কারও বাড়ি সীমান্তের এক থেকে তিন কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে। এমনিতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীদের ফাঁকি দিয়ে তারা দিনে একবার হলেও নিজের ক্ষতিগ্রস্ত বসতিগুলো দেখতে যেতো। আর এখন কাঁটাতারের বেড়া আরও মজবুত করায় সেটি আর সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, ‘মিয়ানমার কাঁটাতারের বেড়া মেরামত করছে সেটি তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। সেখানে আমাদের কোনও হস্তক্ষেপ নেই। তবে আমরা আমাদের সীমান্তে খুব সতর্কাবস্থায় আছি। সীমান্তের প্রতিটি পয়েন্ট সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে।

আরও পড়ুন