রাঙামাটিতে ২ মাস ধরে কিশোরীকে নির্যাতনের অভিযোগ

NewsDetails_01

সন্ত্রাসী আলম মিয়া
দুইমাস ধরে আমাকে একটি ভাড়া বাসায় রেখে দিনের পর দিন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। প্রতিবাদ করার শক্তিটুকু অবশিষ্ট রাখেনি। এ দু’টি মাস নিজেকে সন্ত্রাসী আলম মিয়ার ভোগ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছি। সৃষ্টি কর্তার কাছে এ কৃতজ্ঞ যে, এ অমানবিক নিষ্পেষিত বদ্ধ কুঠির থেকে আমাকে রক্ষা করেছেন। এখন একটাই চাওয়া সন্ত্রাসী আলম মিয়ার কঠিন শাস্তি হোক এবং আমার মতো কোন মেয়ের জীবন যেন এমন না হয়।
রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মগাছড়ি এলাকার বাসিন্দা ১৭বছরের এক মারমা তরুণী বৃহস্পতিবার (১৮মে) সন্ধ্যায় রাঙামাটির কোতয়ালী থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে সাংবাদিকদের সামনে চোখের জলে দুর্বিসহ দিনগুলির কথাগুলো শুনান।
তরুণী বলেন, আমি একজন দরিদ্র ঘরের সন্তান। চার ভাই-বোনের মধ্যে আমি তৃতীয়। তার মধ্যে আমার বোনদের একজন প্রতিবন্ধী। আর বড় ভাই রাঙামাটি সরকারি কলেজে ডিগ্রিতে পড়ে। দরিদ্রতাকে জয় করে ২০১৫ সালে এসএসসি পাশ করি। এরপর নিজেকে আরো উন্নত শিখরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সমাজে অন্য দশজনের মতো মাথা উচুঁ করে বাঁচতে অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমি সৃজনী স্কুল এন্ড কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হই। এ সময়ের মধ্যে আলম মিয়া (৩০) নামের এক বখাটে সন্ত্রাসী মাদকাসক্ত যুবক আমার জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। ওই যুবক আমাদের এলাকায় এসে ইয়াবা ট্যাবলেট খেয়ে আমাকে প্রায় উত্ত্যক্ত করতো। তার ভয়ে আমাদের মারমা সমাজে কেউ কথা বলতো না । নিরবে সকল অত্যাচার সহ্য করতো।
চলতি বছরের ০৪মার্চ মাসে সন্ধ্যায় মেলা থেকে আসার সময় বাড়ির পথিমথ্যে আলম মিয়া এবং বন্ধুরা মিলে আমার গতিরোধ করে তুলে নিয়ে যায়। প্রথম দিন তার বন্ধুর বাড়িতে এবং পরের দিন চট্টগ্রামের রাণীরহাট এলাকার গাবতলীর কালাম মাস্টারের ভাড়া বাড়িতে নিয়ে তুলে। সেখানে দু’মাস ধরে আমার উপর অকথ্য নির্যাতন চলে। এ সন্ত্রাসী আমাকে কয়েকবার মেরে ফেলতে চেয়েও মারতে পারেনি। অবশেষে ১০ মে ওই সন্ত্রাসীর বন্ধু আমার জন্য খাবার নিয়ে আসলে তার মোবাইলটা খাটে রেখে বের হলে আমি ওই মোবাইলটা নিয়ে আমার বড় ভাইকে ফোন করে ঘটনার কথা জানালে আমার ভাই রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিল্টন চৌধুরীকে এ বিষয়ে অবগত করলে তিনি স্থানীয় মানুষের সহায়তায় আমাকে কালাম মাস্টারের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে। আমি আমার উপজেলা কাউখালীতে এসে থানায় মামলা করতে গেলে থানার কর্মকর্তা মামলা নেয়নি। পরবর্তীতে বিভিন্ন নারীবাদি সংগঠনের চাপে কাউখালী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ মামলা গ্রহণ করলেও অপরাধী দিনে দুপুরে এখনো ঘুরাঘুরি করছে।
নারীর প্রতি সহিংসতা তিন পার্বত্য জেলার আহবায়ক টুকু তালুকদার এ বিষয়ে বলেন, আমি লজ্জ্বিত হয়ে পড়েছি উল্টো এ কিশোরীর পরিবারকে তাদের মারমা সমাজ বাঙালী ছেলের সাথে পালানোর অভিযোগে এনে আট হাজার টাকা জরিমানা করে।
তিনি বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে মারমা সমাজ পতিদের এ টাকাগুলো ফেরত দিতে বলেছি। এ নারী নেত্রী বলেন, আমরা কিশোরীর নিরাপত্তার জন্য সাপোর্ট সেন্টারে রাখলেও তার শারীরিক চিকিৎসা শেষে কয়েকদিনের মধ্যে তার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে এবং এ অপরাধীকে ধরতে আন্দোলন করা হবে।

আরও পড়ুন