রাঙামাটি-ঘাগড়া- চন্দ্রঘোনা-বাঙ্গালহালিয়া-রাজস্থলী সড়কের ২৭ টি স্থানে ধস : ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন

NewsDetails_01

রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার ইসলামপুর এলাকায় ঝুঁকিপূর্ন সড়ক
পাহাড় ধসের ফলে রাঙামাটির ঘাগড়া-চন্দ্রঘোনা-বাঙ্গালহালিয়া-রাজস্থলী সড়কে ৭৪৫ কি:মি: সড়কের ২৭ টি স্থানে রাস্তা ধসে সড়কের অধিকাংশ অংশ ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পড়েছে। এর ফলে এ সড়কগুলোতে হালকা যান চলাচল করলেও বন্ধ রয়েছে ভারী যানবাহন চলাচল। এতে করে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রী ও এলাকার সাধারন জনগনকে। পাহাড় ধসের ঘটনার ৭৩ দিন অতিবাহিত হলেও ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় চলাচল করছে হালকা যান সিএনজি অটোরিক্সা,মোটর সাইকেল ও মিনি পিকআপ।
এদিকে রাঙামাটির ঘাগড়া-চন্দ্রঘোনা-বাঙ্গালহালিয়া-রাজস্থলী সড়কে সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া সিনেমা হল এলাকা,ওগারীপাড়া,শফিপুর,গাইন্দ্যা ইউনিয়ন এলাকা,গামারী বাগান,লংগদু পুর্নবাসন এলাকায় সড়কের বেশিরভাগ অংশ ধসে গেছে। বাঙ্গালহালিয়া-রাজস্থলী সড়কের বিভিন্ন অংশে দেখা যায় ফাটলের চিত্র। একটু বৃষ্টি হলেই পাহাড়ের মাটি ভেঙ্গে পড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সড়ক যোগাযোগ।
রাজস্থলীর ইসলামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হারাধন কর্মকার বলেন, রাজস্থলীর সড়কগুলো এখনো সংস্কার না হওয়ার ফলে স্কুলের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সকলেই মহা সমস্যায় আছে।
এ প্রসঙ্গে রাজস্থলী উপজেলা চেয়ারম্যান উথিনসিন মারমা বলেন, ১৩ জুন পাহাড় ধসের ফলে রাজস্থলী সড়কের বেশকিছু পয়েন্টে রাস্তা ধসে গেছে। আমরা উপজেলা পরিষদ পক্ষ থেকে ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ করে পাহাড়ের মাটি সরিয়েছি এবং রাস্তা মেরামত করেছি। এর পাশাপাশি রাজস্থলী কাঠ ব্যবসায়ী সমিতিও ঝুঁকিপূর্ন জায়গায় বল্লি দিয়ে রাস্তা মেরামত করেছে। তিনি আরো বলেন, এই ঝুঁকিপূর্ন সড়কগুলো অতি দ্রুত সংস্কার করা না হয় তাহলে রাজস্থলী সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।
এদিকে, রাঙামাটি-ঘাগড়া-বড়ইছড়ি-কাপ্তাই সড়ক আড়াই মাস মাস অতিবাহিত হলেও সড়কে ভারি যানবাহন চলাচল শুরু হয়নি, একটু বৃষ্টিতেই পাহাড় থেকে মাটি ধসে পড়ে যানবাহন চলাচলের ব্যাঘাত ঘটছে।
গত ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় রাঙামাটি-ঘাগড়া- বড়ইছড়ি কাপ্তাই সড়কে প্রায় ১৯টি স্থানে পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কাপ্তাইয়ের বড়ইছড়ি-ঘাগড়ার ২০ কিলোমিটার সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এই সড়কে গত প্রায় আড়াই মাস যাবত ভারী যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা মালামাল বহন করতে পারছেন না, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা এই সড়ক দিয়ে বাস চলাচল না করায় তারাও রয়েছে ভোগান্তিতে। গত ২২জুন স্থানীয় প্রশাসন ও বিজিবির সহায়তায় সড়কটির কয়েকটি স্থান থেকে মাটি সরিয়ে হালকা যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে তোলা হলেও ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী রোগী ও কৃষিজীবিদের।
রাঙামাটি-ঘাগড়া-বড়াইছড়ি কাপ্তাই সড়কে লাল পতাকা দিয়ে ঝুঁকিপূর্ন সড়ক চিহ্নিত করা হয়েছে
এদিকে,রাঙামাটি-বান্দরবান-খাগড়াছড়ি-কাপ্তাই-রাজস্থলী যাতায়াতের জন্য ঘাগড়া সড়কটি ব্যবহার করা হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে,বড়ইছড়ি সড়কের মারমা পাড়া, হেডম্যান পাড়া, পাগলী পাড়া, তম্ব পাড়া, দেবতাছড়ি, মুরালী পাড়া, ওয়াগ্গা, কুকিমারা, সাপছড়ি ইত্যাদি এলাকায়ও ব্যাপক ভাঙ্গন রয়েছে। মাঝে মাঝে একটু বৃষ্টি হলেই সেই মুল সড়কে পাহাড়ের মাটি এসে যান চলাচল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
কাপ্তাইয়ের সঙ্গীত শিল্পী জ্যাকলিন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, এ সড়কে রাস্তার মাঝখানে অনেক বড় বড় গর্ত হয়েছে। এর কারনে আমাদের চলাচলের খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এই সড়কে বাস চলাচল বন্ধ থাকার ফলে স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদেরও দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সিএনজি অটোরিক্সা চালকরাও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্তি ভাড়া আদায় করছে।
এদিকে, রাঙামাটি বেতারের কাপ্তাই প্রতিনিধি ঝুলন দত্ত বলেন, রাঙামাটি- ঘাগড়া-বড়ইছড়ি সড়কটি পাহাড় ধসের ফলে বেশকিছু জায়গায় ভেঙ্গে গিয়ে সাধারন জনগনের যাতায়াত খুবই নাজুক অবস্থা। তিনি আরো বলেন, যেখানে আগে বড়ইছড়ি থেকে ঘাগড়া যেতে সময় লাগতে মাত্র ত্রিশ মিনিট কিন্তু বর্তমানে সময় লাগে এক ঘন্টা,রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে এবং চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কৃষকরা রাস্তার দুরবস্থার কারনে তাদের উৎপাদিত ফলমুল বাজারে নিতেও পরিবহন খরচ বেশি লাগছে।
এতদিনেও সড়কটি ভারি যান বাহন চলাচলের উপযোগী করে গড়ে না তোলায় উপজেলা চেয়ারম্যান দুষলেন সড়ক ও জনপথ বিভাগকে।
কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন বলেন, এ সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন কারন খাগড়াছড়ি থেকে রাঙামাটি হয়ে বান্দরবান যাওয়ার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের যে হাইওয়ে সেটি হচ্ছে ঘাগড়া-বড়ইছড়ি সড়ক। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমরা বিজিবির সহায়তায় উপজেলা প্রশাসন প্রাথমিকভাবে মাটি সরানোর কাজ করলেও পরবর্তীতে রাস্তা ভাঙন রোধ ও রাস্তার উপর থেকে কাঁদা সরানোর কাজ রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের উদাসীনতার কারনে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এদিকে, রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন বলেন, ঘাগড়া- চন্দ্রঘোনা-বাঙ্গালহালিয়া-রাজস্থলী সড়কে ২৭ টি স্থানে বিধ্বস্ত হয়েছে। ভূমি ধসের ফলে বিধস্ত এ সড়কের ক্ষতিগ্রস্থ অংশে বালির বস্তা এবং লাল পতাকা দিয়ে চিহ্নিত করে দিয়েছি যাতে করে গাড়ীর চাকা ঐ অংশে দিয়ে যেতে না পারে। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্থ সড়কের ঐ স্থানগুলোতে মেরামতের জন্য কাজ শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন