সাড়ে ১৯ হাজার একর বনাঞ্চল অরক্ষিত : লামা বনবিভাগে সংরক্ষিত বনাঞ্চল গঠন আলোর মুখ দেখছে না

NewsDetails_01

news---14পার্বত্য বান্দরবানের লামা বন বিভাগের অধীনে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার একর ভূমি নিয়ে সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চল গঠন প্রক্রিয়া থমকে আছে শান্তি চুক্তির শর্তের কারনে। বর্তমানে এসব বনের কর্তৃত্ব নেই বন বিভাগের হাতে। আর এ সুযোগে প্রস্তাবিত এসকল বনাঞ্চল থেকে মূল্যবান বনজ সম্পদ ভূঁয়া জোতপারমিট দেখিয়ে কাঠ পাচার অব্যাহত রেখেছে কাঠ চোর সিন্ডিকেট। এতে সরকার একদিকে কোট কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে বেহাত হয়ে যাচ্ছে প্রস্তাবিত জায়গায় বন বিভাগের সৃজিত বাগান। প্রস্তাবিত সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষিত না হওয়ায় কাঠচোরদের বিরুদ্ধে বন বিভাগ আদালতে মামলা করলেও অশ্রেণীভূক্ত বন দেখিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে কাঠ চোর সিন্ডিকেট। এই নিয়ে বন কর্মকর্তা ও সচেতন মহলের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব বন আইনের ২০ ধারা মতে লামা বনবিভাগের অধীনে ১৯ হাজার ১৩৫ দশমিক ১৭ একর জায়গা সরকারী সংরক্ষিত বন হিসাবে জরুরী ঘোষনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বান্দরবান জেলা প্রশাসকে চিঠি পাঠিয়েছেন। ২০০৩ সালের ৭ডিসেম্বর পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব সাবিহউদ্দিন তৎকালিন বান্দরবান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাফিজুর রহমানকে বন গঠনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানিয়ে এই চিঠি লিখেন।
চিঠিতে উল্লেখ করেন, ১৯২৭ সালের বন আইনের (এপ্রিল/২০০০ ইং পর্যন্ত সংশোধিত) ৪ ধারা অনুযায়ী লামা বন বিভাগ এর অধীনে ১৯ হাজার ১৩৫ দশমিক ১৭ একর ভূমিতে সংরক্ষিত বন গঠনের জন্য এই মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়েছে। বন আইনের ২০ ধারা মতে উক্ত বনাঞ্চল সংরক্ষিত বন হিসাবে ঘোষিত না হওয়ায় বন বিভাগের সৃজিত বিদ্যমান বন বিভিন্নভাবে বেহাত হচ্ছে। তাই জরুরীভিত্তিতে লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ির এই বনাঞ্চলকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষনার জন্য অনুরোধ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লামা বন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বন মন্ত্রণালয় থেকে এই পত্র লিখার পরেও বান্দরবান জেলা প্রশাসক বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানায় বন বিভাগের সৃজিত প্রায় তিন হাজার একর বন লিজ প্রদান করে। ঐসব বনের কোন কর্তৃত্ব নেই বন বিভাগের হাতে। বন বিভাগ কোটি-কোটি টাকা খরচ করে বানয়ন করলেও জেলা প্রশাসক এসব বনকে অশ্রেণী ভূক্ত বন উল্লেখ করে জোত পারমিট প্রদানের জন্য বন বিভাগে প্রেরন করছেন। বন বিভাগ মিথ্যা জোতপারমিট প্রদানে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে বিভিন্ন ব্যক্তি লামা বন বিভাগের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে ৭/৮টি মামলা করেছেন। যার মধ্যে চারটি মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পর বিবাদীপক্ষ আবারো আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রিট পিটিশন করার প্রচেষ্টা করছে।
লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাঈদ আলী বলেন, বন বিভাগের সৃজিত বন থেকে কাঠ কেটে পাচারের কারনে বন কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন সময় কাঠ জব্দ করেন। এসব কাঠ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে থানায় ও আদালতে প্রায় সাড়ে চারশত মামলা করা হয়েছে। প্রায় মামলাই আদালত অশ্রেণীভূক্ত বনের কাঠ বলে খারিজ করে দিচ্ছে। ফলে শত চেষ্টা করেও আর বন রক্ষা করা যাচ্ছে না। বন কর্মকর্তা আরো বলেন, লামা বন বিভাগের অধীনে সৃজিত বাগানের কাঠ কেটে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি ভূঁয়াজোত পারমিট প্রদানের জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন। আর এই জোতপারমিট প্রদানের জন্য বান্দরবান জেলা প্রশাসক সুপারিশ করেছেন লামা বন বিভাগকে। তবে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের প্রেরিত চিঠি মতে জেলা প্রশাসক ১৯ হাজার ১৩৫ দশমিক ১৭ একর ভূমিতে সংরক্ষিত বন গঠনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ভূমি , পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে এই ব্যাপারে বন মন্ত্রণালয়ে অনেক লিখালিখি হয়েছে। তবে এই ব্যাপারে কারো কোন কর্নপাত হয়নি।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক কে এম তারিকুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রণালয়ের পত্র পেয়েছি। কিন্তু পার্বত্য শান্তি চুক্তির শর্তালোকে পার্বত্য ভূমি সমস্যার সমাধান না পর্যন্ত সরকারী সংরক্ষিত বন গঠন সম্ভব নয়, এই ব্যাপারে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে বন বিভাগ ইচ্ছে করলে প্রস্তাবিত ভূমিতে সৃজনকৃত বন সংরক্ষনের ব্যবস্থা করতে পারেন।

আরও পড়ুন