হাটে পশু আছে, ক্রেতা নেই

NewsDetails_01

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাঙামাটি ট্রাক টার্মিনাল বসেছে কোরবানি পশুর হাট। কোরবানি ঈদের এখনো ৬ দিন বাকি। প্রতি বছর রাঙামাটির দুই থেকে তিনটি স্থানে কোরবানি পশুর হাট বসলেও এইবার শুধু মাত্র একটি স্থানে বসেছে পশুর হাট। রবিবার কোরবানি পশুর হাটে রাঙামাটি ট্রাক টার্মিনালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় প্রায় শত শত গরু এবং খানিক ছাগল থাকলেও প্রথম দিনের বাজারে দেখা নেই পর্যাপ্ত ক্রেতার। তবে গতবছরের তুলনায় এবার গরুর দাম বেশি। তবে পাহাড়ের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাঙামাটি সদরের হাটে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু।
হাটে গরু নিয়ে আসা মিজান বলেন, আমি সুবলং থেকে ৭টি গরু নিয়ে এসেছি। প্রতিটি গরুর মূল্য ৫৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করেছি। এ পর্যন্ত অনেক ক্রেতাই দেখেছে কিন্তু অন্যবারের মত এইবার ক্রেতাদের মধ্যে উৎসাহ দেখছি না। তবে তিনি আশাবাদী বাকী দিনগুলো ক্রেতার দেখা মিলবে। যদি ক্রেতার দেখা না মিলে তাহলে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দিবো।
বরকলের সুবলং থেকে গরু নিয়ে আসা সুপ্রিয় চাকমা বলেন, প্রথম বাজারে যেভাবে ক্রেতাদের ভিড় দেখেছি কিন্তু এইবার তেমন ক্রেতা নেই। যেহেতু আজ প্রথম বাজার, আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যে ক্রেতার দেখা মিলবে।
গরু ব্যবসায়ি মোহাম্মদ নুরু মিয়া বলেন, রাঙামাটি বাজারে যে পরিমাণে গরু আছে তা এখানের জন্য পর্যাপ্ত তাই আমি গরু বিক্রয়ের চট্টগ্রামে নিয়ে যাচ্ছি। পাহাড় ধসের কারণে যোগাযোগে কিছুটা সমস্যা দেখা দিলেও শালবন এলাকায় বেইলি ব্রিজ হওয়ায় তেমন একটা সমস্যা হচ্ছে না ।
অপরদিকে, ক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে কোরবানির পশু আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। কিন্তু গত বছরের তুলনায় দাম দিচ্ছে অতিরিক্ত।
গরু বাজারে আসা ক্রেতা ইমাম হোসেন বলেন, আজ কোরবানি বাজারের এসেছি গরুর মূল্য দেখতে। বাজারে পর্যাপ্ত গরু আছে তবে যে মূল্য তারা দিচ্ছে তা হাতের নাগালের বাহিরে। সাধারণ মানুষ কোরবানির গরু ক্রয় করে কোরবানি কয়েকদিন আগে । তাই কোরবানির কয়েকদিন আগে গরু ক্রয় করবেন বলে জানান এই ক্রেতা।
এদিকে,গরুর দাম বাড়ত্তি চাওয়া প্রসঙ্গ নিয়ে গরু ব্যবসায়ীরা বলেন, গরু লালন পালনে খরচের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় গরুর দাম বেশি বলে অনেক ব্যবসায়িরা জানান।
গরু ব্যবসায়ী মিজান আলী বলেন, গরু পালনে আগের চেয়ে খরচ বাড়ছে। বেড়েছে গরুর খাদ্যের দাম। আগে ১টা বড় গরু লালন-পালন করতে মাসে ৮ হাজার টাকার মতো লাগতো। এখন লাগে নয় থেকে দশ হাজার টাকা তার তুলনায় গরুর দাম বেশি না।
ট্রাক টার্মিনালের ইজারাদার সাওয়াল উদ্দিন বলেন, রাঙামাটিতে এবার একটি মাত্র কোরবানি পশুর হাট বসেছে। এই হাটে পর্যাপ্ত গরু এবং ছাগল রয়েছে। প্রথম বাজার অনুসারে মোটামুটি ক্রেতার ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যে বাজারে ক্রেতার ভিড় আরো বাড়বে।
তিনি বলেন, পাহাড় ধসের ফলে গরুর বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে এইবার কোরবানি হাটে। কারন রাঙামাটির প্রায় কোরবানি পশুর ক্রেতা হচ্ছে গাছ ব্যবসায়ি সহ বড় সওদাগররা। কিন্তু এখানে পাহাড় ধসে দীর্ঘদিন বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ ছিলো। তবুও আশা করছি এবারের বাজার তেমন একটা খারাপ হবে না। প্রতি হাজারে ২০ টাকা হাসিল ধরা হলেও সে পরিমাণে নেওয়া হচ্ছে না। সবকিছু মিলে প্রতি হাজারে ৫-৬ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ইজারাদার সাওয়াল উদ্দিন গরুর চাহিদা নিয়ে বলেন, এইবার রাঙামাটির ট্রাক টার্মিনাল হাটে প্রচুর পরিমাণে গরু রয়েছে। রাঙামাটির বাহিরে গরু চলে গেলেও সংকটে পড়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
তিনি আরো বলেন, পাহাড়ের বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারিরা গরু আনতে শুরু করেছেন, তবে পরিপূর্ণভাবে হাট জমতে সময় লাগবে আরও দুই একদিন। নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন স্থানে নিজ উদ্যোগে স্থাপন করেছে হাটে আসা ও যাওয়ার পথে যেন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তাই রাস্তায় করা হয়েছে পর্যাপ্ত লাইটিং ব্যবস্থা । আছে জেনারেটর সুবিধা। এছাড়া হাটে সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান আছে। বেপারিদের থাকা খাওয়া ব্যবস্থা রয়েছে।
এদিকে, কোরবানির পশু বেচাকোনার জন্য রাঙামাটির পশুর হাটে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছেন ইজারাদাররা। কোরবানির দিন যতই ঘনিয়ে আসছে হাটগুলোতে পশুর সংখ্যা ততই বাড়বে বলে জানিয়েছেন ইজারাদাররা ।
রাঙামাটি কোতোয়ালী থানার এস আই লিমন বোস বলেন, কোরবানির পশুর হাটে আগত বেপারী ও ক্রেতা বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ও মলম পার্টি ঠেকাতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। রাস্তায় পশু পরিবহনে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা রোধের জন্য পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।
অপরদিকে,কোরবানির পশুর হাটে জালনোট প্রতিরোধে উত্তরা ব্যাংক লিমিটেডের উদ্যেগে রাঙামাটি ট্রাক টার্মিনালে পশুর হাটে জালনোট শনাক্তকরণ বুথ স্থাপন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন