দুর্গম পাহাড়ে আরো ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ

NewsDetails_01

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা সদর থেকে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মুরুংসহ একাধিক ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠীর বসবাস থাকলেও এক সময় সেখানে কোনপ্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। ২০১১ সাল থেকে জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিলের (ইউএনডিপি) আর্থিক সহায়তায় ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় আলীকদম উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। গত ২০ ফেব্রæয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে আলীকদম উপজেলার এই ২০টি বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের ঘোষণা করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউএনডিপি’র ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক শিক্ষা সহায়তা’ প্রকল্পের আওতায় এসব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৫ সালের জুনে শেষ হলে মাঝপথে এসব বিদ্যালয় কিছুটা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। কিন্তু বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের হস্তক্ষেপে আবার প্রাণ ফিরে পায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো। জেলা পরিষদের তৎপরতায় গত ২০ ফেব্রæয়ারি আলীকদমের দুর্গমে স্থাপিত ২০টি বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের ঘোষণা দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, ইউএনডিপি’র ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক শিক্ষা সহায়তা’ প্রকল্প শুরু হয় ২০০৮ সালে। শুরুতে এ প্রকল্পের নাম ছিল ‘মাতৃভাষাভিত্তিক শিক্ষা প্রকল্প’। ২০১০ সালের জুলাই মাসে ইউএনডিপি প্রকল্পটির পরিচালনার ভার পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করে। তখন প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক শিক্ষা প্রকল্প’।
আলীকদম উপজেলা শিক্ষা বিভাগ সূত্র জানায়, ইতোপূর্বে আলীকদমে ৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। সরকারি প্রজ্ঞাপনে আরো ২০টি বিদ্যালয় যোগ হয়ে সর্বমোট ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি হয়েছে। জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বাসুদেব কুমার সানা বলেন, ইউএনডিপি স্থাপিত বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ হওয়ায় উপজেলার দুর্গম জনপদে শিক্ষার আলো দ্রæত প্রসারে সহায়ক হবে। এসব বিদ্যালয় সরকারিকণ না হলে অন্তত আরো কয়েকযুগ ধরেই ওইসব এলাকার জনগোষ্ঠীর শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থাকতো। ইউএনডিপির প্রকল্প শেষ হওয়ার পর বেতন ভাতা না পেয়ে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে কিছুটা হতাশা ছিল। তবে পার্বত্য জেলা পরিষদের তৎপরতায় এসব বিদ্যালয় সম্প্রতি জাতীয়করণ হওয়ায় সে সব বিদ্যালয়ে আবারো প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
কুরুকপাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্রাতপুং মুরুং সাংবাদিকদের বলেন, আগে আমার পুরো ইউনিয়নেই ছিল মাত্র একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে সদাশয় সরকারের ঘোষণা মতে আমার ইউনিয়নে আরো ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হয়েছে। এরফলে শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া মুরুংসহ অন্যান্য নৃ-জনগোষ্ঠী ও বাঙ্গালী ছেলে মেয়ে শিক্ষার সুযোগ পাবে। সরকারি এই আনুকুল্যে আমার ইউনিয়নবাসী খুবই খুশী।
অপরদিকে, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষার উন্নয়নে সরকারি এ ঘোষণাকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ মনে করেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর প্রতিনিধি জামাল উ্িদ্দন। আওয়ামী লীগের এ নেতা মনে করেন, স্থানীয় উদ্যোগে কখনো দুর্গমের এসব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করতো না। এ সরকার শিক্ষাবান্ধব। তাই দুর্গম জনপদের বিদ্যালয়গুলোকে সহজশর্তেই জাতীয়করণ করে সরকার পার্বত্যবাসীকে শিক্ষিত করার সুদুরপ্রসারি উদ্যোগ নিয়েছে।
এ বিষযে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রকল্প তত্ত¡াবধায়ক উইলিয়াম মার্মা সাংবাদিকদের জানান, ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ ও জেলা পরিষদের সার্বিক আনুকুল্যে ২০১০ সালে আলীকদম উপজেলার দুর্গম ও বিদ্যালয়বিহীন পাহাড়ি গ্রামে ২০টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিগত ৬ বছর ধরে এ সব বিদ্যালয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের নির্দেশনা ও সরকারি নিয়ম মেনেই শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। প্রতিবছর পিএসসি পরীক্ষায় পাসের হারও সন্তোষজনক।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় শর্ত পালন করেই এসব বিদ্যালয় জাতীয়করণ হয়েছে। এ সব বিদ্যালয়ে ইতোপূর্বে বিধি মোতাবেক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় কিছু ব্যক্তি এ সব বিদ্যালয়ের নিয়োগ নিয়ে মিথ্যাচার করে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও সরকারকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র করছে।
আলীকদম উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাইনথপ ম্রো বলেন, ‘প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকার নৃগোষ্ঠীর শিশুরা মৌলিক অধিকার ‘শিক্ষা’ থেকে বঞ্চিত ছিল। ইউএনডিপি দুর্গম এলাকায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে সে সুযোগ নিশ্চিত করেছে। সরকার এ সব বিদ্যালয় জাতীয়করণ করায় পাহাড়ি জনপদে শিক্ষার আলোকশিখা নতুন করে প্রজ্জ্বলিত হবে।

আরও পড়ুন