চার বছরেও শেষ হয়নি লামার পানি শোধণাগারের নির্মাণ কাজ

NewsDetails_01

লামায় অসমাপ্ত পানি শোধণাগারের একাংশ
প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুম এলেই বান্দরবান সদর ও লামা পৌরসভা এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়। আর এ সংকট মেটাতে পানি শোধনের প্রকল্প গ্রহন করা হলেও অর্থাভাবে আলোর মুখ দেখছেনা লামার পানি শোধাণাগার প্রকল্প।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লামার পানি শোধণাগারের ছয় কোটি টাকার প্রাক্কলনে গৃহীত প্রকল্পটি রিভাইজ করে ৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু পরিকল্পনা ও অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক রিভাইজের টাকা অনুমোদন না দেওয়ায় বর্তমানে এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের লামা পৌরসভার অংশে প্রায় ৪ কোটি টাকা খরচ করার পরও শোধনাগার থেকে পানি সরবরাহের সুফল পাচ্ছে না স্থানীয় জনসাধারণ। দীর্ঘ দিন ধরে প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকায় বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্টসহ চুরি হয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মনজুর আলম জানায়, দীর্ঘ দিন ধরে প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকায় বিভিন্ন জিনিসপত্র নষ্ট ও চুরি হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া শেওলায় ভরে যাচ্ছে শোধণাগারের টাংকি।
আরো জানা গেছে, এলাকাবাসীর দাবিতে এ সংকট লাগবে নদীর পানি শোধনের মাধ্যমে এলাকায় সরবরাহের জন্য শোধনাগার নির্মাণের বরাদ্দ প্রদান করে সরকার। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুরের তদবিরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় প্রকল্পটি গ্রহণ করে বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রতন সেন তঞ্চগ্যার পক্ষে নিজাম উদ্দিন বলেন, পানি শোধনাগার প্রকল্পের মেকানিক্যাল, মিশিনারিজ ও ইলেকট্রিকেল কোনো কাজ করা হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে লামা পৌরসভা এলাকার টিটিএন্ডডিসি গ্রামে প্রকল্পটি স্থাপন করা হয়। গৃহীত প্রকল্পের আওতায় মাতামুহুরী নদী থেকে পানি নিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ১০০ ঘনমিটার ক্ষমতাসম্পন্ন পানি শোধনাগার নির্মাণ ও ৪টি প্যাকেজের মাধ্যমে পাইপ লাইন স্থাপন কাজের কার্যাদেশ প্রদান করে কর্তৃপক্ষ। বান্দরবান জেলা সদরস্থ বালাঘাটার মেসার্স রতন সেন তঞ্চগ্যা নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৫টি প্যাকেজেরই কার্যাদেশ পায়। পাইপ লাইন স্থাপনের ৪টি প্যাকেজের মধ্যে ৮৮ লাখ ৬১ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩টি প্যাকেজের কাজ শেষ হয়েছে বলে জানায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় ৪২ লাখ ৪৯ হাজার টাকার কার্যাদেশ দেওয়া অপর প্যাকেজের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মুজিবুর রহমান জানান, শোধনাগারের নির্মাণ কাজ শেষ করতে গিয়ে সিডিউলের বাহিরে বাস্তবতার নিরিখে অনেক কাজ করতে হবে। যার কারণে অতিরিক্ত ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা প্রকল্প ব্যয় বেড়ে গেছে। ঠিকাদার বিল না পাওয়ায় শোধনাগার হস্তান্তর ও পাইপ লাইন স্থাপন কাজ শেষ করছে না।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষ না হবার কারনে জেলার লামা উপজেলার মানুষ শুস্ক মৌসুমে তীব্র পানি সংকটের মধ্যে দিন পার করে। দ্রæত এই সমস্যার সমাধান হলে জেলার লামা পৌর এলাকার প্রায় ৩০ হাজার বাসিন্দার পানি সংকটের দীর্ঘদিনের সমস্যা নিরসন হবে বলে মনে করছে তার।
লামা পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে আরো টাকার প্রয়োজন রয়েছে। পানি শোধনাগারের কাজ শেষ হলে এলাকার মানুষ উপকৃত হবে।
বান্দরবান জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নির্মাণ খরচ বেড়ে গেছে। রিভাইজ প্রাক্কলন করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। আশা করছি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই অর্থ মন্ত্রণালয় বর্ধিত অর্থ ছাড় করবে।

আরও পড়ুন