খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে শিক্ষক সংকট

NewsDetails_01

দীর্ঘ চার দশক আগে জাতীয়করণ হওয়া খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ এখনও বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত। ৩৬ বছরের পুরানো পদায়ন কাঠামোতে(শিক্ষক) চলছে এ কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। Khagrachhari college story pic 2
তার মধ্যেও রয়েছে শুন্যপদ ও সংযুক্তির মতো ঝামেলা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য নেই আবাসিক ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষের ব্যবস্থা। এতে করে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠদানে বেগ পেতে হচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষের।
কলেজের তথ্য প্রদান ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রভাষক এম রাশেদুল হক জানান, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ ৪৬জন শিক্ষক কাঠামো নিয়ে ১৯৮০সালের ১লা মার্চ জাতীয়করণ হয় খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ। দীর্ঘ ৩৬ বছরেও এ কাঠামোর কোন পরিবর্তন হয়নি। উচ্চ মাধ্যমিকে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষাসহ ডিগ্রি কোর্সে বিএ, বিবিএস, বিএসএস ও অর্নাস কোর্সে ইতিহাস এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয় চালু রয়েছে। এবার রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মার্স্টাস কোর্স চালু হলেও শিক্ষক পদ সৃজন না হওয়ায় শ্রেণী কার্যক্রমে বেঘাত ঘটছে। বর্তমানে ৪৬ জন শিক্ষক পদের বিপরীতে ৩৪জন কর্মরত রয়েছেন। শিক্ষকদের জন্য মানসম্মত ডরমেটরি ব্যবস্থা না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষকই জেলার বাইরে থেকে এসে ক্লাস নেন। এছাড়া বাংলা বিষয়ের কোন শিক্ষক না থাকায় অতিথি শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নেয়া হয়। সাড়ে ৪ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ ও আবাসিক ব্যবস্থা নেই। একটি মাত্র কলেজ বাস থাকলেও সেটি দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাক্সিক্ষত সেবা দেয়া যাচ্ছেনা। Khagrachhari college story pic 3
একাদশ মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী মনশ্রী ত্রিপুরা বলেন, বাংলা ও ইংরেজী বিষয়ের ক্লাসে এক বেঞ্চে ৫/৬জনকে গাধাগাধি করে বসতে হয়। অনেক সময় একটু বিলম্ব হলে দাড়িঁয়ে ক্লাস করতে হয়। তাই অনেকে ক্লাস বিমুখ হয়ে পড়ছে। একই ক্লাসের সাফাদ আহম্মেদ বলেন, আমাদে কলেজে বাংলা বিষয়ের কোন শিক্ষক নেই। তাই একজন অতিথি শিক্ষক এসে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের সবাইকে একসাথে পাঠদান করান। বেশী সংখ্যক উপস্থিতি হওয়ায় অনেক সময় পাঠ্যক্রমে মনোযোগ দিতে পারিনা।
দ্বাদশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফা আক্তার বলেন, এইচএসসি লেভেলে বিজ্ঞান বিভাগের কার্যক্রম থাকলেও অনার্স ও ডিগ্রি লেভেলে কোন কার্যক্রম নেই। তাই এখনকার অধিকাংশ শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একই বিভাগের দেবশ্রী তালুকার বলেন, বিজ্ঞান বিষয়ের ব্যবহারিকের উপকরণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম।
এছাড়াও উচ্চ মাধ্যমিক ও অর্নাস কোর্সের শিক্ষার্থী দিদারুল আলম, কৌশিক বড়–য়া, জয়শীষ চাকমা, সামিরা ইসলাম ও সোহেল চাকমা বলেন, শিক্ষক ও ক্লাস রুম সংকটের পাশাপাশি কলেজে আলাদা কোন হলরুম নেই। তাই কোন অনুষ্ঠান করতে হলে শ্রেণী কার্যক্রমের বেঘাত ঘটে। এছাড়া নেই কোন ক্যান্টিন ও আবাসিক ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নজরুল ইসলাম জানান, উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রি, অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স মিলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক মাত্রই তিন জন। এতে করে রুটিন মাফিক ক্লাসে অনেক সময় ব্যাহত হয়। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ প্রতিটি বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
কলেজের সমস্যার কথা প্রতিনিয়ত সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষদের জানানো হচ্ছে উল্লেখ করে অধ্যক্ষ ড. প্রফেসর আব্দুস সবুর খান বলেন, দ্বিতল বিশিষ্ট নতুন একটি ভবন নিমার্ণাধীন রয়েছে। দু’বছর আগে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভবনের কাজ এখনো সমাপ্ত করতে পারেনি। ভবনটির কাজ শেষ হলে শ্রেণীকক্ষের সংকট অনেকাংশ কমে যাবে। এছাড়া শিক্ষকদের শুন্যপদের বিষয়ে প্রতিমাসে প্রতিবেদন পাঠানো হচ্ছে। আশা করছি অচিরেই শিক্ষক সংকট দূর হবে।
উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ি জেলার তিনটি সরকারি কলেজের মধ্যে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ সুনামধন্য বিদ্যাপীঠ। একসময়ের পিছিঁয়ে পড়া জনপদ খাগড়াছড়ি জেলার বিনির্মাণে এ কলেজের ভূমিকা অগ্রণী।

আরও পড়ুন