মন ভেসে যায় সাদা মেঘের ভেলায়…. নীলগীরির নীলে

NewsDetails_01

porjatan pic-2নিবাবণ বড়ুয়া। বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার বাসিন্দা। পূরোদমে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হয়ে ক্যারিয়ারের শুভ সূচনা করেন। সর্বশেষ বাংলাদেশ প্রতিদিনে কাজ করেছেন সাংবাদিক নিবারণ বড়ুয়া। পেশাগতভাবে কিছুটা বাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত থেকেই এক সময়ের প্রিয় ঠিকানা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন তিনি। পেশাগত দায়িত্বের বাইরেও নিজের অবস্থান থেকে প্রিয় বান্দরবান, এর উদার সবুজ প্রকৃতি এবং স্থানীয়ভাবে জনজীবনের বিভিন্ন সমস্যা বা ছড়িয়ে থাকা সম্ভাবনা গুলো যাতে আলোর মুখ দেখতে পায় এজন্য তার আন্তরিক প্রচেষ্টার অভাব ছিলনা। আগামীতেও পাহাড়বার্তার সাথে থেকে পাহাড়ের প্রকৃতি ও জীবনের মাঝে নিজের অস্তিত্বের প্রকাশ ঘটাতে চান তিনি। বান্দরবান ঘুরে গিয়ে পাহাড়বার্তার জন্য লিখেছেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক নিবাবণ বড়ুয়া।
একটু দেরিতে হলেও ব্যস্ততাকে ফাঁকি দিয়ে আমার প্রকৌশলী বন্ধু বাবলু ভাইকে সাথে করে বাইকে পাড়ি জমালাম আমার স্বপ্নের ঠিকানা প্রিয় বান্দরবানের পথে। দিনটি ছিল গত বৃহস্পতিবার, পরের দিন ছুটি তাই কিছুটা টেনশন ফ্রি। সন্ধ্যা ৬টা। দুইটি বাইকে চট্টগ্রাম থেকের্ ওনা হয়ে কাপ্তাই সড়ক ধরে রাত আটটায় আমরা পৌছে গেলাম লিচু বাগান। তারপরে চন্দ্রঘোনা ফেরি পার হয়ে কর্ণফুলী নদীর ওই পাড়ে পিসির বাড়ীতেই উঠলাম। টিনের চালে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির শব্দ। ঠান্ডা প্রকৃতির পরিচ্ছন্ন হাওয়া। আরামের ঘুম। ভোর হলো। পাখির গানে ঘুম DSC04295ভাঙ্গলো। সকাল বেলা সাতার কাটতে নামলাম কর্ণফুলিতে। নদীর দুই পাশে অসাধারণ দৃশ্য। এক পাড়ে কৃষি ফার্ম। ওপাড়ে কে পি এম পেপার মিল। নদীতে লাল নীল পাল তোলা নেীকা। আদিবাসি নারীরা নৌকার অপেক্ষায়। মনে পড়ে যখন তখন আমার শৈশব-কৈশোরের দিন গুলোর কথা। পাহাড়-নদী-ঝর্ণাধারা মাঝে সবুজ আর নীলের সমারোহ। সকাল ৮ টা। আমাদের সঙ্গী হলেন আরো একজন। চন্দ্রঘোনা থেকে আমরা রওনা হলাম বান্দরবানের দিকে। উদ্যেশ্য নীলগিরি। রাইখালী হতে বাঙ্গালহালিয়া হয়ে বান্দরবান যেতে দেড় ঘন্টা সময় লাগলো। আমরা দশটার সময় বান্দরবান শহরে পৌছে গেলাম। বান্দরবান থেকে আমাদের সঙ্গী হলেন আরও একজন। যিনি প্রায় সময় ওইপথে যাতায়াত করেন।
সকাল ১১ টায় বান্দরবান উপজেলা পরিষদ থেকে নীলগীরির উদ্যেশ্যে যাত্রা করলাম। রুমা থানছি বাস স্টেশন থেকে কিছু দুর গিয়েই পাহাড়ী খাড়া রাস্তা। দুই পাশে ফলের বাগান। একটু পরেই পুলিশ চেকপোষ্ট। পুলিশ জানতে চায়নি আমরা কোথায় যাব। তবে আমরা দাড়িয়েছি প্রকৃতির সেীন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে। পাহাড়ের ভিতর দিয়ে আকাবাঁকা রাস্তা। দুরে শঙ্খ নদী। চারপাশে সবুজ বনানী। দুর থেকে মনে হয় বিস্তীর্ণ পাহাড়ের বুকে একটি হৃদয়। আমরা বেশ কিছু ছবি তুললাম। সেই পুলিশ বক্স থেকে নীলগিরির দুরত্ব ৪৫ কিলোমিটার। আমাদের গাড়ি চলছে। তবে গতি কম। পাহাড়ী উচু নিচু রাস্তা। কখনও বন্ধুর।

রাস্তা গুলো দুর থেকে দেখলে মনে হয় একটি বুড়ো অজগর পাহাড়ের ঢাল বেয়ে এগিয়ে চলছে সামনের দিকে। রাস্তার দুই ধারে গভীর খাদ। দুরে সবুজ বনের উপর সাদা মেঘের ভেলা। দুরে দেখা যায় কোথাও উঁচু উঁচু পাহাড়। আবার পাহাড় সমুদ্রের মিলন।

NewsDetails_03

বাঁকে বাঁকে পাহাড়িদের গ্রাম। ছোট ছোট টং দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছে আদিবাসী বয়োবৃদ্ধরা। রাস্তার ধারে ন্যাড়া পাহাড়। পাহাড়ে জুম ক্ষেত। দুর থেকে জুমের সবুজ বেষ্টনী দেখলে মনে হয় চিরুণী দিয়ে পাহাড়ের মাথা আঁচড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে মনযোগ দিয়ে কাজ করছে আদিবাসী তরুণ-তরুণীরা। মাঝে মধ্যে দুই একটি গাড়ির দেখা মেলে। তবে সেই সব গাড়ির গতি বেপরোয়া। গাড়ির খোলা ছাদে ভয়ার্ত চোখে দাড়িয়ে আছে পর্যটকরা। দুর পাহাড়ে আম, আনারসের বাগান। ফলভর্তি বাগান থেকে ট্রাকে বোঝাই করা হচ্ছে ফল। পথের দুই পাশে ছুটাছুটি করে বনমোরগ আর শুকরের দল। দুপুর আড়াইটা। আমরা পৌছে গেলাম নীলগিরি। অসাধারণ প্রকৃতি।

চারিদিকে পাহাড় আর পাহাড়। পুর্বদিকে তাকালে সবুজের মাঝে এক খন্ড নদী। এ যেন পাহাড়ের সাথে নদীর প্রেম। সবুজ প্রকৃতির হৃদপিন্ড। সমস্ত দু:খ ভুলে মেঘের ভেলায় আড়াল হলাম কিছুক্ষন। প্রকৃতি প্রেমের মুগ্ধতা আমাদের টেনে নিয়ে গেল আরো দুরে।

আমরা চলে গেলাম থানছি। পাহাড়ি রাস্তা ধরে বিদ্যুতের লাইন যাচ্ছে। সদ্য তৈরী হওয়া একটুকরো শহর। সাড়ে তিনটায় আমরা পৌছে গেলাম থানছি। ক্ষুধার রাজ্যে আমাদের পৃথিবী গদ্যময়। এক হোটেলে ভাত খেতে বসলাম। পাহাড়ী ছোট মরিচ আর পেয়াজু । পেয়াজ কাটা দিয়ে ভাত এ যেন অমৃত। নিজ চোখে দেখলাম আমাদের প্রাণের নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধন করা থানছি ব্রিজ, থানছি-আলিকদম সড়ক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়নের কাজের উদ্বোধনী ফলক। শুনেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেই দুর্গম এলাকায় পাহাড়ী শিশুদের সাথে আলাপও করেছেন। শিশুদের কথায় তাদের একটি দাবি একমাত্র উচ্চ বিদ্যালয়টি সরকারি করে দিয়েছেন। বর্ষা মৌসুম হলেও সাঙ্গু নদীর পানি কমে এসেছে। পাহাড়ে বৃষ্টি নেই। তাই নদীতে পানি নেই। বিকাল চারটা। ডিম পাহাড় ঘুরে আমরা রওনা হলাম বান্দরবানের উদ্যেশ্যে। অসাধারন প্রকৃতি। অসাধারণ সৌন্দর্য্য। তার সাথে যোগ হয়েছে উন্নয়ন। সেই দুর্গম অঞ্চলের উন্নয়ন দেখলে সত্যিই মনে হয় এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রাণের স্বদেশ বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন