পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন-২০১৬ বাতিল ও বান্দরবানের বাঙালি নেতা মো. আতিকুর রহমান আতিকের মুক্তির দাবিতে বাঙালিদের অধিকার আদায়ে আন্দোলনরত পাঁচ সংগঠনের ডাকা ৪৮ ঘন্টা হরতালের প্রথম দিনে উত্তাল হয়ে উঠেছে খাগড়াছড়ি।
হরতালের সমর্থনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পয়েন্টে পার্বত্য বাঙ্গালি ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীদের রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এসময় হরতালের সমর্থনে খন্ড খন্ড মিছিলে জেলা শহর প্রকম্পিত হয়ে উঠে। এদিকে বেলা ১১টার দিকে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা খাগড়াছড়িতে বিতর্কিত পার্বত্য ভূমি কমিশন কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরে বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক হাটবারের দিনেও সব ধরনের দোকান-পাট বন্ধ ছিল। নিজেদের সবরকমের আর্থিক ক্ষতিকে মেনেই হরতালের প্রতি ব্যবসায়ীদের চিল আকুন্ঠ সমর্থন। হরতালের কারণে খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দূরপাল্লার সড়কে কোন যানবাহন ছেড়ে যায়নি। আভ্যন্তরীন সড়কেও সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ আছে। জেলা ও উপজেলা শহরের রিক্সা বা টমটম চলাচল করেনি।
৪৮ ঘন্টার হরতালকে নিজেদের অধিকার আদায়ের পক্ষে আর বিতর্কিত পার্বত্য ভূমি কমিশনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ হিসেবেই দেখছেন সচেতন মহল। তাদের মতে এ কমিশনের মাধ্যমে পাহাড়ের বাঙালিদের ভূমিহীন করাসহ পাহাড় থেকে বিতাড়িত করার সু-গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। পাহাড়ের সর্বস্তরের জনগনের স্বত:স্ফুর্ত সমর্থনে এমন শান্তিপুর্ণ হরতাল নিকট সময়ে পালিত হয়নি বলেও মন্তব্য অনেকের।
পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় জৈষ্ঠ্য সহ-সভাপতি ও খাগড়াছড়ি পৌরসভার কাউন্সিলর মো: আবদুল মজিদ বলেন, এ কমিশন পাহাড়ীদের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার। এ কমিশনের মাধ্যমে পাহাড়ে সংঘাতের পথ খুলে দেয়া হয়েছে দাবী করে তিনি বলেন, কোন বিশেষ মহলের স্বার্থরক্ষার কমিশন দেশপ্রেমিক জনগন মনে নেবেনা।
হরতালকে ঘিরে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জেলা ও উপজেলা সদরের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ পয়েন্টে পুলিশ সদস্যদের সতর্কাবস্থায় থাকতে দেখা গেছে। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবিকে টহল দিতেও দেখা গেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায়।
প্রসঙ্গত, গত ১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের ১৪টি সংশোধনী ভোটিং সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে ৯ আগস্ট আইনটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয় এবং সর্বশেষ গত ৬ অক্টোবর আইনটি জাতীয় সংসদে পাস করা হয়।