বন্য হাতি আতংকে কাপ্তাইবাসী: ৩ মাসে অন্তত ৫জন নিহত

NewsDetails_01

বন্য হাতি আতংক রয়েছে রাঙামাটি জেলার কাপ্তাইয়ের সাধারন মানুষ, গত ৩ মাসে হাতির আক্রমণে নৌ বাহিনীর সদস্যসহ অন্তত ৫জন নিহত হয়েছে। বনবিভাগ সুত্রে জানা গেছে, গত এক দশকে হাতির আক্রমণে প্রান হারিয়েছেন অন্তত ৩০জন মানুষ, আবার বন্য প্রানী শিকারীদের হাতে প্রায় ১১টি হাতি মারা গেছে।
স্থানীয়রা জানায়, খাদ্যর সন্ধানে সন্ধ্যায় হাতির পাল লোকালয়ে এসে হামলা চালায় আবার সকালে জঙ্গলে ফিরে যায়। গত কয়েক মাস ধরে কাপ্তাইয়ে বন্য হাতির উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। কাপ্তাইয়ের জীবতলী, নেভী ক্যাম্প, ব্যাংঙছড়ি, কাপ্তাই প্রজেক্ট, কামিলাছড়ি বিট, কাপ্তাই রাঙামাটি সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে বন্য হাতির উপদ্রব বেড়েছে।
রাঙামাটির ১০টি উপজেলার মধ্যে বাঘাইছড়ি, লংগদু, রাজস্থলী, কাউখালী এবং কাপ্তাই উপজেলায় বন্য হাতির আক্রমনে বিভিন্ন সময় মানুষ নিহত হওয়ার খবর বেশী পাওয়া যায়। বিশিষ্টজনের মতে, খাদ্যভাব ও হাতি চলাচলের রাস্তায় স্থাপনা নির্মান করায় হাতি চলাচল করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হলে আক্রমন করে। ২০১৪ সনে ২২ অক্টোবর বন দুস্যদের গুলিতে একটি হাতি আহত হয়, ১৪দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে হাতিটি মারা যায়। বন্য প্রানী সংরক্ষনে সরকার “বন প্রানী সংরক্ষন“ আইন ২০১২ নামে একটি আইন করেছে কিন্তু বন্য প্রানী শিকারীরা এসব আইন মানছে না।
কাপ্তাই সুইডিশ এলাকার বাসিন্দা মোকারম জানান, আমরা সবসময় হাতির আতংকে থাকি। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে রাঙামাটি সড়ক ও নেভী সড়কে হাটাচলা করা যায় না। রাস্তার উপর হাতি এসে বসে থাকে। কাপ্তাইয়ের আগর চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, হাতির জন্য বাগানে যেতে পারছিনা। বিভিন্ন সময়ে হাতি আমাদের গাছগুলো উপড়ে ফেলে দিচ্ছে।
এদিকে, কাপ্তাইয়ের বিশিষ্ট সমাজকর্মী ঝুলন দত্ত বলেন, মানুষ দখল করে নিচ্ছে বন, সেজন্য বন্য হাতির খাবারের আবাসস্থলগুলো নষ্ট হচ্ছে, ফলে বন্যহাতি বারবার লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। আমরা প্রায় দেখি কাপ্তাই নেভী সড়কে বন্য হাতি আক্রমণ করছে। আমি মনে করি এটার একমাত্র সমাধান হবে পাহাড়ের ভিতরে যেখানে বন্য হাতি বসবাস করে সেথানে বেশী গাছ লাগিয়ে হাতির বাসযোগ্য স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
এদিকে, কাপ্তাই আগর বাগান সমিতির সভাপতি কাজী মাকসুদুর রহমান বাবুল বলেন, কাপ্তাইয়ে সাধারন মানুষ হাতির আতংকে ভুগছে। বন্য হাতি কাপ্তাই আসামবস্তী সড়কের মধ্যে প্রতিদিন বিকাল ৪ টার পর থেকে হাতি রাস্তায় চলে আসে এত করে মানুষের চলাচলে পথ বিঘ্ন ঘটে। বন উজার হওয়ার ফলে হাতি এখন বন জঙ্গল ছেড়ে রাস্তায় চলে এসেছে খাদ্যের সন্ধানে।
অপরদিকে, কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নুর নাহার বেগম বলেন, হাতির যে অভয়ারণ্য আছে সেটি হারাচ্ছে এবং বন উজার হচ্ছে। আবার লোকের কারনে বন্য পশুগুলো আঘাত প্রাপ্ত হচ্ছে কিনা সেটি একটু খতিয়ে দেখা প্রয়োজন আছে ।
কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন বলেন, কাপ্তাই আগর বাগান এলাকা ও নৌবাহিনী সড়কে প্রায় ২০-৩০ টি হাতি চলাচল করে। হাতিগুলো গাড়ী এবং চলাচলকারী লোকজনের উপর আক্রমন করে। তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে প্রায় ৫-৬ জন লোক হাতির আক্রমনে মারা গেছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, হাতির আক্রমন থেকে জনগনকে বাঁচাতে বন বিভাগের দৃশ্যমান কোন উদ্যেগ চোখে পড়েনি।
রাঙামাটি বন বিভাগের বন সংরক্ষক জানান, হাতির আবাসস্থল, চলাচলের করিডোর যখন বাধাগ্রস্থ হয় তখন সে ভিন্ন সড়কে চলাচলের চেষ্টা করে । আমাদের উচিত হাতির করিডোরে বসতি স্থাপন না করা। তিনি আরো বলেন, হাতির আক্রমনে যারা আহত এবং নিহত হয় তাদের ক্ষতিপূরনের একটি নীতিমালা আছে। এটা উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে আবেদন আসলে ক্ষতিপূরন দেয়া হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন