বান্দরবানে বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যা রহস্য উন্মোচনে তিন বিষয়ে নজর পুলিশের

NewsDetails_01

Bandarban-news-pic-16-5-16বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়িতে বৌদ্ধ ভিক্ষু মং শু উ হত্যার ঘটনার রহস্য উন্মোচনে তিন বিষয়ে নজর রেখে তদন্ত্র করছে পুলিশ।
বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, মন্দির নির্মান সমস্যা, ভিক্ষুর পারিবারিক সমস্যা ও জঙ্গী সমস্যা, এই তিন সমস্যাকে সমানে রেখে আমরা হত্যা রহস্য উন্মোচনে কাজ করছি। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্টতার বিষয় খতিয়ে দেখার অংশ হিসাবে আমরা ইতিমধ্যে দুই রোহিঙ্গাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছি।
সোমবার সকালে পুলিশ গ্রেফতারকৃত তিন আসামীর ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু হানিফ গ্রেফতারকৃত আসামীদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এসময় আসামীদের দেখতে আদালতে মানুষের ভীর পরিলক্ষিত হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার ভোর ৫ টায় পিতাকে পুত্রবধু মা নুং চিং চাক ভাত দিতে এসে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে এলাকায় খবর দেয়,পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। কাঠের তৈরী বৌদ্ধ মন্দিরে শুয়া অবস্থায় ঘাড়ের পেছনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ভিক্ষুর সাথে কারো ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কোনও শত্রুতা ছিল না বলে দাবি করেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। মং শু উ ওই এলাকার মৃত অংথোয়াই চাকের ছেলে। শনিবার সন্ধ্যায় নিহতের ছেলে চিং সা উ চাক বাদী হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় একটি হত্যা মামলা করে।
স্থানীয়রা জানায়, উপর চাকপাড়া বৌদ্ধ মন্দিরটি দুই বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মন্দিরের নির্জন স্থানে বৌদ্ধ ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের অংশ হিসেবে তিনি দুই বছর ধরেই সেখানে ধ্যান করছিলেন। নিহতের পরিবার থাকলেও তিনি মন্দিরটিতে একায় থাকতেন বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় পুলিশ রোববার ভোরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারি ইউনিয়নের ইতারিপাড়া থেকে তিন জনকে আটক করে। আটককৃতরা হলেন জিয়াউর রহমান (২৫), আবদুর রহিম (৪০) ছা মং চাক (৪৫)। এর মধ্যে জিয়াউল হক ও আবদুর রহিম মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক।
এই ব্যাপারে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান আরো বলেন, গ্রেফতারর্কৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমার কিছু পায়নি। তিনি আরো বলেন, আমরা কিছু আলামত পেয়েছি, আশাবাদী দ্রুত ভিক্ষু হত্যাকান্ডের সঠিক রহস্য উন্মোচন করবো।
এদিকে বান্দরবানের চাঞ্চল্যকর বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচনে কাজ করছে পুলিশ। জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চলছে সন্দেহভাজনদের ধরতে। জেলার থেকে পাঠানো হয়েছে বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার দক্ষ গোয়েন্দাদের। ঘটনার পর থেকে উক্ত এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।
এই ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, জেলার গোয়েন্দা বিভাগসহ ৬জন সিনিয়র কর্মকর্তা হত্যা রহস্য উন্মোচনে কাজ করছে।
এদিকে হত্যাকান্ডের পর এলাকার লোকজন আতংকগ্রস্থ অবস্থায় রয়েছে এবং ভিক্ষুর সাথে এলাকার কারো বিরোধ ছিল না, যে বিরোধের জের ধরে তাকে হত্যা করা হতে পারে। বান্দরবান তথা সারাদেশের বৌদ্ধ অনুসারীরা এই নির্মম হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচারের দাবীতে মানববন্ধনসহ কর্মসূচী পালন করছে।
স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মংবাচিং চাক বলেন, ভিক্ষু অত্যান্ত শান্ত প্রাকৃতির ছিল, তাকে যে কেউ হত্যা করবে এটা আমাদের বিশ্বাস হচ্ছেনা।
অন্যদিকে, নাইক্ষ্যংছড়ির উপর চাকপাড়ায় সোমবার তিনটার পর বৌদ্ধ ভিক্ষু মং শু উর শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সম্পর্ন হয়েছে, শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বৌদ্ধ অনুসারীরা এসে সমবেত হয়।

আরও পড়ুন