পর্যটক নিরাপত্তায় টুরিষ্ট পুলিশ

NewsDetails_01

news9কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। এখানে ২০০ সদস্য কাজ করেন। এছাড়া চট্টগ্রামে ৭০ জন, টেকনাফে ১৫, পতেঙ্গাতে ১৫, সিলেটে ৪০, মৌলভীবাজারে ৪০, কুয়াকাটায় ৪০ এবং বান্দরবানে ১৫ জন ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন।

পর্যটনে সম্ভাবনাময় বান্দরবান পার্বত্য জেলা। দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পরেই এর অবস্থান। যত দিন যাচ্ছে, ততই এখানকার পর্যটন শিল্পের বিকাশ হচ্ছে। বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা। কিন্তু তাদের জন্য তেমন নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই।

পার্বত্য এই জেলায় নীলগিরি, নীলাচল, চিম্বুক, বগালেক, কেউক্রাডং, তাজিং ডং, শৈলপ্রপাত, ন্যাচারাল পার্ক, প্রান্তিক লেক, মেখলা, স্বর্ণমন্দিরসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক বান্দরবানের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য আসেন। অথচ তাদের জন্য রয়েছে মাত্র ১০ জন ট্যুরিস্ট পুলিশ!

দেশি-বিদেশি পর্যটকদের রাত্রি যাপনের জন্য হোটেল, মোটেল, গ্রেস্ট হাউজ থেকে শুরু করে নানা রিসোর্ট তৈরি করা হলেও এসকল পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার কোনো ট্যুরিস্ট পুলিশ নেই। তবে সরকার ট্যুরিস্ট ভবন নির্মাণ করে দিয়েছে। রয়েছেন একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও। তার রয়েছে মাত্র ১০ ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে অনেকের সাপ্তাহিক ছুটি, কেউ আবার অসুস্থ। এক অর্থে ট্যুরিস্ট পুলিশ নেই। সব মিলিয়ে পর্যটন সম্ভাবনময় বান্দরবানে নিরাপত্তা নেই বললেই চলে।

অনেক পর্যটক একবার এসে দ্বিতীয়বার আসতে চাচ্ছেন না। কারণ হিসেবে মানিকগঞ্জ থেকে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৫২ কিলোমিটার দূরে ২৬শ’ ফুট উঁচুতে নীলগিরি পাহাড়। এখানেই সবচেয়ে বেশি পর্যটক যান। কোনো পর্যটকের সমস্যা হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই এখানে একবার কেউ আসলে দ্বিতীয়বার আসতে চাচ্ছেন না।

NewsDetails_03

লালমনিরহাটের তুষভাণ্ডার এলাকা থেকে এসেছিলেন নবদম্পতি আশুতোষ রায় ও রীনা রায়। হানিমুনে তারা এসেছেন ১ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে। বান্দরবান শহরের একটি রেস্ট হাউজে উঠেছেন। প্রথমে তারা স্বর্ণমন্দির দেখতে জান। স্ত্রীও স্বর্ণালংকার পরে এসেছেন। বিকেলে ২০ থেকে ২৫ বছরের দুটি ছেলে তাদের ফলো করে। এতে তাদের মনে শঙ্কা দেখা দেয়। দ্রুত রেস্ট হাউজে ওঠেন। দ্বিতীয় কোনো পর্যটন কেন্দ্রে আর যাননি তারা। পরের দিন সকালেই লালমনিরহাটের উদ্দেশে রওনা দেন। শুধু এই নব-দম্পতিই নন, তাদের মতো অনেকেই সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। রশিদ আহামদ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, বান্দরবানে নিরাপদ পর্যটন শিল্পের বিকাশে ট্যুরিস্ট পুলিশের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। এ জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীসহ সকল সংস্থার তৎপরতা অব্যাহত রাখা জরুরি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী বান্দরবানে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখা, পর্যটকদের নিরাপত্তা বিধানে যে কোনো ধরনের সহিংস ঘটনা রোধে শান্তি বিনষ্টকারী ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং উপজেলা, পৌরসভা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গঠিত সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটির সভা নিয়মিত করা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ আছে।বান্দরবানে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন তথ্য বাতায়ন খোলা হয়েছে। এখন যে কেউ তথ্য বাতায়নে প্রবেশ করে বিভিন্ন সেবা ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারছে, যা বান্দরবানে আগত পর্যটকদের তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে আরও সহজ ভূমিকা রেখে চলেছে। কিন্তু ট্যুরিস্ট পুলিশের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

বান্দরবান নেজারত ডেপুটি কালেক্টর অফিসে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার হোসাইন মো. আল মুজাহিদ বলেছেন, বান্দরবান পর্যটন কেন্দ্র বিশেষ করে মেখলা-নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিদিন সাত থেকে আট হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন। এ ছাড়া নীলগিরি, চিম্বুক, লেক, কেউক্রাডং, তাজিং ডং, শৈল প্রভাত, ন্যাচারাল পার্ক, প্রান্তিক লেক এইসব পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার পর্যটক ঘুরতে আসেন।

বান্দরবান ট্যুরিস্ট পুলিশ জোন ইনচার্জ সুধীর চাকমা বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমরা বান্দরবানে নতুন অফিস প্রাথমিকভাবে চালু করেছি। এখনও আমাদের জনবল তেমন নেই বললেই চলে, আট-দশ জন ট্যুারিস্ট পুলিশ দিয়ে মূলত আমাদের কার্যক্রম শুরু করেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত মেখলা, ন্যাচারাল পার্ক নীলাচল, রামজাদি মন্দির পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে নিয়মিত টহল শুরু করেছি। অন্যান্য যে পর্যটন কেন্দ্রগুলো রয়েছে তা আমাদের পক্ষে নজরদারি করা সম্ভব নয়। যেহেতু আমাদের টুরিস্ট পুলিশের সংখ্যা কম তাই আমরা আমাদের সাধ্যমতো যতটুকু সেবা দেওয়া সম্ভব সেই সেবাটা দিয়ে যাচ্ছি।’

ট্যুরিস্ট পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে পর্যটকদের নিরাপত্তা জোরদারে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন